দলীয় কার্যালয় না থাকায় ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের নেতারা অধিকাংশ সময় তাদের বাসাবাড়িতেই রাজনৈতিক কর্মকান্ড পরিচালনা করেন। ফলে বলয়ভিত্তিক রাজনৈতিক চর্চা বেশি হচ্ছে। এ কারণে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে দলীয় এবং সহযোগী-ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে। দীর্ঘদিন পর গতকাল বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় দলীয় কার্যালয় না থাকার বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তুলেন ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম। তিনি বলেন, সবচেয়ে সমৃদ্ধ জেলা হচ্ছে ঢাকা জেলা। এ জেলার মানুষ সবচেয়ে অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধশালী।
মির্জা আজম বলেন, ঢাকা জেলার একজন এমপি আছেন, যাকে অজপাড়া গাঁর মানুষও দেশের সবচেয়ে ধনী মানুষ হিসেবে চেনেন। আরেকজন এমপি আছেন, যিনি সরকারের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বে রয়েছেন। তিনিও পারিবারিকভাবে ধনী মানুষ। আরেকজন প্রতিমন্ত্রী আছেন, যিনি এমপি-প্রতিমন্ত্রী হওয়ার আগেই একটি মেডিকেল কলেজের মালিক ছিলেন। ধনাঢ্য ব্যক্তি। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বেনজির আহমেদ দুই বার বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সির (বায়রা) সভাপতি ছিলেন। অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধশালী না হলে বায়রার সভাপতি হয় না। তাহলে সবচেয়ে ধনীদের জেলায় দলীয় কার্যালয় নেই কেন? এটা হতে পারে না। দলীয় কার্যালয় না থাকায় নেতারা বাড়িতে বসে দলীয় কার্যক্রম চালান, যে কারণে সহযোগী সংগঠনের সঙ্গে সমন্বয় নেই। আবার মিল নেই দলীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যেও। এটা চলতে পারে না। আমি এক বছর আগেও দলীয় কার্যালয় করার তাগাদা দিয়েছিলাম। কিন্তু দুঃখজনক এখনো হয়নি।
পরে কেরানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক ও উপজেলা চেয়ারম্যান শাহীন আহমেদ ঘোষণা দেন ঢাকা-২ আসনের সংসদ সদস্য বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুকে নিয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয় করে দেবেন। তিনি জানান, সেগুনবাগিচা অথবা বিজয়নগর এলাকায় ৩ হাজার স্কয়ার ফিটের একটি জায়গা দলীয় সভানেত্রীর নামে এক মাসের মধ্যে রেজিস্ট্রি করে দেবেন। বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বেলা ১১টায় ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বেনজির আহমদের সভাপতিত্বে এ বর্ধিত সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এতে বক্তব্য রাখেন, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুল মান্নান খান, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. মাহবুবুর রহমান, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি নির্মল রঞ্জন গুহ, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান মিজান, মহিলাবিষয়ক সম্পাদক লাবণ্য ভূঁইয়া, কেরানীগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক শাহীন আহমেদ প্রমুখ।দীর্ঘ সাড়ে চার ঘণ্টার বৈঠকে দলের ভিতরে হাইব্রিড, বিতর্কিতদের নিয়ে আলোচনা হয়। এ ছাড়া কেরানীগঞ্জ ও দোহার উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটি নিয়ে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য দেন স্থানীয় নেতারা। জেলার মহিলাবিষয়ক সম্পাদক লাবণ্য ভূঁইয়া আসন্ন কাউন্সিলে নারী নেতৃত্ব বাড়ানোর তাগিদ দেন।
প্রধান অতিথির বক্তৃতায় আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের নেতাদের উদ্দেশে বলেন, নিজের অবস্থান শক্ত করার জন্য পকেট কমিটি করা যাবে না। কর্মীরা কোণঠাসা হয়ে গেলে আওয়ামী লীগ কোণঠাসা হয়ে যাবে। চিহ্নিত সন্ত্রাসী, দুর্নীতিবাজ, সাম্প্রদায়িক, মাদক ব্যবসায়ী, এদের দল ও কমিটিতে নেওয়া যাবে না।
আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে ঢাকা জেলার সব উপজেলা-ইউনিয়ন এবং ওয়ার্ড কমিটি করার নির্দেশ দিয়ে মির্জা আজম বলেন, যে কোনো মূল্যে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে সম্মেলন করতে হবে। আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিগত সময় যারা দলের বিরোধিতা করেছিলেন, তারা কোনোক্রমেই দলের মনোনয়ন পাবেন না বলে হুঁশিয়ারি করে দেন মির্জা আজম।
জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান মিজান বিগত উপজেলা নির্বাচনে নৌকা প্রতীক পেয়েছিলেন। স্থানীয় কোন্দলে তাকে পরাজিত করা হয়েছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, সাবেক এমপি আবদুল মালেক সাহেব ও তার অনুসারীরা মিলে নৌকা ডুবিয়ে বিদ্রোহীকে পাস করিয়েছিলেন।