নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কাজে গতিশীলতা আনতে কমিশনের প্রস্তাবিত দুটি আইন সংস্কারের অনুমোদন দিয়েছে সরকার। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়। নতুন দুই অধ্যাদেশ দ্বারা নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতায়ন, দায়িত্বে অবহেলার জন্য নির্বাচনি কর্মকর্তার শাস্তি বৃদ্ধি, এনআইডি তথ্যভান্ডার প্রস্তুত ও সংরক্ষণ এবং নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে নিয়োগের জন্য ‘নির্বাচন কমিশন সার্ভিস’ গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। গতকাল রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। এ সময় প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার এবং সিনিয়র সহকারী প্রেস সচিব ফয়েজ আহম্মদ উপস্থিত ছিলেন। নির্বাচন কমিশন সচিবালয় (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর খসড়া পর্যালোচনায় দেখা গেছে, এর দ্বারা মোটা দাগে নির্বাচন কমিশন সচিবালয় আইন, ২০০৯-এর দুটি ধারা সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের কর্মকর্তা নিয়োগের জন্য ‘নির্বাচন কমিশন সার্ভিস’ গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে। আগে এটা বিধি দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে একজন সচিব ও অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সমন্বয়ে গঠিত হতো। এ ছাড়া নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের দায়িত্ব কিছুটা বাড়ানো হয়েছে। জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্যভান্ডার প্রস্তুত ও সংরক্ষণের বিধান সন্নিবেশের প্রস্তাব করা হয়েছে। নতুন করে নির্বাচনি আইন কাঠামো পর্যালোচনা ও প্রয়োজন অনুযায়ী সংশোধন, পরিমার্জন ও সংযোজনে পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া নির্বাচন কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর মাধ্যমে নির্বাচন কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) আইন, ১৯৯১-এর বিদ্যমান ৮টি ধারার মধ্যে ৩টি ধারা সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়েছে। ধারা ২ সংশোধন করে নির্বাচন কর্মকর্তা ও নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের সংজ্ঞায় পরিবর্তন আনা হয়েছে। নির্বাচন কর্মকর্তার শৃঙ্খলামূলক শাস্তি-সংক্রান্ত ধারা ৫ এর উপধারা ১, ২, ৩ ও ৪ প্রতিস্থাপনের প্রস্তাব করা হয়েছে, যেখানে নির্বাচন কর্মকর্তা দায়িত্ব পালনে অবহেলা করলে তাকে সাজা প্রদানকারী ব্যক্তির সংজ্ঞায় কিছুটা পরিবর্তন আনা হয়েছে। এ ছাড়া নতুন করে তিনটি উপধারা সংযোজনের প্রস্তাব করা হয়েছে।
দায়িত্বে অবহেলায় দায়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলে তা ওই কর্মকর্তার ব্যক্তিগত নথি, চাকুরি বহি এবং বার্ষিক গোপনীয় অনুবেদনে ও ডিসিআর-এ অন্তর্ভুক্ত করার কথা বলা হয়েছে। এ নিয়ে সরকার ও কমিশনের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দিলে কমিশনের সিদ্ধান্তকে প্রাধান্য দিতে হবে। ধারা ৬ প্রতিস্থাপন করে দণ্ড বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। পূর্বে যে অপরাধের জন্য ৫ হাজার টাকা জরিমানার বিধান ছিল, সেখানে ১ লাখ টাকা নির্ধারণ ও যে অপরাধে অনধিক ছয় মাস কারাদণ্ড বা অনধিক ২ হাজার টাকা জরিমানার বিধান ছিল, সেটা বাড়িয়ে অনধিক পাঁচ বছর ও অন্যূন এক বছরের কারাদণ্ড বা অনধিক ২০ হাজার টাকা অর্থদণ্ডের বিধান করার প্রস্তাব করা হয়েছে।