বুধবার, ২৮ জুলাই, ২০২১ ০০:০০ টা

ভবিষ্যতে দেশেই টিকা উৎপাদন : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

ভবিষ্যতে দেশেই টিকা উৎপাদন : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সবার সুরক্ষার জন্য প্রয়োজনে যত টাকা লাগবে, যত ভ্যাকসিনের প্রয়োজন হবে, আমরা কিনব। ভবিষ্যতে আমরা বাংলাদেশে ভ্যাকসিন উৎপাদন করব। যাতে মানুষের কোনো অসুবিধা না হয়।

গতকাল জাতীয় পাবলিক সার্ভিস দিবস উদযাপন এবং জনপ্রশাসন পদক ২০২০ ও ২০২১ প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী।

সবাইকে ভ্যাকসিনের আওতায় আনার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ইতিমধ্যে আমি নির্দেশ দিয়েছি- পরিবারে যারা... ড্রাইভার থেকে শুরু করে বাড়িতে যারা কাজ করে তাদের যেন ভ্যাকসিন দিয়ে দেওয়া হয়। তাহলে সবাই সুরক্ষিত থাকতে পারবে। এর জন্য প্রয়োজনে যত টাকা লাগবে, যত ভ্যাকসিনের প্রয়োজন হবে আমরা কিনব। তিনি বলেন, ইতিমধ্যে প্রায় ১ কোটি ৮৭ লাখ মানুষ টিকা পেয়েছে। বাংলাদেশের বয়স্ক কোনো মানুষ টিকা প্রাপ্তি থেকে বাদ যাবে না। ছাত্র-শিক্ষক থেকে শুরু করে সবার জন্যই আমরা এই টিকা ক্রয় করতে থাকব। সবাই যাতে টিকা পায় সে ব্যবস্থা আমরা অবশ্যই করব।

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক ২০২০ এবং ২০২১ সালের জনপ্রশাসন পদক বিজয়ীদের মাঝে স্বর্ণপদক, চেক, ক্রেস্ট এবং সনদ বিতরণ করেন।

জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন এবং মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। জনপ্রশাসন

মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কে এম আলী আজম স্বাগত বক্তৃতা করেন। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মকান্ডের ওপর অনুষ্ঠানে একটি ভিডিও ডকুমেন্টারি প্রচার করা হয়।

ভালো কাজে যেমন পুরস্কার, খারাপ কাজে শাস্তিও হবে : সরকারি কর্মকর্তাদের সতর্ক করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ভালো কাজ করলে যেমন পুরস্কার পাওয়া যাবে, ঠিক তেমনি খারাপ কাজের জন্যও কঠোর শাস্তি পেতে হবে। এই শৃঙ্খলাটা থাকতে হবে, এই নিয়মটা থাকতে হবে। সেটাও অবশ্যই আমরা করব। তিনি বলেন, আপনারা মাঠ পর্যায়ে কাজ করেন। মাঠ পর্যায়ে কাজ করলে আপনারা অনেক বেশি জানার সুযোগ পান, মানুষের সুবিধা-অসুবিধাগুলো জানতে পারেন। কীভাবে একেকটা এলাকার অর্থনৈতিক উন্নয়ন করা যায়, সেটা আপনারা সব থেকে ভালোভাবে অনুধাবন করতে পারেন। আমি আশা করি, সেভাবেই আপনারা ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কীভাবে নেওয়া যায়, কীভাবে মানুষের সেবা করা যায়, কীভাবে মানুষকে উন্নত জীবন দেওয়া যায় সেদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দেবেন আমরা যাতে জাতির পিতার স্বপ্ন পূরণ করতে পারি, সেটাই আমরা চাই। শেখ হাসিনা বলেন, আপনাদের কাছে আমার অনুরোধ, যাদের অর্থে আমাদের সংসার চলে তাদের সেবা করুন। যাদের অর্থে আমরা চলছি তাদের যেন কষ্ট না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখুন।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে উদ্ধৃত করে শেখ হাসিনা বলেন, তিনি বলেছিলেন, সরকারি কর্মচারীদের জনগণের সঙ্গে মিশে যেতে হবে, তারা জনগণের খাদেম, সেবক, ভাই। তারা জনগণের ভাই, জনগণের সন্তান। তাদের এই মনোভাব নিয়ে কাজ করতে হবে। “অর্থাৎ আপনারা তো এই দেশেরই মানুষ। আপনারা তো পাকিস্তান থেকে উড়ে এসে জুড়ে বসেননি। কাজেই এই বাংলাদেশের সব জায়গায় তো আপনার আত্মীয়স্বজন সবাই জড়িয়ে আছে। কাজেই বাংলাদেশ যত উন্নত হবে আপনার আপনজনরাই তো সুন্দর জীবন পাবেন, ভবিষ্যৎ পাবেন। সে কথা চিন্তা করেই দেশের জন্য কাজ করবেন। আপনাদের পেশাদারিত্ব, সততা, নিষ্ঠা, একাগ্রতা যাতে বজায় থাকে এবং নতুন নতুন উদ্ভাবনী শক্তি যেন দেশের কাজে লাগে, সেটাই আমরা চাই।”

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭২ সালের ৪ নভেম্বর গণপরিষদে জাতির পিতা সরকারি কর্মচারীদের অনুশাসন দিয়ে বলেছিলেন, তাদের মনোভাব পরিবর্তন করতে হবে যে, তারা ‘শাসক নন, সেবক’। “জাতির পিতা তাঁর এই চিন্তাধারার প্রতিফলন ঘটান আমাদের সংবিধানে। সংবিধানের ২১ এর ২ অনুচ্ছেদে স্পষ্ট কিন্তু লেখা রয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, সকল সময়ে জনগণের সেবা করিবার চেষ্টা করা প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিযুক্ত প্রত্যেক ব্যক্তির কর্তব্য। কাজেই এটা কিন্তু সংবিধানের নির্দেশ, যেই সংবিধান নিয়ে আমাদের এই দেশটা পরিচালিত হচ্ছে, সেটা আশা করি সকলে মনে রাখবেন।”

মহামারীর এ সময়ে বাজেট দেওয়া কঠিন ছিল জানিয়ে সরকার প্রধান বলেন, সেই বাজেট যেন ভালোভাবে বাস্তবায়ন হয় এবং উন্নয়ন প্রকল্পগুলো যেন মান ঠিক রেখে বাস্তবায়ন করা যায়, আর যত্রতত্র যেখানে সেখানে শুধু একটা কিছু নির্মাণের জন্য নির্মাণ যেন না হয়, যেটা আদতে প্রয়োজন দেশের জন্য, মানুষের জন্য, সেই রকমই যেন আমাদের উন্নয়ন প্রকল্পটা হয়, পরিকল্পনাটা হয়। সরকারি কর্মকর্তাদের তিনি বলেন, এখান থেকে আমাদের যত দ্রুত মুক্ত হওয়া যায়, বাংলাদেশকে মুক্ত করা যায়, সেদিকে আমাদের দৃষ্টি দিতে হবে। মানুষ যেন স্বাস্থ্য সুরক্ষার নিয়মগুলো মেনে চলে, সে ব্যাপারে তাদের সচেতন করতে হবে।

অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে আওয়ামী লীগ নেতারা সারা বিশ্বে নজির সৃষ্টি করেছেন : গতকাল বিকালে স্বেচ্ছাসেবক লীগের ২৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় তিনি বলেন, করোনার দুর্যোগকালে দেশের অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের সেবা করে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা সারা বিশ্বে অনন্য নজির সৃষ্টি করেছে। দেশে অনেক রাজনৈতিক দল আছে, দলের তো অভাব নেই। কিন্তু একমাত্র আওয়ামী লীগই দেশের যে কোনো সংকট-দুর্যোগে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে সাহায্য করে। অন্যরা সহযোগিতার নামে কিছু ফটোসেশন করলেও একমাত্র আওয়ামী লীগই দৃশ্যমান মাঠে থেকে মানুষের সেবা করে যাচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশে দুই ধরনের রাজনীতি আছে। একটি অংশের (বিএনপি) রাজনীতি হলো ক্ষমতায় থেকে অর্থ-সম্পদ বানিয়ে ভোগবিলাস করে, আরেকটি অংশ হচ্ছে আওয়ামী লীগ যারা যে কোনো সংকটে মানুষের সেবা করে, মানুষের কল্যাণের জন্যই কাজ করে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু সেই আদর্শই আমাদের দিয়ে গেছেন। মানবতার সেবায় স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা সারা বিশ্বে যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে, তা অব্যাহত রাখতে হবে। মনে রাখতে হবে, মানুষের জন্য নিবেদিত হয়ে তাদের সেবা ও কল্যাণে কাজ করাই হচ্ছে একজন রাজনীতিবিদের বড় কাজ। মানবসেবার এই কর্মকান্ড অব্যাহত রাখার জন্য তিনি দলের নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান।

আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি নির্মল রঞ্জন গুহের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান বাবুর পরিচালনায় আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন সংগঠনটির প্রথম সভাপতি ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কৃষিবিদ আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম। সভার শুরুতেই স্বেচ্ছাসেবক লীগের বিগত এক বছরের কার্যক্রম নিয়ে ৫ মিনিট ৩১ সেকেন্ডের ডকুমেন্টারি প্রদর্শন এবং ‘স্বেচ্ছাসেবার এক বছর’ ২০১৯-২০২০ শিরোনামে প্রকাশিত গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী। আলোচনা সভা শেষে প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের শুভ জন্মদিন উপলক্ষে কেক কাটা ও তাঁর সুস্বাস্থ্য কামনায় দোয়া অনুষ্ঠিত হয়।  প্রধানমন্ত্রী নিজেদের সুরক্ষিত রেখে ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে দেশের মানুষ যাতে করোনা ভ্যাকসিন গ্রহণ করে এবং টিকা কেন্দ্রে গিয়ে এনআইডি কার্ড নিয়ে রেজিস্ট্রেশন করার কাজে সহযোগিতা করার জন্য দলের নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, যেখান থেকে পাচ্ছি আমরা করোনার ভ্যাকসিন ক্রয় করছি। এ জন্য বাজেটে আলাদা বরাদ্দ রাখা আছে, প্রয়োজনে আরও দেব। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন অনুযায়ী যাতে দেশের শতকরা ৮০ ভাগ মানুষ ভ্যাকসিন নিতে পারে আমরা সেই ব্যবস্থা করে দিচ্ছি।

এ দিনটি আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ছাড়াও তাঁর প্রথম সন্তান তথ্যপ্রযুক্তিবিদ ও কম্পিউটার বিজ্ঞানী সজীব ওয়াজেদ জয়ের জন্মদিন। বিষয়টি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীর কাছে সজীব ওয়াজেদ জয়ের জন্য দোয়া কামনা করে বলেন, করোনার কারণে প্রায় পৌনে দুই বছর জয়ের সঙ্গে দেখা হয় না। আজকের এই দিনে আমি জয়ের দীর্ঘায়ু ও সুস্বাস্থ্য কামনা করছি। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী থাকা অবস্থাতেও সজীব ওয়াজেদ জয়ের সেমিস্টারের টাকা দিতে না পারায় এমআইটি থেকে তাঁর নাম কেটে দেওয়ার আক্ষেপের কথাও ফুটে ওঠে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার কণ্ঠে।

সর্বশেষ খবর