শিরোনাম
রবিবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা
বিবৃতি ৫৩ নাগরিকের

গ্রহণযোগ্য ইসি পেতে জরুরি ভিত্তিতে আইন করুন

নিজস্ব প্রতিবেদক

সংবিধানের আলোকে ‘আইনের বিধানাবলি-সাপেক্ষে’ পরবর্তী নির্বাচন কমিশন গঠনের আহ্‌বান জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন দেশের ৫৩ জন বিশিষ্ট নাগরিক। এ ছাড়া ইসি নিয়োগে জরুরি ভিত্তিতে আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।

বিবৃতিদাতাদের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, সংবিধান প্রণয়ন কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এম. হাফিজউদ্দিন খান, ড. আকবর আলি খান ও রাশেদা কে চৌধুরী, সুপ্রিম কোর্টের সাবেক বিচারপতি আবদুল মতিন, সাবেক নির্বাচন কমিশনার ড. এম. সাখাওয়াত হোসেন, সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ, সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব আবু আলম শহীদ খান, অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)-এর নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ, ড. শাহদীন মালিক, ব্রতীর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন মুরশিদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আসিফ নজরুল ও অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রংসহ বিভিন্ন পেশার ব্যক্তি রয়েছেন। বিবৃতিদাতারা বলেছেন, বিগত দুই নির্বাচন কমিশন পক্ষপাতদুষ্ট আচরণের মাধ্যমে নির্বাচনব্যবস্থা ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিয়েছে। যার ফলে জনগণের মধ্যে নির্বাচন কমিশনের ওপর ব্যাপক অনাস্থা ও সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যাপারে তীব্র শঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। গতকাল এক যৌথ বিবৃতিতে নাগরিকরা বলেছেন, বাংলাদেশের সংবিধানের ১১৮(১) অনুচ্ছেদে বলা আছে, ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অনধিক চারজন নির্বাচন কমিশনারকে লইয়া বাংলাদেশের একটি নির্বাচন কমিশন থাকিবে এবং উক্ত বিষয়ে প্রণীত কোনো আইনের বিধানাবলি-সাপেক্ষে রাষ্ট্রপতি প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে এবং অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারকে নিয়োগদান করিবেন।’ বিবৃতিতে বলা হয়, সংবিধানে সুস্পষ্টভাবে ‘আইনের বিধানাবলি-সাপেক্ষে’ নির্বাচন কমিশনে নিয়োগ প্রদানের নির্দেশনা থাকলেও গত ৫০ বছরে কোনো সরকারই এমন একটি আইন প্রণয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। গত দুটি নির্বাচন কমিশন নিয়োগের আগে রাষ্ট্রপতি বর্তমান প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে দুটি অনুসন্ধান কমিটি গঠন করেন। বিশিষ্টজনেরা বলছেন, ‘অ্যাডহক ভিত্তিতে সৃষ্ট ওই দুটি অনুসন্ধান কমিটির সুপারিশে গঠিত রকিব উদ্দিন কমিশন ও নূরুল হুদা কমিশন তাঁদের চরম পক্ষপাতদুষ্ট আচরণের মাধ্যমে আমাদের নির্বাচনব্যবস্থা ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিয়েছে, যার ফলে জনগণের মধ্যে নির্বাচন কমিশনের ওপর ব্যাপক অনাস্থা এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যাপারে তীব্র শঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে।’ বর্তমান নূরুল হুদা কমিশনের মেয়াদ ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে শেষ হবে। বিবৃতিতে বলা হয়, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের উদ্যোগ এখনই শুরু করতে হবে, যার প্রাথমিক পদক্ষেপ হবে সাংবিধানিক নির্দেশনা অনুযায়ী প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অনধিক চারজন নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের লক্ষ্যে একটি আইন প্রণয়ন। এ বিষয়ে দ্রুত উদ্যোগ নেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন বিবৃতিদাতারা। তাঁরা বলেছেন, এ আইন প্রণয়ন করতে হবে যাতে নির্বাচন কমিশন ‘স্বাধীনভাবে ও সম্পূর্ণ প্রভাবমুক্ত’ থেকে নির্বাচন পরিচালনার ক্ষেত্রে সব ধরনের আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে। একই সঙ্গে নির্বাচনকালে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যাতে নিরপেক্ষতার ভিত্তিতে দায়িত্ব পালন করতে পারে সে বিষয়ে সংস্কার পদক্ষেপের কথা এখন থেকে ভাবতে অনুরোধ জানান তারা। বিবৃতিতে ৫৩ নাগরিক বলেছেন, ‘প্রস্তাবিত আইনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অন্য কমিশনারদের যোগ্যতার মাপকাঠি নির্ধারণ করতেও একটি অনুসন্ধান কমিটি গঠনের বিধান রাখতে হবে। এ অনুসন্ধান কমিটি দলনিরপেক্ষ ব্যক্তিদের নিয়ে গঠিত হতে হবে যাতে সব নির্বাচনী অংশীজনের কাছে এটি গ্রহণযোগ্যতা পায়। গঠিত অনুসন্ধান কমিটির দায়িত্ব হবে স্বচ্ছতার ভিত্তিতে আইনে বিধৃত যোগ্যতার মানদন্ডের আলোকে কিছু সৎ, নির্দলীয় ও গ্রহণযোগ্য ব্যক্তির একটি প্যানেল নির্বাচন কমিশনে নিয়োগ প্রদানের জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ করা। স্বচ্ছতার অংশ হিসেবে কোন কোন ব্যক্তিকে নির্বাচন কমিশনে নিয়োগের জন্য অনুসন্ধান কমিটি প্রাথমিকভাবে বিবেচনা করছে, তাদের নাম প্রকাশ ও গণশুনানির আয়োজন করা এবং কোন যোগ্যতার ভিত্তিতে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রেরণের জন্য সেসব নাম চূড়ান্ত করা হয়েছে তার একটি প্রতিবেদন জনসম্মুখে প্রকাশ করার বিধান আইনে রাখতে হবে।’ নাগরিকরা আশা প্রকাশ করে বলেছেন, ‘সঠিক ব্যক্তিদের’ নিয়ে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের লক্ষ্যে সরকারের নির্দেশক্রমে আইন মন্ত্রণালয় একটি আইন প্রণয়নের উদ্যোগ জরুরি ভিত্তিতে গ্রহণ করবে। নাগরিক হিসেবে মতামত প্রদানের মাধ্যমে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদানের কথাও জানিয়েছেন তাঁরা।

সর্বশেষ খবর