মঙ্গলবার, ২৫ মে, ২০২১ ০০:০০ টা

ডাবওয়ালার দা দিয়ে নিজের গলা কাটেন ঢাবির সেই ছাত্র!

ভিন্ন বক্তব্য স্বজন ও সহপাঠীদের

নিজস্ব ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক, ঢাকা

ডাবওয়ালার দা দিয়ে নিজের গলা কাটেন ঢাবির সেই ছাত্র!

বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ছাত্র হাফিজুর রহমানের মৃত্যু নিয়ে দুই রকম তথ্য পাওয়া গেছে। পরিবার ও সহপাঠীদের পক্ষ থেকে হত্যার অভিযোগ করা হলেও প্রত্যক্ষদর্শী এবং পুলিশের ভাষ্য, হাফিজ আত্মহত্যা করেছেন। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পাশে এক ডাবওয়ালার কাছ থেকে দা নিয়ে নিজের গলা নিজেই কেটেছেন। তবে কেন তিনি এই কাজ করতে গেলেন, সে বিষয়ে প্রাথমিকভাবে কিছু বলতে পারছেন না কেউ। জানা গেছে, ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে হাফিজের মৃত্যু হয় ১৫ মে রাতে। কিন্তু তার পরিচয় জানা না থাকায় লাশ রাখা হয় মর্গের ফ্রিজারে। ফ্রিজারটি নষ্ট হওয়ায় লাশে পচন ধরে গন্ধ ছড়াতে শুরু করে। ২৩ মে সন্ধ্যায় হাফিজের স্বজনরা লাশ শনাক্ত করেন। ঢামেক সূত্র বলছে, হাফিজকে হাসপাতালে আনা হয় ১৫ মে। তখন গলা থেকে রক্ত ঝরছিল। আর অতিরিক্ত রক্তক্ষরণেই তার মৃত্যু হয়। পরের দিন ১৬ মে রাত সাড়ে ১০টার দিকে শাহবাগ থানার উপ-পরিদর্শক আব্বাস আলী ও কনস্টেবল সালাউদ্দিন আহমেদ খান মরদেহের ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে নিয়ে আসেন। পরদিন মরদেহের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়।  গতকাল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া এক ভিডিওতে দেখা যায়, খালি গায়ে হাফপ্যান্ট পরে দেয়ালে হেলান দিয়ে বসা হাফিজ। এ সময় তার গলা থেকে অনবরত ঝরে পড়া রক্তে প্যান্ট ভিজে যায়। পরে রক্তাক্ত অবস্থায় তাকে রিকশায় তুলে দিতে দেখা যায় তিন পুলিশ সদস্যকে। রিকশায়ই তাকে হাসপাতালে পাঠানো হয় বলে জানা গেছে। 

শাহবাগ থানা পুলিশ জানায়, হাফিজের পরনে ছাই রঙের হাফপ্যান্ট ছিল। গলায় কাটা দাগ। ১৫ মে সন্ধ্যায় বৃষ্টি হচ্ছিল। শহীদ মিনারের পাশে হঠাৎ হাফিজ একজন ডাবওয়ালার কাছ থেকে দা নিয়ে নিজের গলা কাটেন। এরপর দৌড়াদৌড়ি ও চিৎকার করে ‘আমাকে বাঁচাও বাঁচাও’ বলে শহীদ মিনার থেকে ঢামেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগের দিকে যাচ্ছিলেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মামুন অর রশীদ বলেন, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে এক ডাবওয়ালার কাছ থেকে দা নিয়ে নিজের গলা কাটেন হাফিজ। তখন তার পরনে হাফপ্যান্ট ছাড়া কিছুই ছিল না। তাকে শনাক্ত করার মতো কিছুই পাওয়া যায়নি বলে কয়েক দিন লাশ অজ্ঞাতপরিচয়ে মর্গে ছিল। পুলিশই তদন্ত করে লাশের পরিচয় শনাক্তের জন্য স্বজনদের খবর দেয়। তবে তিনি কেন নিজের গলা কেটেছেন তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।  সূত্র জানায়, হাফিজ ঢাবির তথ্য বিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। পাশাপাশি তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক সংগঠন মাইম অ্যাকশনের সাধারণ সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করতেন। বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা থানায়। এর আগে হাফিজ নিখোঁজের ঘটনায় তার মা সামছুন নাহার ২১ মে কসবা থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন।

ঢাবিতে মানববন্ধন : ঢাবি ছাত্র হাফিজুর রহমানের কীভাবে মৃত্যু হলো তা চ‚ড়ান্ত ফয়সালা না হওয়া পর্যন্ত ছাত্রলীগ রাজপথে থাকবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও ডাকসুর সাবেক এজিএস সাদ্দাম হোসেন। তিনি এ ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।

গতকাল সকালে ঢাবির রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে আয়োজিত মানববন্ধনে অংশ নিয়ে এসব কথা বলেন সাদ্দাম। হাফিজুরের সহপাঠী এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ ও কনিষ্ঠ বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী যৌথভাবে এই মানববন্ধনের আয়োজন করে। ব্যানারে লেখা ছিল- ‘হাফিজ হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে বিচার চাই’।

মানববন্ধনে সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘হাফিজুর রহমানের মৃত্যু আমাদের সবাইকে আহত করেছে। তার পরিবারের প্রতি আমরা সমবেদনা জানাই। তাদের পাশে আমরা আছি। হাফিজুর রহমানের ঘটনার যেন ন্যায়বিচার ও সুষ্ঠু তদন্ত হয় সেই দাবি জানাচ্ছি। এ ছাড়া পূর্বাপর কী ঘটেছে না ঘটেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সামনে তা উন্মোচন করতে হবে। এসব বিষয়ে চ‚ড়ান্ত ফয়সালা না হওয়া পর্যন্ত ছাত্রলীগ রাজপথে থাকবে।’ মানববন্ধনে অন্যদের মধ্যে হাফিজুর রহমানের বন্ধু ও মনোবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র রনো আনোয়ার, ঢাকা ইউনিভার্সিটি ব্যান্ড সোসাইটির সাবেক সভাপতি তানভীর আল ফারাবি, ডিইউটাইমজের সভাপতি সাইফুল ইসলাম খান, সলিমুল্লাহ মুসলিম হল সংসদের সাবেক ভিপি এম এম কামাল উদ্দীন প্রমুখ বক্তব্য দেন। মানববন্ধন শেষে তারা ঢাবির প্রক্টর এ কে এম গোলাম রব্বানীর কার্যালয়ে গিয়ে তার সঙ্গে হাফিজুর রহমানের মৃত্যুর ঘটনার ব্যাপারে কথা বলেন।

দ্রুত তদন্ত রিপোর্ট চেয়েছে ঢাবি প্রশাসন : ঢাবি শিক্ষার্থী হাফিজুর রহমানের ‘অস্বাভাবিক’ মৃত্যুর ঘটনায় দ্রুততম সময়ে তদন্ত রিপোর্ট চেয়েছে ঢাবি প্রশাসন। এ জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে অনুরোধ করেছেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান। গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়ে জনসংযোগ দফতরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ বিষয়ে জানানো হয়। 

ছাত্র সংঠনগুলোর বিবৃতি, তদন্তের দাবি : হাফিজুর রহমানের মৃত্যুর ঘটনায় তদন্ত দাবি করে বিবৃতি দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ইউনিয়ন ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট। গতকাল পৃথক বিবৃতিতে এই দাবি জানায় তারা।

ছাত্র ইউনিয়নের বিবৃতিতে বলা হয়, ‘তার মৃত্যু স্বাভাবিক নয়। আমরা মনে করি, এই মৃত্যুতে উসকানি এবং প্রভাবনার উপস্থিতি রয়েছে। অবিলম্বে হাফিজুরের অস্বাভাবিক মৃত্যুর তদন্ত করতে হবে।’  এদিকে এই ঘটনায় পুলিশ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ভূমিকার সমালোচনা করে ছাত্রফ্রন্টের বিবৃতিতে বলা হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এই রকম একটা ঘটনা ঘটেছে, অথচ প্রক্টর-ভিসি কিছুই জানে না, এরকম হতে পারে না।

সর্বশেষ খবর