মঙ্গলবার, ১৭ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা

মা-মেয়ে পাচারের অভিযোগে তিনজন গ্রেফতার

১০ বছরে ২ শতাধিক পাচার

নিজস্ব প্রতিবেদক

ওরা দীর্ঘদিন ধরে লোভনীয় চাকরির অফার দিয়ে বিদেশে নারী পাচার করে আসছিল। গত ১০ বছরে বিভিন্ন বয়সী দুই শতাধিক নারীকে পাচার করেছে এ চক্রটি। তবে সর্বশেষ এক নারী ও তার মেয়েকে পাচারের ঘটনাটি দেশি-বিদেশি বিভিন্ন গণমাধ্যমে ফলাও করে প্রচার হওয়ায় তাদের মধুচক্রে হানা দিয়েছে এলিট ফোর্স র‌্যাব। গ্রেফতার করে এ চক্রের দেশীয় হোতা মো. কালু ওরফে কাল্লু ও তার দুই সহযোগীকে। গ্রেফতার অন্যরা হলো- কাল্লুর ভাগ্নে মো. সোহাগ ওরফে নাগিন সোহাগ (৩২) ও বিল্লাল হোসেন (৪১)। রাজধানীর পল্লবী এবং মাদারীপুরের শিবচরে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করে র‌্যাব। তাদের কাছ থেকে চারটি মোবাইল ফোন ও নগদ টাকা জব্দ করা হয়।

গতকাল দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছেন র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। তিনি বলেন, দরিত্র ও নিম্নআয়ের পরিবারে বেড়ে ওঠা কিশোরীদেরই টার্গেট করে এ চক্রের সদস্যরা। কাল্লুর নির্দেশনায় এ কাজ করে তার বিশ্বস্ত সহযোগী নাগিন সোহাগ। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের বিভিন্ন এজেন্টের সঙ্গে সমন্বয় রাখত সাতক্ষীরার বিল্লাল। এ চক্রে নারীসহ রয়েছে ২০-২৫ সদস্য। গ্রেফতারকৃতরা জানিয়েছে, মূলত যৌন কাজের জন্যই ভিকটিমদের পাচার করা হতো। ঢাকার মিরপুর, তেজগাঁও, গাজীপুরসহ কয়েকটি এলাকায় এ চক্রের সদস্যরা সক্রিয় রয়েছে। এক থেকে দেড় লাখ টাকায় প্রত্যেক ভুক্তভোগীকে পার্শ্ববর্তী দেশের দালালের কাছে বিক্রি করা হতো।

কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, গত জানুয়ারিতে রাজধানীর পল্লবী এলাকায় পরিবারের অগোচরে ১৭ বছর বয়সী মেয়েকে বিউটি পার্লারে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে ভারতে পাচার করে দেয় চক্রটি। ভুক্তভোগী মেয়েটি পাচারকালে সাতক্ষীরা সীমান্ত থেকে তার মাকে পাচারের বিষয়টি জানাতে সক্ষম হয়। অনন্যোপায় হয়ে মা একাই তার মেয়েকে উদ্ধার করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হন। এই মা পাচার চক্রের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। চক্রটি একই প্রক্রিয়ায় পার্শ্ববর্তী দেশে ভিকটিমের মাকেও পাচার করে। পরিচয় গোপন করতে ভুক্তভোগী মা ‘মুন্নি’ নাম ধারণ করেন। পরে ওই চক্রের সদস্যদের কাছ থেকে মা কৌশলে পালিয়ে গিয়ে মেয়ের সন্ধান করতে থাকেন। একপর্যায়ে পার্শ্ববর্তী দেশের উত্তর দিনাজপুরের পাঞ্জিপাড়ায় একটি নিষিদ্ধ পল্লীতে তার মেয়ের সন্ধান পান। স্থানীয় চেয়ারম্যানের সহযোগিতায় মা তার মেয়েকে উদ্ধার করেন। মেয়েকে নিয়ে দেশে ফেরার সময় সীমান্ত এলাকায় অবৈধ অনুপ্রবেশের কারণে বিএসএফের কাছে তারা আটক হন। কিন্তু বিএসএফ সম্পূর্ণ ঘটনা শুনে সমব্যথী হয়ে পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে তাদের বিজিবির কাছে হস্তান্তর করে। তিনি বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানা যায়, ভুক্তভোগীদের অবৈধভাবে নৌপথে ও স্থলপথে সীমান্ত পারাপার করানো হতো। দলনেতা কাল্লু নিজে অথবা ক্ষেত্রবিশেষে সোহাগসহ অন্যদের মাধ্যমে সাতক্ষীরা সীমান্তবর্তী এলাকায় বিল্লালের সেফ হাউসে ভিকটিমদের নিয়ে রাখত। ভিকটিম মেয়েকে প্রথমে পাঞ্জিপাড়া যৌন পল্লীতে বিক্রি করা হয়। ভিকটিম ‘মা’ ওই যৌনপল্লী থেকে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও অন্যদের সহযোগিতায় তার মেয়েকে মুক্ত করে নিয়ে আসেন।

র‌্যাব বলছে, গ্রেফতারকৃত বিল্লাল ও তার সহযোগী (স্ত্রী) রাজিয়া খাতুন ২০১৮ সালে পল্লবী থানার মানবপাচার মামলায় এক বছর জেল খেটেছে। দলনেতা কাল্লুও ২০১৭ সালে মাদক মামলায় দুই বছর কারাভোগ করে।

সর্বশেষ খবর