শুক্রবার, ৬ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তদন্ত প্রতিবেদন

কাশিমপুরে ৮৮ জ্যামারের ৭৩টিই অচল

চলছে শতাধিক অবৈধ মোবাইল ফোন, মিনিটে ৩৩ টাকা, ল্যাপটপ স্মার্টফোন ইলেকট্রনিক ডিভাইস সবই চলে কারাগারে

উবায়দুল্লাহ বাদল

গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারের ৮৮টি মোবাইল জ্যামারের মধ্যে ৭৩টিই বিকল। এই সুযোগে কারাগারের ভিতরে বাণিজ্যিকভাবে চলছে শতাধিক অবৈধ মোবাইল ফোন। এসব ফোনেই কারাগারের ভিতর থেকে বাইরের অপরাধ জগৎ নিয়ন্ত্রণ হয়। এ ছাড়াও রয়েছে ল্যাপটপ, স্মার্টফোন, ইলেকট্র্রনিক ডিভাইস। এ ফোন বাণিজ্যের নেতৃত্ব দেন কারাগারের এক শ্রেণির অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী। কর্তৃপক্ষকে না জানিয়ে রাতে তল্লাশি চালালে কারাগার থেকে উদ্ধার হবে অবৈধ মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ, স্মার্টফোনসহ ইলেকট্রনিক ডিভাইস। এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের তদন্ত প্রতিবেদনে। প্রতিবেদনের সুপারিশ বাস্তবায়নে সব কারাগারে চিঠি দিয়েছে কারা অধিদফতর। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (কারা) সৈয়দ বেলাল হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘মন্ত্রণালয় থেকে তদন্তে কারাগারে মোবাইল কল বাণিজ্যসহ নানা অনিয়ম পাওয়া গেছে। তদন্তের সুপারিশ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে কারা অধিদফতরকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’

কারা সূত্রগুলো জানিয়েছে, কারাগারের নিয়ম অনুযায়ী একজন বন্দী প্রতি সপ্তাহে একবার সর্বোচ্চ ১০ মিনিট মোবাইল ফোনে স্বজনদের সঙ্গে কথা বলতে পারেন। মিনিটে ১ টাকা হারে কারাগারগুলোর নিজস্ব বুথে গিয়ে কথা বলতে হয়। প্রতি আড়াই হাজার বন্দীর জন্য ১টি করে মোবাইল সেট রয়েছে। তবে কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়া একাধিক সূত্র জানান, কারাগার থেকে বাইরে মোবাইল ফোনে কথা বলার জন্য প্রতি ৩  মিনিটে ১০০ টাকা নেওয়া হয়। বন্দী নামিদামি কেউ হলে ২ মিনিটে ১ হাজার টাকাও নেওয়া হয়। টাকা হলে রাতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা মোবাইলে কথা বলা যায়। এই অভিযোগের সত্যতা মিলেছে কারা অধিদফতরের এক চিঠিতে।

গত ১৫ জুলাই দেশের সব কারাগারে পাঠানো ওই চিঠিতে বলা হয়- করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় বন্দীদের সঙ্গে তাদের পরিবারের দেখা-সাক্ষাৎ বন্ধ রয়েছে। তার পরিবর্তে সপ্তাহে একবার সর্বোচ্চ ১০ মিনিট কথা বলার জন্য সব কেন্দ্রীয়/জেলা কারাগারকে নির্দেশনা পাঠানো হয়। কিন্তু ইদানীং লক্ষ্য করা যাচ্ছে, কতিপয় অসাধু কারা কর্মকর্তা/কর্মচারী তাদের ব্যক্তিস্বার্থ হাসিলের জন্য খেয়াল-খুশি মতো বন্দীদের সঙ্গে তাদের স্বজনদের টেলিফোনে কথা বলার সুযোগ করে দিচ্ছে। যা নিয়ম-নীতির পরিপন্থী এবং সুষ্ঠু কারা প্রশাসনের অন্তরায়।

এর আগে গত ৮ জুলাই সব কারাগারে ‘কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে বিদ্যমান অনিয়ম ও অনৈতিক কর্মকান্ডে গঠিত তদন্ত কমিটি’র ৯ দফা সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে চিঠি দেয় কারা অধিদফতর। গত বছরের ১৭ নভেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সুরক্ষা সেবা বিভাগের যুগ্মসচিব মুনিম হাসানের নেতৃত্বে গঠিত কমিটির ওই তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়- ২০১৪ সাল থেকে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারের ৪টি ইউনিটেই মোবাইল জ্যামার লাগানো হয়েছে। হাই সিকিউরিটি কারাগারের ৪০টির মধ্যে ৩৫টি, ইউনিট-১ এর ১৪টির মধ্যে সবই, ইউনিট-২ এর ৩২টির মধ্যে ২২টি এবং মহিলা কারাগারের দুটির মধ্যে দুটিই নষ্ট রয়েছে। মোট ৮৮টি জ্যামারের মধ্যে ৭৩টিই বিকল। কারাগারগুলোতে জ্যামার সার্বক্ষণিক সচল রাখার পাশাপাশি কোনো আসামিই যেন মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ, স্মার্টফোন কিংবা ইলেকট্র্রনিক দ্রব্যাদি সঙ্গে রাখতে না পারে সে ব্যাপারে কড়াকড়ি আরোপ করা প্রয়োজন। কাশিমপুর কারাগারে শতাধিক অবৈধ মোবাইল ফোন রয়েছে। যার দ্বারা কারা অভ্যন্তরের বাইরে যোগাযোগ, নেটওয়ার্ক বিস্তার, অপরাধ জগৎ নিয়ন্ত্রণ হয়ে থাকে। এর আগে একাধিকবার তদন্ত কমিটি করে সরেজমিন তল্লাশি চালানো হয়েছে। কমিটি কারা কর্তৃপক্ষকে আনুষ্ঠানিভাবে জানিয়ে তদন্ত করায় কর্তৃপক্ষ পূর্ব সতর্কতা অবলম্বন করে তদন্তকারীদের কাছে প্রমাণের চেষ্টা করেছেন, কারাগারে কোনো অপরাধ নেই। অথচ প্রকৃত ঘটনা ভিন্ন। কারা কর্তৃপক্ষকে না জানিয়ে রাতে অভিযান চালানো হলে কারাগার থেকে মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ, স্মার্টফোনসহ নানা ধরনের ইলেকট্রনিক ডিভাইস উদ্ধার করা সম্ভব হতে পারে। কারাগারে সিসিটিভি ক্যামেরা সচল থাকলে মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ, স্মার্টফোনসহ নানা ধরনের ইলেকট্রনিক ডিভাইস কারাগারে প্রবেশ করতে পারবে না। অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রিজন ভ্যানে কোর্টে পাঠানোর সময় আসামিদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলতে ৪-৫টি মোবাইল ফোন দেয় কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যরা। কারাগার থেকে আসামিদের কোর্টে প্রিজন ভ্যানের মাধ্যমে আনা-নেওয়ার কাজটি পুলিশই করে থাকে।

সর্বশেষ খবর