মঙ্গলবার, ১৩ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০ টা

শান্তিরক্ষার নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রশিক্ষণের বিকল্প নেই : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

শান্তিরক্ষার নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রশিক্ষণের বিকল্প নেই : প্রধানমন্ত্রী

জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে প্রযুক্তিগত নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় শান্তিরক্ষীদের যথাযথ প্রশিক্ষণের ওপর জোর দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে বিশ্বশান্তি নিশ্চিত করা অতীতের চেয়ে অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং। করোনাভাইরাসের মতো অদৃশ্য শত্রুর আবির্ভাব, প্রযুক্তির দ্রুত প্রসার এবং সময়ের অগ্রযাত্রার সঙ্গে সঙ্গে নতুন হুমকির উপাদান সৃষ্টি হয়েছে। তিনি বলেন, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা অপারেশনে আগামী দিনের নতুন সংকটগুলো মোকাবিলায় শান্তিরক্ষীদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণ ও সরঞ্জামাদি দিয়ে প্রস্তুত করা এখন সময়ের দাবি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে গতকাল বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আয়োজিত ‘অনুশীলন শান্তির অগ্রসেনা’র সমাপনী অনুষ্ঠানে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, বর্তমানে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনগুলোয় শান্তিরক্ষীদের বহুমাত্রিক ও জটিল পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হচ্ছে। শান্তিরক্ষীদের প্রাণহানির সংখ্যাও উদ্বেগজনক হারে বেড়ে চলেছে। এ পর্যন্ত ১৫৮ জন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে জীবন দিয়েছেন, ২৩৭ জন আহত হয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি জানতে পেরেছি, ‘অনুশীলন শান্তির অগ্রসেনা’য় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে সাম্প্রতিক সময়ের উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে কিছু ঘটনা অংশগ্রহণকারীদের সামনে উপস্থাপন করা হয়েছে, যাতে এ ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলায় উপযুক্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণে আমাদের ভবিষ্যৎ শান্তিরক্ষীরা সুপ্রশিক্ষিত হয়ে উঠতে পারে। ৪ থেকে ১২ এপ্রিল বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত ‘শান্তির অগ্রসেনা’ অনুশীলনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সঙ্গে অংশগ্রহণকারী ভারত, ভুটান ও শ্রীলঙ্কার সামরিক বাহিনীর সদস্যদেরও অভিনন্দন জানান প্রধানমন্ত্রী। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, তুরস্ক, সৌদি আরব, কুয়েত ও সিঙ্গাপুর থেকে আসা আমন্ত্রিত পর্যবেক্ষকদের স্বাগত জানান তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৮০০ নারী শান্তিরক্ষীসহ ১ লাখ ৭৫ হাজারের বেশি বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী পাঁচটি মহাদেশের ৪০টি দেশের ৫৪টি মিশনে অংশ নিয়েছেন। বর্তমানে ৭ হাজারের বেশি বাংলাদেশি সেনা ও পুলিশ সদস্য ১০টি মিশনে শান্তিরক্ষায় নিয়োজিত আছে। তিনি বলেন, আমাদের শান্তিরক্ষীরা যে মিশনেই গেছেন সেখানে জাতিসংঘের পতাকা সমুন্নত রাখার পাশাপাশি বাংলাদেশের ভাবমূর্তি সমুজ্জ্বল করেছেন। এ কারণেই বাংলাদেশ আজ বিশ্বের সর্বোচ্চ শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশগুলোর একটিতে পরিণত হয়েছে। অনুষ্ঠানের সমাপনী পর্বে ‘অনুশীলন শান্তির অগ্রসেনা’র ওপর নির্মিত একটি ভিডিওচিত্র দেখানো হয়। ভারতীয় সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল মনোজ মুকুন্দ নাভারানে অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। স্বাগত বক্তব্য এবং ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন বাংলাদেশের সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ। অনুশীলনে অংশগ্রহণকারী বাংলাদেশ, ভারত, ভুটান ও শ্রীলঙ্কার ১২৩ জন সেনা সদস্যের মধ্যে প্রতি দেশের দুজন করে সেনা সদস্যকে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে সেনাপ্রধান সনদ তুলে দেন।

আন্তবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতর (আইএসপিআর) জানায়, অনুষ্ঠানে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নারী সদস্যদের বিভিন্ন কার্যক্রম তুলে ধরা হয়। বহুজাতিক এ সামরিক অনুশীলনে বাংলাদেশ, ভারত ও শ্রীলঙ্কা থেকে ৩০ জন করে এবং ভুটান থেকে ৩৩ জনসহ মোট ১২৩ জন সেনাসদস্য অংশ নেন। অনুশীলনে আরও উপস্থিত ছিলেন যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, নেপাল, তুরস্ক, সৌদি আরব, ভারত, শ্রীলঙ্কা ও ভুটানের ১২ জন পর্যবেক্ষক। সমাপনী অনুষ্ঠানে ভুটান সেনাবাহিনীর ডেপুটি চিফ অপারেশন, সেন্ট্রাল আফ্রিকা, মালি ও দক্ষিণ সুদানে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে নিয়োজিত ফোর্স কমান্ডার, বাংলাদেশে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, বিভিন্ন দেশের ডিফেন্স অ্যাটাশে/সামরিক অ্যাডভাইজার, পর্যবেক্ষকসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ অংশ নেন।

সর্বশেষ খবর