শিরোনাম
শনিবার, ২৩ অক্টোবর, ২০২১ ০০:০০ টা

গোয়েবলস বেঁচে থাকলে লজ্জা পেতেন

অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী

গোয়েবলস বেঁচে থাকলে লজ্জা পেতেন

আমি সম্প্রতি আমার পারিবারিক একটি শিশুর চিকিৎসা-সংক্রান্ত বিষয়ে আমেরিকা এবং ব্রিটেন মিলে প্রায় পাঁচ সপ্তাহ বাইরে থেকে দেশে ফিরেছি। এই সময় আমি কতগুলো জিনিস বিদেশে থাকার সময় লক্ষ্য করেছি। সেই বিষয়গুলো আমাকে খুব নাড়া দিয়েছে এবং বিষয়গুলো নিয়ে বিশেষ করে সৈয়দ বোরহান কবীর অনেক লেখা লিখেছেন। কিন্তু  আমি নিজে আমার নিজস্ব অনুভূতিতে প্রথম আমেরিকার কথায় আসি। যদি আমেরিকায় না যেতাম তাহলে অতটা ভালোভাবে বুঝতে পারতাম না। সবাই জানেন, বিশেষ করে যারা বাংলা ইনসাইডারের নিয়মিত পাঠক তারা ভালোভাবেই জানেন যে, আমেরিকা, কানাডা এবং ইউরোপে- এ তিনটি জায়গায়ই এবং ইউকেতে লন্ডনে বসে তারা এখন সাইবার যুদ্ধ শুরু করেছে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে। আওয়ামী লীগ ঠিক বললেও এটা ভাসা ভাসা বলা হয়। আসলে তাদের টার্গেট হচ্ছেন রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা। যার জন্য আজ হিটলারের সেই মন্ত্রী গোয়েবলস যদি বেঁচে থাকতেন তিনি লজ্জা পেতেন। কেননা তার গোয়েবলসীয় সত্যের সঙ্গে মিথ্যা মিশিয়ে এমনভাবে প্রচার করতেন যে লোকে ওই মিথ্যাটাকে বিশ্বাস করত। কিন্তু এরা সোজাসুজি মিথ্যাটাকেই খুব সুন্দরভাবে পরিবেশনা করে এবং ক্রমাগতভাবে জনগণকে বারবার জানাচ্ছে।

প্রত্যেকটা জিনিস দেখলে বোঝা যায়, এটা একটা নির্দিষ্ট ছক এঁকে করা হচ্ছে, একটা রোডম্যাপ এঁকে করা হচ্ছে এবং এই রোডম্যাপের টার্গেট জননেত্রী শেখ হাসিনা এবং টার্গেট পরবর্তী নির্বাচন পর্যন্ত। এ কাজটি তারা তাদের দৃষ্টি থেকে আমি দেখলাম অত্যন্ত নিখুঁতভাবে করছে। আর আমাদের অনেকেই আমেরিকায় আছে। তাদের দুর্দিনের সময় নেত্রীর জন্য, আওয়ামী লীগের জন্য অনেক অবদান আছে এটা ঠিক। এর মধ্যে অর্থনৈতিক দিক থেকেও এরা ভালো অবস্থানে আছে। অনেকে এসে যে বাংলাদেশে পাওয়ার প্লান্ট এনেছে আমি সেগুলার উদাহরণ আনতে চাই না। কারণ এমনিতেও তাদের অনেক টাকা। কিন্তু দুঃখজনক হলো যেভাবে নেত্রীকে আক্রমণ করা হচ্ছে, আমাদের এত লোক থাকা সত্ত্বেও তারা বড় বড় কথা বলে কিন্তু আমেরিকাতে সেভাবে একটা অর্গানাইজড ওয়েতে এর উত্তর দেওয়ার জন্য সামান্য কোনো প্রচেষ্টা আমার চোখে পড়েনি। বুঝতে হবে যে, যারা বিদেশে থাকে যতই আমরা বলি না কেন এরা মিথ্যা হলেও তাদের কিছু লোক এই মিথ্যাকে বিশ্বাস করে। তাদের সংখ্যা হয়তো বেশি না, কিন্তু এই তাদের মিথ্যাকে যে বিশ্বাস করে তাদের আত্মীয়-স্বজন ঢাকা, বাংলাদেশে আছে। তারা বাংলাদেশেও আসে। সুতরাং কিছু লোক হলেও তারা কিন্তু আস্তে আস্তে অন্তত এটাকে প্রচারের ফলে একটা কনফিউশনে পড়ে যায়। অথচ এ জন্য আমরা একটা ছক এঁকে এবং কিছু লোককে ভালো করে দায়িত্ব দিয়ে প্রয়োজনে তাদের অর্থনৈতিক সহযোগিতা করে সবাই মিলে এটাকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ওইখান থেকে উত্তরণের ব্যবস্থা করতে হবে। কারণ, না হলে এমনিতেই আমি নিজেই বিশ্বাস করি যে আওয়ামী লীগের প্রচার সেল অত্যন্ত দুর্বল। এখানে মন্ত্রী হলেও প্রচারের ব্যাপারে আমাদের আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ যথেষ্ট সক্রিয় এবং তার সঙ্গে আরও কয়েকজন আছেন। তাছাড়া মোটামুটি অনেকেই রাজনীতি বেশ ভালো বোঝেন। অনেকের অতীত ইতিহাস অত্যন্ত ভালো। অথচ তারা সেভাবে আওয়ামী লীগের পক্ষে যুক্তিপূর্ণভাবে কোনো বক্তব্য দেন না। এমনকি যারা মন্ত্রী বা দলের লোক যে রকম বাহাউদ্দিন নাছিম, নানক এরা অন্তত বাংলা ইনসাইডারে মাঝে মাঝে লেখেন। এই যে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় সব জায়গায় মন্ত্রী এবং দলের যারা তারা তো ভালো লিখতে পারেন। কমিউনিস্ট পার্টি থেকে অনেক লোককে আওয়ামী লীগে নেত্রী স্থান দিয়েছেন এবং আমি বিশ্বাস করি যে উনি দিয়েছেন যে তারা লেখাপড়া জানা এবং এরা আওয়ামী লীগের দুর্দিনেও অবদান রাখবেন। কিন্তু এই সময় যারা আমাদের কমিউনিস্ট ভাইরা আওয়ামী লীগে এসে এখনো কমিউনিস্টের গন্ধ হয়তো শরীর থেকে সরাতে পারেননি তাদের সে রকম কোনো কাজকর্ম অন্তত আমার চোখে পড়ছে না। যারা এ রকম আর্টিকেল লিখত তাদের ভাবখানা এই যে নেত্রীর যেন একাই দায়িত্ব, তিনিই সবকিছু করবেন। তিনি দায়িত্ব এবং সবকিছু করছেন কিন্তু তাকে তো সাহায্য করার জন্য আমাদের সবার সামান্য হলেও অবদান রাখা প্রয়োজন। সেটা রাখা হচ্ছে না।

সুতরাং আমি প্রথম যেটা আমেরিকার ব্যাপারে বললাম এটা ব্রিটেনের ব্যাপারে, কানাডার ব্যাপারে, সব জায়গার ব্যাপারেই সত্য যে আজকাল আরেকটা কথা এর সঙ্গে বলে ফেলি যে সোশ্যাল মিডিয়া এখন খুব পাওয়ারফুল। এই সোশ্যাল মিডিয়ার জন্যই আওয়ামী লীগের আলাদা একটা সেল করা দরকার। এসব সেল লোককে জানিয়ে বিভিন্নভাবে প্রকাশ করে কমিটি করে দরকার নেই। নেত্রী নিজেই কাউকে দায়িত্ব দেবেন। যারা এসব ব্যাপারে অভিজ্ঞ এবং পারবেন তাদের মোটামুটি ফুলটাইম দায়িত্ব হবে শুধু সোশ্যাল মিডিয়ার ওপর লক্ষ্য রাখা। আরেকটি গ্রুপ থাকতে হবে যারা পত্রিকার ওপর নজর রাখবেন। এখানে কিন্তু শুধু লক্ষ্য রাখলে হবে না, সঙ্গে সঙ্গে তার উত্তরটাও দিতে হবে। যেমন- টকশোতে যতই বলি না, টকশোতে বড় বড় কথা চলবেই। ইলেকশন পর্যন্ত চলবে, পরেও চলবে। এর উত্তর হচ্ছে আমাদেরও কিছু লোক সেখানে গিয়ে যেমন অনেকে অংশগ্রহণ করে তারা বেশ ভালো বলে। আমাদের আওয়ামী লীগের যারাই টকশোতে গিয়ে অংশগ্রহণ করে আমি প্রায় সবারটাই শুনি এবং আমি মনে করি তাদের ক্ষমতার মধ্যে যথেষ্ট অবদান রাখেন এতে কোনো সন্দেহ নেই। এখন অনেক মিডিয়াকে আমি দেখেছি যে, টেলিভিশন মিডিয়ার কথায় আসি। নেত্রী নিজের হাতে যাদের অনুমতি দিয়েছেন তারা আলোচনায় এমন সব ব্যক্তিদের আনেন তারা কিছু থাকবেন নিরপেক্ষভাবে যারা সুশীল সমাজ হয়ে যান, আর কিছু কায়দা করে নেত্রীর বিরুদ্ধে বলেন। এখানে যে একটা আমাদের লোকজন যারা এটা ভালো করে বলতে পারবে এবং আছে তাদের কিন্তু অনেক মিডিয়া ডাকে না। তারা নতুন নতুন বিজ্ঞ সমাজ গড়ে তুলছেন। যেমন- প্রথম আলো এ দেশে সবাইকে বিজ্ঞ বানিয়েছে। তারাই সুশীল সমাজ হয়েছে, ঠিক একই পন্থা কিছু কিছু মিডিয়া গ্রহণ করেছে। কিন্তু একের পর এক আবার নতুন টেলিভিশন চ্যানেলও অনুমতি পাচ্ছে। আমি স্পষ্টভাবে বলতে চাই, আমি খুব সাধারণ মানুষ, আমি বুঝি না, আমার বুদ্ধিতে কুলায় না যে এসব এভাবে কেন হচ্ছে। এত বড় দল, এত বিজ্ঞ লোক অথচ একটি কাজ রোডম্যাপ অনুযায়ী কেন হবে না। না হওয়ার তো কোনো কারণ নেই। আর আমি যদি আমেরিকায় গিয়ে না দেখতাম এবং সাধারণ মুদিদোকানে আলাপ করেছি। যদিও আমেরিকাতে করোনা পরিস্থিতি আমাদের চেয়ে খারাপ, তবুও সেখানে তারা মাস্কও কেউ পরে না, না পরেই ঘুরে বেড়ায়। যদিও আমি যে কয়দিন ছিলাম, যে কাজে গিয়েছিলাম মাস্ক পরে সে কাজে যেতে হয়েছে। সব জায়গায় আলাপ করে দেখেছি যে সাধারণ লোকজনের ভিতরে কিছু কিন্তু ইনফ্লুয়েন্স হচ্ছে। এটা যদি অস্বীকার করেন আমার মনে হয় তিনি জিনিসটাকে গভীরভাবে দেখছেন না। সুতরাং এই যে সোশ্যাল মিডিয়া এবং এর সঙ্গে ইউটিউব সব মিলিয়ে তারা যে একটা সাইবার যুদ্ধ আমাদের বিরুদ্ধে শুরু করেছে এর বিরুদ্ধে অবিলম্বে আমাদের যারা এই জিনিসটা ভালো করে বোঝেন এবং করতে পারেন তাদের দিয়ে ব্যবস্থা নিতে হবে। সবাই শুধু নেত্রীর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকলে হবে না। সবারই তো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ক্ষমতা আছে। অনেকগুলো বাঁশের কঞ্চি যদি একসঙ্গে বাঁধা যায় তাহলে একটা বাঁশের চেয়ে সেটি শক্তিশালী হয়। তো সেই শক্তি আমাদের আছে। আমি নাম বললে দুঃখ পাবেন কারণ, তারা আমার কাছে যথেষ্ট বিজ্ঞ, এখন মন্ত্রণালয় চালান, যারা অনেক দিনের মন্ত্রী। প্রত্যেক পত্রিকা খুললেই পাবেন ২০০৯ সাল থেকে আজ পর্যন্ত একটি রাজনৈতিক বক্তব্য আওয়ামী লীগ বা নেত্রীর পক্ষে বা বঙ্গবন্ধুর পক্ষে সরাসরি বলতে শুনিনি। এটা আমি প্রমাণ দিয়ে বলতে পারব। প্রমাণ দেওয়া লাগবে না, কারণ আপনারা সবাই বিজ্ঞ, এটা সবাই জানেন, এই হচ্ছে আমাদের অবস্থা। সুতরাং আমার মনে হয় যে আমাদের এই জিনিসটির প্রতি খুব লক্ষ্য রাখা প্রয়োজন।

সর্বশেষ খবর