বুধবার, ১৮ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা

টেকনাফে শতাধিক ইয়াবা ডন

স্টমাক ক্যারিং নিয়ে চিন্তিত প্রশাসন, ভয়াবহভাবে বাড়ছে পাচার

মুহাম্মদ সেলিম, চট্টগ্রাম

টেকনাফে শতাধিক ইয়াবা ডন

প্রশাসনের কপালে ভাঁজ ফেলেছে ইয়াবার ‘স্টমাক ক্যারিং’। ইয়াবার ট্রানজিট পয়েন্ট কক্সবাজার থেকে এ পদ্ধতি অবলম্বন করে ব্যাপক হারে পাচার হচ্ছে মরণনেশা ইয়াবা। এ পদ্ধতি অনুসরণ করার ফলে ইয়াবার ক্যারিয়াররা গ্রেফতারও হচ্ছে কম। তাই টেকনাফভিত্তিক শতাধিক ইয়াবা চক্রের হোতা অভিন্ন পদ্ধতিতে দেশের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে দিচ্ছে এই মাদক। ব্যাপক হারে ‘স্টমাক’ পদ্ধতি ব্যবহার করাকে ভয়ংকর মনে করছেন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর চট্টগ্রাম অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক মুজিবুর রহমান পাটওয়ারী বলেন, ‘ইদানীং দেখা যাচ্ছে পাকস্থলীকে ব্যবহার করে ব্যাপক হারে ইয়াবা পাচার করছে মাদক ব্যবসায়ীরা। এটা ভয়ংকর বিষয়। এভাবে ইয়াবার পাচার সহজে জব্দ করা যায় না। তাই এটাকে সুযোগ হিসেবে নিচ্ছে কিছু মাদক ব্যবসায়ী।’

টেকনাফ এলাকায় দীর্ঘদিন কর্মরত ছিলেন মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের চট্টগ্রাম মেট্রো অঞ্চলের সহকারী পরিচালক সৌমেন মন্ডল। তার মতে, ‘একসময় মাদক পাচার চক্রের হোতারা রোহিঙ্গা কিংবা টেকনাফের লোকজন দিয়েই পাকস্থলীতে করে ইয়াবা পাচার করাত। এখন এ এলাকার লোকজন ছাড়াও ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, রংপুর ও বরগুনা এলাকার লোকজন পেটে করে ইয়াবা ক্যারি করে।’

অনুসন্ধানে জানা যায়, পাকস্থলীতে ইয়াবা পাচার করলে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের চোখকে ফাঁকি দেওয়া যায় সহজে। গ্রেফতার হওয়ার আশঙ্কাও থাকে কম। তাই কক্সবাজার ভিত্তিক মাদক মাফিয়ারা স্টমাক পদ্ধতি অনুসরণ করে ইয়াবা পাচার শুরু করেছে। এ পদ্ধতিকে মাদক ব্যবসায়ীরা বলে ‘ফিশিং’। স্টমাক পদ্ধতিতে ইয়াবা পাচার করে টেকনাফের কমপক্ষে ১০০ জন মাদক ব্যবসায়ী। তারা প্রায় সবার বাড়ি হোয়াইক্ষ্যং, জালিয়াপাড়া, সাবরাং, নাইটংপাড়া, জাদিমুরা এবং রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পের অধিবাসী। পাচার চক্রের হোতারা রিকশাচালক, দোকানদার, পরিবহন শ্রমিকের মাধ্যমে ক্যারিয়ার ভাড়া করে। কক্সবাজার এলাকার বাইরের মাদক ব্যবসায়ীরা নিজ এলাকা থেকেই ভাড়া করে নিয়ে আসে স্টমাক ক্যারিয়ারকে। প্রতি হাজার পিস স্টমাক ক্যারিংয়ের জন্য পাঁচ থেকে সাত হাজার টাকা দিয়ে থাকে তারা বহনকারীকে। কেউ ক্যারিয়ার হতে রাজি হলে তার চোখ কাপড় দিয়ে বেঁধে নিয়ে যাওয়া হয় নির্ধারিত এলাকায়। এরপর বিশেষ পদ্ধতিতে পেটে প্রবেশ করানো হয় ইয়াবার পোঁটলা। ফের তার চোখ বন্ধ করে নিয়ে আসা হয় বাসস্টেশনে। অতঃপর কাট আউট পদ্ধতি অনুসরণ করে ইয়াবার চালানগুলো পৌঁছে দেওয়া হয় দেশের বিভিন্ন জায়গায়।

মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের মেট্রো অঞ্চলের সহকারী পরিচালক এমদাদুল ইসলাম বলেন, ‘পাকস্থলীতে করে ইয়াবা পাচার করলে তা শনাক্তের কোনো প্রযুক্তি আমাদের নেই। তাই বাহকের চোখ ও গতিবিধি দেখে সন্দেহ করে আটক করে শরীর স্ক্যানিং করা হয়। পেটে করে ইয়াবা পাচার রোধে হাতে বহনযোগ্য স্ক্যানিং ব্যবহার ছাড়া বিকল্প নেই।’

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর