শনিবার, ৩০ অক্টোবর, ২০২১ ০০:০০ টা

স্বপ্নভঙ্গের ভেন্যু শারজাহ

শেষ পর্যন্ত হতাশার গল্প দিয়েই বাংলাদেশের বিশ্বকাপ স্বপ্ন ভঙ্গ হয়ে গেল। শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচে ৩ রানে হেরে গেলেন মাহমুদুল্লাহরা। শেষ ওভারে রুদ্ধশ্বাস জয় তুলে নিয়ে ক্যারিবীয়রা যেন বুঝিয়ে দিলেন টি-২০ আসলে তাদেরই ফরম্যাট। এখানে পাওয়ার হিটারদের জয়জয়কার। মহানাটকীয় ম্যাচে শেষ ওভারে জয়ের জন্য বাংলাদেশের দরকার ছিল ১৩ রান। কিন্তু বাংলাদেশ ৯ রানের বেশি করতে পারেনি। অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ নিজে উইকেটে থাকার পরও শেষ ওভারে কোনো বাউন্ডারিই হাঁকাতে পারলেন না। যেন ক্যাপ্টেনের চোখের সামনেই ডুবে গেল তার জাহাজ।

পাওয়ার প্লেতে কাল দুই দলই ছিল সমানে সমান। ২ উইকেট হারিয়ে ২৯ রান। কিন্তু স্লগ ওভারেই যেন ব্যবধানটা অন্যরকম হয়ে গেল। যেখানে শেষের ৫ ওভারে ওয়েস্ট ইন্ডিজ করেছে ৫৮ রান। সেখানে শেষ ৫ ওভারে বাংলাদেশের জয়ের জন্য দরকার ছিল ৪৪ রান। হাতে ছিল ৬ উইকেট। কিন্তু মাহমুুদুল্লাহরা পারলেন না। অবশ্য ১৯তম ওভারেই ম্যাচটা বাংলাদেশের গ্রিপে চলে আসত যদি না দীর্ঘকায় শরীরের জেসন হোল্ডার লং অনে লাফিয়ে লিটনের অবিশ্বাস্য ক্যাচটি লুফে না নিতেন। লিটন ৪৪ রান করে আউট হওয়ার পরও জয়ের সুযোগ ছিল। কিন্তু শেষ ওভারেই যেন সর্বনাশ হয়ে গেল। ১৪৩ রানের জয়ের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশের ইনিংস আটকে গেল ১৩৯-এ। এই হারে কার্যত বিশ্বকাপ থেকে বিদায়ঘণ্টা বেজে গেল মাহমুদুল্লাহদের। যদিও এখনো দুটি ম্যাচ বাকি। কিন্তু টানা তিন ম্যাচ হারার পর অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ম্যাচ দুটি হয়ে গেল এখন কেবলই আনুষ্ঠানিকতার। দিনের শুরুটা হয়েছিল খুবই দুর্দান্ত। ম্যাচের তৃতীয় ওভারেই ক্রিস গেইলকে সরাসরি বোল্ড করে তর্জনী উঁচিয়ে ড্রেসিংরুমের দিকে দৌড় দিলেন মেহেদী হাসান। তার পিছে পিছে দৌড়াচ্ছে পুরো দল। মরুভূমির আগুনঝরা রোদ উপেক্ষা করে গ্যালারিতে থাকা হাজারো বাংলাদেশি ভক্তের কণ্ঠে তখন যেন বাঘের গর্জন। তর্জনী উঁচিয়ে দাঁড়িয়ে পড়েছেন দর্শকরাও। উত্তাল স্টেডিয়ামের বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাসের এই ছবিটাই যেন ম্যাচের ‘প্রতীকী’ হতে পারত! কিন্তু শেষ ওভারের ব্যর্থতায় সব শেষ হয়ে গেল। 

বাংলাদেশের এই ম্যাচটি ব্যবচ্ছেদ করলে অনেক ভুলই সামনে চলে আসবে। আউট করার চার চারটি সুযোগ হাতছাড়া করার বিষয়টিও সামনে চলে আসবে। যেখানে একটি মিসেই ম্যাচ শেষ হয়ে যায় সেখানে ভুলের সমাহার। এই ভুলের কারণেই ১৫ ওভার শেষে ৫ উইকেট হারিয়ে ৮৪ রান করা ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইনিংসটা ১৪২ হয়েছিল। তারপর পাওয়ার হিটারের অভাবটি খুব ভালো করেই আরেকবার টের পেল লাল-সবুজরা। অবশ্য শেষ বলের আগে পর্যন্ত ম্যাচটি বাংলাদেশের হাতেই ছিল। কারণ, জয়ের জন্য শেষ ওভারে দরকার ছিল ১৩ রান। উইকেটে ছিলেন মাহমুদুল্লাহ। কিন্তু আন্দ্রে রাসেলের ইয়র্কারে সব শেষ হয়ে যায়।

কালকের ম্যাচে ছিল পরতে পরতে চমক। সবচেয়ে বড় চমক ছিল বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের ব্যাট হাতে ওপেনিংয়ে নামা। পাওয়ার প্লেতে ঠিকঠাক রান আসছে না। শুরু ভালো না হওয়ার কারণে পুরো ম্যাচই যেন গতি হারাচ্ছে। সে কারণেই কিনা উইন্ডিজের বিরুদ্ধে এ ম্যাচে ইনিংস ওপেন করতে নামেন সাকিব। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। সাকিব বদলে দিতে পারেননি রানের গতি। তবে কাল দুর্দান্ত বোলিং করেছেন পেসার তাসকিন আহমেদ। ৪ ওভারে তিনি দিয়েছেন মাত্র ১৭ রান। তবে আন্দ্রে রাসেলকে তিনি দর্শনীয়ভাবে রানআউট করেন। জেসন হোল্ডার স্ট্রেইট ড্রাইভ করেন দ্রুতগতির বলে তাসকিন ফলথ্রুর সময় পা স্পর্শ করে দেন। বল গিয়ে লাগে স্ট্যাম্পে, রাসেল ক্রিজের বাইরে থাকায় আউট হয়ে যান। কিন্তু তাসকিনের ওভার শেষ হওয়ার পরই যেন বদলে যায় উইন্ডিজ। মাত্র ২২ বলে ৪০ রানের ইনিংস খেলে ক্যারিবীয়দের স্কোরকে ১৪২-এ নিয়ে যান নিকোলাস পুরান। আগের দিন প্রেস কনফারেন্সে এই পুরান বলেছিলেন, যে কোনোভাবেই হোক তারা জিততে চান। কাল ক্যারিশম্যাটিক ইনিংস খেলে দলকে জিতিয়ে দিয়ে কথা রেখেছেন ক্যারিবীয় তারকা। কিন্তু নিজের কথা রাখতে পারলেন না টাইগার ক্যাপ্টেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। বিশ্বকাপের প্রথম রাউন্ডে মাহমুদুল্লাহ বলেছিলেন, তাদের হাতে পাওয়ার হিটার নেই তো কী হয়েছে, স্কিল হিটার দিয়ে সেই অভাব পূরণ করবেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পারলেন না। সেই পাওয়ার হিটারের অভাবেই বিশ্বকাপ স্বপ্ন শেষ হয়ে গেল। সুপার টুয়েলভের প্রথম ম্যাচে এই শারজাহতে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ১৭১ রান করে জিততে পারেনি, এবার ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে শেষ বলে হার। বাংলাদেশের কাছে শারজাহ এখন স্বপ্ন ভঙ্গের ভেন্যু।

সর্বশেষ খবর