শুক্রবার, ৬ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা

ভুঁইফোড়দের কঠোর হাতে দমনের হুঁশিয়ারি

শেখ কামালের জন্মদিনের আলোচনায় আওয়ামী লীগ নেতারা

নিজস্ব প্রতিবেদক

আওয়ামী লীগের নামে গড়ে ওঠা বিভিন্ন ভুঁইফোড় সংগঠনের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন দলটির সিনিয়র নেতারা। গতকাল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ ছেলে ক্রীড়া সংগঠক বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ কামালের ৭২তম জন্মদিন উপলক্ষে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তারা এ হুঁশিয়ারি দেন। 

প্রধান অতিথির বক্তব্যে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক বলেন, যারা আওয়ামী লীগের গায়ে কালিমা লেপন করতে চাচ্ছেন, যারা আওয়ামী লীগের নামে ভুঁইফোড় সংগঠন করেন, কার্ড ছাপিয়ে, প্যাড ছাপিয়ে অর্থবিত্ত করতে চাচ্ছেন, তাদের কঠোর হস্তে দমন করতে হবে। তিনি বলেন, আমাদের কঠোর হতে হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এককভাবে এদের দমন করলে হবে না। দল হিসেবে আমাদের মুখ্য ভূমিকা পালন করতে হবে। কঠোর হস্তে আপসহীনভাবে তাদের মোকাবিলা করতে হবে।

আওয়ামী             লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, দল ক্ষমতায় থাকার কারণে অনেকে নেতা হতে উদগ্রীব হয়ে আছেন। কিন্তু তাদের আদর্শ নেই। আওয়ামী লীগ করতে হলে আদর্শ ধারণ করতে হবে। তিনি বলেন, পদ-পদবি না পেয়ে নামের আগে-পরে যারা লীগ ও বঙ্গবন্ধুর নাম দিচ্ছেন, এরা আদর্শিক কর্মী হতে পারেন না। আওয়ামী লীগের লাখ লাখ কর্মী আছেন, সবাই তো পদধারী নন। আজকে যারা হঠাৎ করে নেতা হতে চান, তারা ধান্ধাবাজ ও প্রতারক। এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।  হানিফ বলেন, আমরা অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে গেছি। কিন্তু নৈতিকভাবে আমরা পিছিয়ে গেছি। অভিযানের মধ্য দিয়ে সমাজ থেকে এই অনৈতিকতা দূর করতে চাই। অভিযান শুরু হয়েছে, চলতে থাকবে। ষড়যন্ত্রকারী-সুবিধাবাদীর বিষয়ে সজাগ থাকতে হবে বলে জানিয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে আমরা রক্ষা করতে পারিনি। এটা আমাদের ব্যর্থতা। জাতির পিতার সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে খুনিদের বিচার হয়েছে। কিন্তু ষড়যন্ত্রের সঙ্গে যারা জড়িত ছিলেন তাদের ইতিহাস বাংলাদেশের মানুষের জানার অধিকার রয়েছে। এই ইতিহাস যতদিন না উন্মুক্ত হবে, বাংলাদেশের মানুষ পরিষ্কারভাবে জানতে না পারবে, ততদিন ষড়যন্ত্রকারী, সুবিধাবাদীদের অপতৎপরতা চলতেই থাকবে। এদের বিষয়ে আমাদের সজাগ থাকতে হবে। 

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম বলেন, অতীতের অভিজ্ঞতা এবং বর্তমানের সতর্কতা নিয়ে মনে ধারণ করতে হবে। আমরা ১/১১ দেখেছি। সে সময়ে অনেক নেতার চরিত্রও আমাদের জানা আছে। দলকে শক্তিশালী করতে হবে। আগামীতে যে ২/২২ আসবে না, সে কথা বলতে পারি না। আশা করি ২/২২ আসবে না, কারণ আমাদের নেত্রীর ওপর আস্থা আছে। সেই আস্থা ও বিশ্বাস নিয়েই আমরা রাজনীতি করি। ঢাকা মহানগর দক্ষিণের ইউনিট কমিটি গঠনের কথা জানিয়ে ঢাকা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম বলেন, দক্ষিণ আওয়ামী লীগ বিভিন্ন ওয়ার্ড ইউনিট কমিটি গঠনে ইতিমধ্যে কমিটি গঠন করেছে। আগস্টের পর এই কার্যক্রম শুরু হবে। কিন্তু একটি বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে, যেন এখানে দুর্দিনের কর্মীরা জায়গা পান। গত ২০১৮ সালে দলীয় সভানেত্রীর কাছে পাঠানো একটি অভিযোগ দেখলাম, কদমতলী ও শ্যামপুর থানায় যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ১৮ ও ১৯ বছরের যুবককে। তারা কারা? ওই এলাকার সবচেয়ে ধনাঢ্য ব্যক্তির ছেলে। এখন যারা কমিটি গঠন করতে যাচ্ছেন, তাদের সতর্ক করছি, ১২ বছর ক্ষমতায় যারা মোটাতাজা হয়েছেন, অর্থবিত্তশালী হয়েছেন, শুধু তাদেরই কমিটিতে আনবেন না, শুকনা মানুষগুলোকেও কমিটিতে রাখবেন। কারণ মোটাতাজা মানুষ কখনো প্রতিবাদ করবে না। তারা হয় পালিয়ে যাবেন, না হলে সম্পদ রক্ষার জন্য অগণতান্ত্রিক ব্যক্তিদের কাছে আত্মসমর্পণ করবেন। আর শুকনা মানুষগুলোই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিবাদ করবেন। শহীদ শেখ কামালের জন্মদিনের আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, অনেক রাজনীতিবিদের ছেলেদের পদস্খলন হয়। কিন্তু শেখ কামালের মধ্যে আমরা উদ্যম দেখেছি। তিনি বেঁচে থাকলে দেশ পরিচালনায় অনন্য ভূমিকা রাখতেন। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফীর সভাপতিত্বে সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবিরের সঞ্চালনায় আরও বক্তৃতা করেন নুরুল আমিন রুহুল, ডা. দিলীপ রায়, কাজী মোরশেদ হোসেন কামাল, মহিউদ্দিন মহি, গোলাম সরোয়ার কবির প্রমুখ।

সর্বশেষ খবর