বুধবার, ৩ মার্চ, ২০২১ ০০:০০ টা

আমদানি পিঁয়াজের বস্তায় অর্ধেকই পাথর!

নিজস্ব প্রতিবেদক

আমদানি পিঁয়াজের বস্তায় অর্ধেকই পাথর!

তুরস্ক থেকে আমদানি করা পিঁয়াজের বস্তায় অর্ধেকই মিলেছে পাথর। কোনো কোনো পাথরের টুকরোর আকার পিঁয়াজের চেয়েও বড়। সম্প্রতি দেশটি থেকে প্রায় ৪০ টন পাথর মেশানো পিঁয়াজ আসে চট্টগ্রাম বন্দরে। এসব পিঁয়াজ নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছে চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা। ভোক্তা অধিকার সংগঠন-ক্যাব বলছে, আমদানির নামে মানি লন্ডারিং করতেই এমন কারসাজি কি না তা খতিয়ে দেখা জরুরি।

নিজ দেশে সংকটের কারণে ভারত পিঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করায় ২০১৯ সালের মাঝামাঝি হঠাৎ করেই অস্থির  হয়ে ওঠে বাংলাদেশের পিঁয়াজের বাজার। ২৯ সেপ্টেম্বর প্রথমবারের মতো ১০০ টাকায় পৌঁছায় দেশি পিঁয়াজের কেজি। নভেম্বর নাগাদ পিঁয়াজের কেজি ২৫০ টাকায় পৌঁছায়। দেশের বাজারে সংকট মেটাতে প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে শর্তসাপেক্ষে পূর্বের এলসির পিঁয়াজ আমদানির পাশাপাশি মিয়ানমার, নেদারল্যান্ডস ও তুরস্ক থেকে পিঁয়াজ আনতে শুরু করেন ব্যবসায়ীরা। চলতি বছরের শুরুতে ভারত থেকে নতুন করে পিঁয়াজ আমদানি শুরু হয়। তবে দেশটির স্থানীয় বাজারে পিঁয়াজের দাম বেশি হওয়ায় অনেকে এখনো আমদানি করছেন তুরস্কের পিঁয়াজ। সম্প্রতি তুরস্ক থেকে চট্টগ্রাম সমুন্দ্র বন্দর দিয়ে আসা ৪০ টন পিঁয়াজের প্রতি বস্তায় মিলেছে বড় বড় পাথর। এর মধ্যে ২৫ কেজির বস্তার কোনোটিতে মিলেছে ১৪ কেজি পাথর। এদিকে পিঁয়াজের বস্তায় পাথর পাওয়ায় চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে সবচেয়ে বড় ভোগ্যপণ্যের পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জের পাইকারি ব্যবসায়ীদের মধ্যে। খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে এসব পিঁয়াজের বস্তা বিক্রি করে তারাও ক্ষোভের মুখে পড়েছেন। খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা জানান, ২০১৯ সালে পিঁয়াজের দাম বেড়ে গেলে অন্যান্য দেশের পাশাপাশি তুরস্ক থেকেও পিঁয়াজ আমদানি শুরু করেন আমদানিকারকরা। দেশটি থেকে দুইটা রঙের পিঁয়াজ আসে। একটা সাদা, অন্যটি লাল। আগেও পিঁয়াজের বস্তায় পাথর পাওয়া গেছে। তবে কম। এবার লাল পিঁয়াজের ২০-২২ কেজির প্রতি বস্তায় ১০ থেকে ১২ কেজি পাথর পাওয়া গেছে। ২৫ কেজির বস্তায় ১৪ কেজি পর্যন্ত পাথর মিলেছে। আবার কোনো বস্তায় পাঁচ-ছয় কেজি। সবই ওদের দেশের শিলপাথর। খুচরা ব্যবসায়ীরা আমাদের কাছ থেকে এই পিঁয়াজ নিয়ে অসন্তোষ দেখিয়েছেন। তারা পাথরসহ পিঁয়াজ ফেরত দিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু, এক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের কী করার আছে। এই পিঁয়াজ তো আমদানিকারক এনে দিয়েছে। আমরা কমিশনে বিক্রি করেছি। এদিকে আমদানি-রপ্তানির বিপরীতে বিপুল পরিমাণ অর্থপাচারের খবর প্রায়ই উঠে আসে শুল্ক গোয়েন্দার প্রতিবেদনে। পিঁয়াজের নামে পাথর আনার সঙ্গে অর্থ পাচারের বিষয়টি জড়িত থাকতে পারে বলে সন্দেহ করছেন সংশ্লিষ্টরা। ভোক্তা অধিকার সংগঠন (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, পিঁয়াজের নামে পাথর আসা অপ্রত্যাশিত ঘটনা। আমদানিকারক ও রপ্তানিকারক মিলে অর্থ পাচারে জড়িত কি না সেটা খতিয়ে দেখা দরকার। আশা করি, সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো বিষয়টি তদন্ত করে সত্যিটা উদঘাটন করবে। এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরের উপ পরিচালক মো. নাছির উদ্দিন বলেন, ঘটনাটি শুনেছি। আমরা অবশ্যই বিষয়টা খতিয়ে দেখব। তবে বাজারে কি হচ্ছে না হচ্ছে তা তদারকি করার সক্ষমতা আমাদের নেই। মূলত বিপণনে যারা আছে তারা এটা দেখবে।

 

সর্বশেষ খবর