রবিবার, ১৪ মার্চ, ২০২১ ০০:০০ টা

নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা গোপালগঞ্জ সাতক্ষীরা

ভিভিআইপিদের সফর, টানা ১১ দিন স্মরণকালের নিরাপত্তা

সাখাওয়াত কাওসার

নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তায় মোড়ানো থাকবে রাজধানী ঢাকা। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীতে পাঁচ দেশের পাঁচজন রাষ্ট্রপ্রধানের আগমনকে ঘিরে নেওয়া হচ্ছে এ নিরাপত্তা আয়োজন।

নিরাপত্তা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আগামী ১৭ মার্চ থেকে ২৭ মার্চ টানা ১১ দিন স্মরণকালের সর্বোচ্চ নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করছে সরকার। বিমানবন্দর থেকে আবাসস্থল এবং যাতায়াতের রাস্তা, সর্বত্রই থাকবে সাত স্তরের নিরাপত্তাব্যবস্থা। গত বৃহস্পতিবার থেকেই শুরু হয়েছে নিরাপত্তা তদারকির কাজ। পোশাকে এবং সাদা পোশাকে নিরাপত্তা তদারক করছেন বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী এবং গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা।

এলিট ফোর্স র‌্যাবের মহাপরিচালক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, র‌্যাবের সব ব্যাটালিয়নকে এ ব্যাপারে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সার্বক্ষণিক প্রস্তুত রাখা হচ্ছে বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট, ডগ স্কোয়াড। ভেন্যুগুলো আগে থেকেই র‌্যাব সুইপিং করবে। প্রস্তুতিতে কোনো ধরনের খুঁত রাখা হচ্ছে না।

জানা গেছে, গোপালগঞ্জ ও সাতক্ষীরার ভেন্যুর নিরাপত্তা র‌্যাব মহাপরিচালক নিজেই তদারকি করছেন। এজন্য তিনি নিজে ওই দুই জেলার ভেন্যু পরিদর্শনে যাবেন। ঢাকা মহানগর পুলিশের নিরাপত্তা প্রস্তুতির সমন্বয় করছেন ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার কৃষ্ণপদ রায়। সোয়াত, ট্রাফিক, ক্রাইম ডিভিশনসহ বিভিন্ন ইউনিটের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করছেন তিনি। সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চ। ভিভিআইপিদের চলাচলের রাস্তা সম্ভব হলে এড়িয়ে চলার জন্য ১৬ মার্চ গণমাধ্যমে বিশেষ বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে সরকারের সর্বোচ্চ মহল। অতি প্রয়োজন ছাড়া বিকল্প রাস্তা ব্যবহারের জন্য নগরবাসীকে দেওয়া হবে বিশেষ নির্দেশনা।

নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করছেন এমন একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১৬ জানুয়ারি থেকে পক্ষকালব্যাপী নাগরিক তথ্য সংগ্রহের উদ্যোগ নেয় ডিএমপি। ওই সময় মোট রাজধানীর ৫০ থানায় ২ লাখ ১৮ হাজার ২৭৮ জনের তথ্য সংগ্রহ করা হয়। নিরাপত্তা নিশ্চিতের অংশ হিসেবে বর্তমানে এগুলো গুরুত্বসহকারে যাচাই-বাছাই করে দেখা হচ্ছে। সব ধরনের আশঙ্কা মাথায় রেখেই নেওয়া হচ্ছে নিরাপত্তাব্যবস্থা। অনাহূত কোনো লোক যাতে কোনোভাবেই বহরে ঢুকে অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতি সৃষ্টি না করতে পারে সেদিকে আমাদের থাকবে বিশেষ নজারদারি। ঢাকা, গোপালগঞ্জ ও সাতক্ষীরার সুউচ্চ ভবনগুলোয় অবস্থান করবেন আইন প্রয়োগকারী এবং গোয়েন্দা সংস্থার চৌকষ সদস্যরা। আকাশপথেও ভিভিআইপিদের নিরাপত্তায় রাখা হবে বিশেষ টহল। 

তারা বলেছেন, আবাসস্থল হোটেল প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও ও ইন্টারকন্টিনেন্টালের আশপাশ এলাকা ডগ স্কোয়াড, বোম্ব ডিসপোজাল টিম এবং অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সমন্বয়ে বিশেষভাবে নজরদারির মধ্যে রাখা হচ্ছে। চলাচলের রাস্তার নিরাপত্তা টহলে থাকবে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি সংবলিত যান। থাকবে পুলিশ-র‌্যাবের বিশেষায়িত পেট্রোল।

ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (অপারেশন) কৃষ্ণপদ রায় বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, নিরাপত্তা নিশ্চিতের স্বার্থে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে ডিএমপির পক্ষ থেকে। অন্য সবগুলো সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করেই সাজানো হয়েছে নিরাপত্তাব্যবস্থা।  

১৭ থেকে ২৭ মার্চ টানা ১১ দিনে বাংলাদেশে সরব উপস্থিতি থাকবে পাঁচ রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর। ১৭ মার্চ ঢাকা আসবেন মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ইবরাহিম মোহাম্মদ সোলিহ, ১৯ মার্চ শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপক্ষে, ২২ মার্চ আসবেন নেপালের প্রেসিডেন্ট বিদ্যা দেবী ভান্ডারি, ২৪ মার্চ ভুটানের প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিং ও ২৬ মার্চ আসবেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সশরীরে না থাকলেও একই সময়ে ভিডিওবার্তায় উপস্থিতি থাকবে চীনের প্রেসিডেন্ট, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ও কানাডার প্রধানমন্ত্রীর। প্রেসিডেন্টের বার্তা নিয়ে চীনের একজন মন্ত্রী পর্যায়ের প্রতিনিধি আসবেন ঢাকায়। ঢাকায় নানা আয়োজন শেষে ২৭ মার্চ দুই দিনের সফর সমাপ্ত করবেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। শীর্ষ নেতারা সবাই ঢাকার তেজগাঁও প্যারেড গ্রাউন্ডে দেবেন ‘বঙ্গবন্ধু স্মৃতি’ বক্তৃতা। বিগস্ক্রিনের মাধ্যমে এসব বক্তৃতা বিভিন্ন স্থানে দেখানো হবে। পাশাপাশি সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে মহান মুক্তিযুদ্ধের অমর শহীদদের প্রতি এবং ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু জাদুঘরে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন তারা। অবশ্য ভারতের প্রধানমন্ত্রী রাজধানী ঢাকার বাইরে গোপালগঞ্জ ও সাতক্ষীরা সফর করবেন।

সর্বশেষ খবর