মঙ্গলবার, ২৪ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা

অ্যাসোসিয়েশনের বিবৃতির সঙ্গে একমত নন সচিবরা

------- মন্ত্রিপরিষদ সচিব

নিজস্ব প্রতিবেদক

বরিশালে ইউএনওর বাসভবনে হামলার ঘটনায় প্রশাসন ক্যাডার কর্মকর্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের (বাসা) দেওয়া বিবৃতির বিষয়ে সচিবসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা দ্বিমত পোষণ করেছেন বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। গতকাল সচিবালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকের ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

বরিশালের ঘটনার বিষয়ে আপনাদের কোনো নির্দেশনা আছে কি না- এমন প্রশ্নে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘এটা তো আমরা ক্লোজলি অবজারভ করছি। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে আমরা দেখছি যে একটা মিস কমিউনিকেশন থেকে এগুলো শুরু হয়। সেটাই ইন্সট্রাকশন দিয়ে দেওয়া হয়েছে মাঠপর্যায়ের সবাইকে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকেও বলে দেওয়া হয়েছে, ক্যাবিনেট থেকেও বলে দেওয়া হয়েছে। অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কিংবা জনপ্রতিনিধি সবাইকে বলা হয়েছে, আপনারা নিয়মিত ইন্টারঅ্যাকশন (মতবিনিময়) করবেন। ইন্টারঅ্যাকশন যেখানে কম হয়, সেখানেই এ ধরনের মিস কমিউনিকেশনের বিব্রতকর ঘটনাগুলো ঘটে।’ খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘এগুলো যাতে না ঘটে, সে জন্য তাদের (বরিশালের) বলা হয়েছে, আপনারা নিজেরা আগে বসেন। বসে দেখেন কী সমাধান করা যায়। আপনারা সমাধান করতে না পারলে আইন তো আছেই। আপনারা দেখেন এসব ঘটনা কেন ঘটছে। বরিশালের ঘটনা এক্সাক্টলি কী আমরা জানি না। সব লেভেলেই বলা হয়েছে। কেন সবাইকে একটা বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হচ্ছে। কার কোথায় ফল্ট আছে নিজেরা দেখেন। দেখা যাক, তারা সময় নিয়েছেন, নিজেরা আগে দেখুক।’

অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের বিজ্ঞপ্তি নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে প্রতিক্রিয়া এসেছে- এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘গতকাল একটা মিটিং ছিল, সেখানে আমি যখন কথা বলছি... সচিবরা এবং অন্যান্য কর্মকর্তা যারা ছিলেন, তারা সবাই এ বিবৃতির সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছেন। এই ল্যাঙ্গুয়েজ হওয়া উচিত ছিল না। অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের যারা ছিলেন, তারাও অ্যাগ্রি করেছেন- এ ধরনের ভাষা ব্যবহার ভুল হয়েছে। এ ধরনের ভাষা ব্যবহার শোভনীয় নয়।’

১৮ আগস্ট রাতে বরিশালের সিঅ্যান্ডবি সড়কে উপজেলা পরিষদ কম্পাউন্ডে শোক দিবসের ব্যানার অপসারণকে কেন্দ্র করে পুলিশ ও আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের মধ্যে রাতভর সংঘর্ষ হয়। এ সময় ইউএনওর সরকারি বাসভবনেও হামলার অভিযোগ করা হয়। পরদিন মামলা হয়। মামলায় বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহকে হুকুমের আসামি করা হয়। ১৯ আগস্ট রাতে এ ঘটনায় প্রতিক্রিয়া জানায় বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন। অ্যাসোসিয়েশনের পাঠানো প্রেস রিলিজে জানানো হয়, ‘মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ ও তার দুর্বৃত্ত বাহিনী সিটি করপোরেশনের কর্মচারীদের দিয়ে নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে এবং সব জেলায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন এমন কার্যকলাপের তীব্র নিন্দা জানায় এবং বরিশালের মেয়র, যার অত্যাচারে বরিশালবাসী অতিষ্ঠ, সেই সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর হুকুমেই এ ঘটনা সংঘটিত হয়েছে বলে তারা মনে করেন। অতএব অ্যাসোসিয়েশন অবিলম্বে তার গ্রেফতার দাবি করছে এবং তার বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য অঙ্গীকার ব্যক্ত করছে।’

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার বিষয়ে বৈঠকে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না- জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘এর আগে সচিব সভায় নির্দেশনা দিয়ে দেওয়া হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আজকেও কথা হয়েছে। তারা প্রোগ্রাম ঠিক করছে- কীভাবে, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব...তারা আপনাদের সঙ্গে ব্রিফিংয়ে বসবে। পাবলিকলি বলে দেবে (কবে থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলছে)।’

করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে গত বছর ১৭ মার্চ থেকে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ আছে। সরকারের সর্বশেষ ঘোষণা অনুযায়ী এ ছুটি আছে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত। দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার কারণে দেশের প্রায় চার কোটি শিক্ষার্থীর পড়াশোনা মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়েছে। পরীক্ষাগুলো বাতিল বা পিছিয়ে যাচ্ছে। করোনার এমন বাস্তবতায় বিকল্প উপায়ে টিভি, অনলাইন, অ্যাসাইনমেন্টসহ বিভিন্নভাবে শিক্ষার্থীদের সক্রিয় রাখার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

বিচারপতিদের ভ্রমণভাতা বাড়ছে : বিচারপতিদের ভ্রমণভাতা বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ জন্য ‘বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের বিচারক (ভ্রমণভাতা) আইন, ২০২১’-এর খসড়ার নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। গতকাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার ভার্চুয়াল বৈঠকে এ অনুমোদন দেওয়া হয়। গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রী ও সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীরা বৈঠকে যোগ দেন। বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম এক সংবাদ সম্মেলনে এ অনুমোদনের কথা জানান। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এটাও ১৯৭৬ সালের অধ্যাদেশ ছিল। এটাতেও নতুন কোনো বিধান অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি, আগে যেটা ছিল সে অনুযায়ীই ১০টি ধারা আছে। শুধু ছোটখাটো অ্যামেন্ডমেন্ট (সংশোধন) হয়েছে। যেমন- আগে বোধহয় দৈনিক ভাতা ৫০০ বা সাড়ে ৫০০ টাকা ছিল, সেখানে ১ হাজার ৪০০ টাকা করা হয়েছে। গাড়ি ভাড়া প্রতি কিলোমিটারে ১ টাকার কিছু বেশি ছিল, সেটাকে ৩ টাকা করা হয়েছে।

খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, বৈঠকে ‘বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের বিচারক (বেতন এবং সুবিধাদি) আইন, ২০২১’-এর খসড়াও নীতিগত এবং চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। ২০১৩ সালে কোর্টের রায় ছিল, সামরিক শাসনের যে অধ্যাদেশগুলো, সেগুলো আইনে পরিণত করা, এটা বাস্তবে সেটাই। এটাকে ইংরেজি থেকে বাংলায় নিয়ে আসা হয়েছে। সে জন্য এটা ক্যাবিনেট একেবারে অনুমোদন দিয়েছে। এরপর পার্লামেন্টে যাবে। আগের অধ্যাদেশকে বাংলায় রূপান্তর করে নতুন আইন করা হচ্ছে। আইন মন্ত্রণালয়ের সার্কুলারের আলোকে সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের কুক ও সিকিউরিটি ভাতা হিসেবে মাসে ১৬ হাজার টাকা করে দেওয়া হতো। এটিকে প্রস্তাবিত আইনে যুক্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া আইন মন্ত্রণালয়ের আরেকটি সার্কুলারের আলোকে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের নিয়ামক ভাতা হিসেবে ১২ হাজার টাকা করে দেওয়া হতো। এখন এটিকে প্রস্তাবিত আইনে যুক্ত করে হাই কোর্ট বিভাগের বিচারপতিদের জন্য ৫ হাজার টাকা, আপিল বিভাগের বিচারপতিদের জন্য ৮ হাজার এবং প্রধান বিচারপতির জন্য ২৫ হাজার টাকা নিয়ামক ভাতা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে।

বৈঠকে বার কাউন্সিল অধ্যাদেশকে আইনে রূপান্তর করতে ‘বাংলাদেশ লিগ্যাল প্র্যাকটিশনার্স অ্যান্ড বার কাউন্সিল (সংশোধন) আইন, ২০২১’-এর খসড়া অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, কিছু দিন আগে বার কাউন্সিলের অধ্যাদেশ করা হয়েছিল, কারণ যদি কোনো কারণে (বার কাউন্সিলের মেয়াদ) টাইম ওভার হয়ে যায় তখন কী করবে, সেটার কোনো বিধিবিধান ছিল না। সে জন্য বার কাউন্সিল অধ্যাদেশ হিসেবে এটি নিয়ে আসা হয়েছিল। পার্লামেন্ট শুরু হলে অধ্যাদেশ এক মাসের মধ্যে আইনে পরিণত করতে হয়, নইলে সেটা বাদ হয়ে যায়। সে জন্য তারা এটা নিয়ে এসেছে। সেটা ক্যাবিনেট অনুমোদন করেছে। আসন্ন সংসদ অধিবেশন চলাকালীন এটাকে অনুমোদন করে ফেলতে হবে, নইলে বাতিল হয়ে যাবে। সে জন্য এটার ফাইনাল অনুমোদন দিয়ে দেওয়া হয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর