শুক্রবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০ টা

রহমত শেষে মাগফিরাতে ভিজবে বিশ্ববাসী

মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী

রহমত শেষে মাগফিরাতে ভিজবে বিশ্ববাসী

রোজা এমন এক তাৎপর্যময় ইবাদত যে, এর প্রতিদান দেবেন স্বয়ং আল্লাহতায়ালা। হাদিসে কুদসিতে আল্লাহ বলেন, ‘আসসাওমু লি ও আনা আজজি বিহি। অর্থ- রোজা আমার জন্য এবং আমিই এর প্রতিদান দেব।’ বুখারি ও মুসলিম। এটা দয়াময়ের পক্ষ থেকে জগতের সব রোজাদারের জন্য ভূমন্ডল এবং নভোমন্ডলের একচ্ছত্র অধিপতি আহকামুল হাকিমিন আল্লাহর ঘোষণা। কোরআন তেলাওয়াত করলে বান্দা কতটুকু সওয়াব পাবে? জাকাত দিলে কী পাবে? হজ করলে কী হবে? তার কিছুটা ইঙ্গিত রয়েছে কোরআন ও হাদিসে। প্রতিটি কর্মেরই পরিমিত নির্দিষ্ট পুরস্কার আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত রয়েছে। কিন্তু আল্লাহতায়ালা রোজার প্রতিদানে কী দেবেন তার ধরাবাঁধা কোনো পরিমাণ উল্লেখ করেননি। তিনি তা রেখেছেন অস্পষ্ট ও মানুষের কল্পনাতীত। আবার রোজাদারকে উদ্দেশ করে বলেছেন, আমিই তার প্রতিদান দেব। জগতের কোনো রাজা-বাদশাহও যদি কাউকে বলেন, আমার এই কাজটি করে দাও, এর প্রতিদান আমি নিজে দেব। তাহলে স্বাভাবিকভাবেই আমরা ধরে নিই যে বাদশাহ অসাধারণ এমন কোনো বিনিময় দেবেন যা সচরাচর কেউ দেয় না। আর বিশ্বনিয়ন্তা যিনি অসীম ভান্ডারের মালিক তার প্রতিশ্রুতি কত ব্যাপক ও বিস্তৃত আমাদের পক্ষে কি তা বুঝা সম্ভব? রোজার সীমাহীন এবং অফুরন্ত প্রতিদানের বিষয়ে একমাত্র আল্লাহই অবহিত রয়েছেন। এদিক দিয়ে রোজা ইসলামের অন্যান্য ইবাদত-বন্দেগির চেয়ে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যে মহিমান্বিত। আল্লাহ রমজানে বান্দাকে ক্ষমা করবেন, জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেবেন, তার দিকে রহমতের দৃষ্টি দেবেন এসব রমজানের বিশেষ তোহফা। এসব শুধু তুলনা করা যায় গেরস্ত বাড়ির মালিকের আপ্যায়নের সঙ্গে। গেরস্ত বাড়িতে কাজ করলে ঠিক দুপুরে তো খাবার খাওয়াবেই, কখনো কখনো নানা রকমের পিঠা খাওয়াবে, চিঁড়া-মুড়ি খাওয়াবে কিন্তু এসব কিছুই কাজের বিনিময় নয় বরং বিকালে যাওয়ার সময় যে দু-চার শ টাকা দেয়- সেটাই বিনিময় বা পারিশ্রমিক। এ রকম আল্লাহর রহমত, মাগফিরাত, নাজাত এসব বিনিময় নয় বরং আল্লাহর স্পেশাল আপ্যায়ন। আর আল্লাহর বিনিময় হবে এমন বিনিময়, যা কোনো কান শোনেনি, কোনো চোখ দেখেনি এবং কোনো অন্তর কল্পনাও করতে পারেনি। মাবুদের পক্ষ থেকে এই কল্পনাতীত প্রতিদান পেতে হলে আমাদের তাকওয়ার ধ্যানে রোজা রাখতে হবে। আমি তাকওয়ার ধ্যানে রোজা পালন করছি তা তখনই বুঝা যাবে, যদি প্রচ- ক্ষুৎপিপাসায় কাতর হয়ে, প্রচ- যৌনক্ষুধায় তাড়িত হয়ে সব রকম সুযোগ আর সাধ্য থাকা সত্ত্বেও আমি শুধু আল্লাহর ভয়ে সিয়াম পালন করি। সিয়াম পালনও আজ আমাদের একটি সামাজিক প্রথায় পরিণত হয়েছে। লক্ষ্য করলে দেখা যায়, আমাদের সমাজের ছোট্ট কিশোর-কিশোরীরাও উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে রোজা রাখে। কে কটা রোজা রাখে তারা তারও হিসাব রাখে বেশ আগ্রহরে সঙ্গে। এটা একটি ভালো দিক। তবে এতে তাদের ধর্মীয় চেতনা যতটা না সক্রিয় হয়, তার চেয়ে বেশি সক্রিয় হয় সামাজিক প্রথা। হে সিয়ামের সাধক! হে তাকওয়ার প্রশিক্ষণার্থী!  আপনার উপবাস ও সিয়ামের প্রবণতাও কি তাই? যদি তাই হয় তাহলে তো আপনার রোজায় তাকওয়া নেই। রোজা থেকে আপনি তাকওয়া অর্জন করতে পারলেন না। আপনি আল্লাহর মহাপুরস্কার তো দূরের কথা স্বাভাবিক আদর-আপ্যায়ন পাওয়ার উপযুক্ত হতে পারলেন কি না তাও সন্দেহ! আজই সেই প্রশ্নের উত্তর নিজেকে জিজ্ঞাসা করে জেনে নিন এবং সঠিক নিয়মে রোজাব্রত পালন করার তৌফিক চেয়ে নিন মাবুদের দরবারে। লেখক : চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ মুফাস্সির সোসাইটি, পীর সাহেব, আউলিয়ানগর।

www.selimazadi.com

সর্বশেষ খবর