মঙ্গলবার, ১২ অক্টোবর, ২০২১ ০০:০০ টা

মিয়ানমার নিয়ে বাড়তি সতর্কতা

নতুন করে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে ও ক্যাম্পগুলোর নিরাপত্তা বাড়াতে জোর প্রস্তুতি

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

মিয়ানমারের দুই রাজ্যে অস্থিতিশীলতা ও সেনা মোতায়েনের পরিস্থিতিতে বাড়তি সতর্কতা নিয়েছে সরকার। নতুন করে মিয়ানমারের নাগরিকদের অনুপ্রবেশ ঠেকানোর প্রস্তুতিও নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি কক্সবাজারের ক্যাম্পগুলোর সাম্প্রতিক সংঘবদ্ধ নাশকতা ও নতুন ধরনের মাদক পাচারের প্রমাণ হাতে আসাতেও নেওয়া হয়েছে বাড়তি সতর্কতা। ক্যাম্পগুলোর নিরাপত্তা বাড়ানোর পাশাপাশি সীমান্তেও কড়া নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বাংলাদেশের বান্দরবানের ওপারে মিয়ানমার সীমান্তের কানপ্লেট ও হাকা শহরে ভারী অস্ত্রসহ সেনা মোতায়েন করেছে দেশটির সামরিক সরকার। সেখানে বসতি ধ্বংস ও নির্যাতনের কথা উল্লেখ করেছে জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থা ইউএনএইচআর। এক বিবৃতিতে ইউএনএইচআর বলেছে, গত এক মাস ধরে কানপ্লেট ও হাকাতে নিরস্ত্র বসতিদের ওপর নির্যাতন ও গুলি চালিয়েছে মিয়ানমারে সেনাবাহিনী। কেটে দেওয়া হয়েছে ইন্টারনেট। এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সতর্ক অবস্থান নিয়েছে বাংলাদেশ।

রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ হত্যাকান্ডের পর দুই দিনের কক্সবাজার সফর করে ঢাকা এসে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন জানিয়েছেন, সীমান্তে টহল বাড়ানো হয়েছে। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের সক্ষমতাও বাড়ানো হয়েছে। পাশাপাশি অন্যান্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে। যে কোনো ধরনের পরিস্থিতি দেখা দিলেই সেখানে ব্যবস্থা নেবে বিজিবি। আমরা চাই না, মিয়ানমার সীমান্ত নিয়ে নতুন করে কোনো অনুপ্রবেশের ঢল নামুক। এ জন্য আমরা কঠোর অবস্থানে থাকব। পাশাপাশি কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে কাঁটা তারের বেড়া ও সার্চলাইট বসানোর কাজ দ্রুত শেষ করতে বলা হয়েছে। তিনি বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে নতুন করে মাদকদ্রব্য ইয়াবার পাশাপাশি আইসের চালানও নাকি উদ্ধার হয়েছে। এটা আমাদের জন্য দুশ্চিন্তার বিষয়। এ কারণে নিরাপত্তা পরিস্থিতির ওপর আরও সজাগ দৃষ্টি থাকা প্রয়োজন। মাসুদ বিন মোমেন জানান, জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থাসহ সংশ্লিষ্ট অন্যদের সঙ্গে সমন্বয় আরও বাড়ানো দরকার। এ জন্য রোহিঙ্গাবিষয়ক জাতীয় টাস্কফোর্সের পরের বৈঠকটি কক্সবাজারে করার পরিকল্পনা রয়েছে। যাতে বৈঠকের পরপরই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া যায়।

সচিব জানান, ক্যাম্পের মুহিবুল্লাহর পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে কথা হয়েছে। তারা আতঙ্কিত অবস্থায় আছে। তাদের নিরাপত্তা নিয়ে সংশয়ের কথা বলেছে। আমরা তাদের নিরাপত্তা বাড়ানোর কথা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও জাতিসংঘের কর্মকর্তাদের বলেছি। তিনি বলেন, খুন-খারাবি করে প্রত্যাবাসন ঠেকানো যাবে না। কারণ বেশির ভাগ রোহিঙ্গাই ফেরত যেতে চায়। শুধু যারা ক্যাম্পে থেকে বিভিন্নভাবে লাভবান হচ্ছে তারাই হয়তো চাইবে না প্রত্যাবাসন হোক। তবে প্রত্যাবাসন নিয়ে আলোচনা করছেন দুই দেশের রাষ্ট্রদূত। শিগগিরই দুই দেশের মধ্যে বৈঠকও হতে পারে বলে জানান পররাষ্ট্র সচিব।

মিয়ানমারে সোচ্চার জাতীয় ঐক্যের সরকার : মিয়ানমারে গত ১ ফেব্রুয়ারি অং সান সু চির নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে দেশটির জেনারেল মিন অং হ্লাইংয়ের নেতৃত্বাধীন সামরিক বাহিনী। এরপর অভ্যুত্থানবিরোধী এবং নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা ১৬ এপ্রিল সু চিকে স্টেট কাউন্সিলর করে জাতীয় ঐক্যের সরকার গঠন করেন। এ সরকার মূলত দেশের সীমান্তবর্তী এলাকায় এবং নির্বাসিত থেকে কাজ করছে। বিদ্রোহী পক্ষের বরাতে রেডিও ফ্রি এশিয়ার খবরে বলা হয়েছে, শুধু সেপ্টেম্বর মাসে সেনাবাহিনীর সঙ্গে জাতীয় ঐক্যের সরকার (এনইউজি) বাহিনীর ১৩২টি লড়াইয়ের ঘটনা ঘটেছে। মিয়ানমারের সেনা সদস্যদের মধ্যে প্রাণহানি বেড়েছে। সেপ্টেম্বরে জান্তা ১২০টি টাওয়ার থেকে সরে যেতে বাধ্য হয়েছে। শুধু গত মাসেই দেশটির সেনাবাহিনীর ১ হাজার ৫৬০ জন সেনা নিহত হয়েছে, আহত হয়েছে ৫৫২ জন। তবে জান্তা সরকারের মুখপাত্র জাও মিন তু জাতীয় ঐক্যের সরকারের এমন দাবি নাকচ করে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, যদি এত সংখ্যক সেনা সদস্য নিহত হতো, তাহলে দেশ পরিচালনার মতো কেউ থাকত না।

সর্বশেষ খবর