বুধবার, ৯ জুন, ২০২১ ০০:০০ টা

হেফাজতে নানা হিসাব-নিকাশ

পদ প্রত্যাখ্যান করায় বিব্রত বাবুনগরী কমিটির নেতারা

মুহাম্মদ সেলিম, চট্টগ্রাম

হেফাজতে নানা হিসাব-নিকাশ

আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীর অনুসারীদের ঘোষিত হেফাজতে ইসলামের কমিটির পদ প্রত্যাখ্যান করছেন একের পর এক নেতা। এরই মধ্যে নায়েবে আমির আবদুল কুদ্দুস, শফীপুত্র মাওলানা ইউসুফ মাদানীসহ কয়েকজন পদ প্রত্যাখ্যান করেছেন। কমিটিতে স্থান পাওয়া আরও বেশ কয়েকজন পদ প্রত্যাখ্যানের ঘোষণা দিতে পারেন। নেতাদের এমন আচরণে বিব্রত বাবুনগরী অনুসারী হেফাজতে ইসলামের শীর্ষ নেতারা।

ঘোষিত কমিটির কয়েকজনের পদ প্রত্যাখ্যানের বিষয়ে মহাসচিব মাওলানা নুরুল ইসলাম জিহাদী বলেন, ‘যাদের কমিটিতে রাখা হয়েছে সবার সঙ্গে আগেই আমাদের কথা হয়েছে। এখন যদি তারা অস্বীকার করেন, তাহলে আমাদের কিছুই করার নেই। কেউ আমাদের সঙ্গে থাকতে না চাইলে থাকবে না। তাদের তো আর জোর করে রাখা যাবে না।’

বাবুনগরীপন্থিদের ঘোষিত কমিটির নায়েবে আমির মাওলানা আবদুল কুদ্দুস বলেন, ‘ঘোষিত কমিটিতে আমার নাম কীভাবে আসল আমি নিজেই জানি না। তারা কেন আমার নাম ঘোষণা করল তা বোধগম্য নয়। ঘোষিত কমিটির সঙ্গে আমি নেই।’ সহকারী মহাসচিব পদে রাখা শফীপুত্র মাওলানা ইউসুফ মাদানী বলেন, ‘যারা আমার পিতাকে কষ্ট দিয়ে দুনিয়া থেকে বিদায় করেছেন, তাদের সঙ্গে আমি কখনো এক হতে পারি না। তাদের কমিটিতে আমার নাম দেখে মর্মাহত হয়েছি। খুনিদের ঘোষিত তথাকথিত

হেফাজতের কমিটিকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করলাম।’ ঘোষিত কমিটির সদস্য ফোরকানুল্লাহ খলিল বলেন, ‘কোনো যোগাযোগ ছাড়াই কমিটিতে আমার নাম দেওয়া হয়েছে। এ কমিটির সঙ্গে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। তাই কমিটির পদ প্রত্যাখ্যান করলাম।’

গত সোমবার ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন করে হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করেন মহাসচিব মাওলানা নুরুল ইসলাম জিহাদী। একই সঙ্গে ঘোষণা করা হয় ১৬ সদস্যের উপদেষ্টা কমিটি এবং ৯ সদস্য বিশিষ্ট খাস কমিটিও। কমিটি ঘোষণার পর বিতর্কিত ব্যক্তিদের কমিটিতে স্থান দেওয়া, আত্মীয় ও দলীয়করণসহ নানা অভিযোগ তুলে পদ প্রত্যাখ্যান করেন কয়েক জন। এ কমিটির সঙ্গে না থাকার ঘোষণা দিয়ে পদ প্রত্যাখ্যানের ঘোষণা দিতে যাচ্ছেন আরও কমপক্ষে ১৫ নেতা। কমিটির নেতাদের গণ পদ প্রত্যাখ্যান ঠেকাতে এরই মধ্যে উদ্যোগ নিয়েছেন বাবুনগরী ও মহাসচিব। তারা পদ প্রত্যাখ্যানের প্রস্তুতি নেওয়া নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে মান ভাঙানোর চেষ্টা করছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে হেফাজতে ইসলামের এক নেতা বলেন, ‘শফীপুত্রসহ কয়েকজনকে কমিটিতে রেখে চমক দেখাতে চেয়েছেন বাবুনগরী। কিন্তু তারা পদ প্রত্যাখ্যান করায় উল্টো ধাক্কা খেয়েছেন।’ দলীয় ও আত্মীয়করণের অভিযোগ : বাবুনগরীর অনুসারী ঘোষিত হেফাজতে ইসলামের কমিটিতে ফের আত্মীয়করণ ও দলীয়করণের অভিযোগ উঠেছে। ঘোষিত কমিটিতে ১০ জন রয়েছেন আমিরের নিকটাত্মীয়। তাদের মধ্যে রয়েছেন মহাসচিব নুরুল ইসলাম জিহাদী, প্রধান উপদেষ্টা মহিবুল্লাহ বাবুনগরী, নায়েবে আমির সালাউদ্দিন নানুপুরী, যুগ্ম-মহাসচিব আইয়ুব নানুপুরী, সহকারী মহাসচিব জহুরুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক মীর ইদরিস অন্যতম। ঘোষিত কমিটিতে ১৯ জন রয়েছেন ইসলামিক বিভিন্ন দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতা। তাদের মধ্যে রয়েছেন সিনিয়র নায়েবে আমির আতাউল্লাহ হাফেজ্জী, আনোয়ার করিম, রশিদুল রহমান ফারুক বর্ণভী, যুগ্ম-মহাসচিব আবদুল আউয়াল, আনোয়ারুল করিম, সাংগঠনিক সম্পাদক মীর ইদরিস অন্যতম। আত্মীয়করণ ও দলীয়করণ বিষয়ে হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব নুরুল ইসলাম জিহাদী বলেন, ‘দলীয় লোকজনকে গুরুত্বপূর্ণ কোনো পদে স্থান দেওয়া হয়নি। অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ পদে কয়েকজনকে মেধা ও যোগ্যতা অনুযায়ী স্থান দেওয়া হয়েছে।’

সর্বশেষ খবর