রবিবার, ২১ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

ফতুল্লা আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম যেন বিশাল ডোবা

রোমান চৌধুরী সুমন, নারায়ণগঞ্জ

ফতুল্লা আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম যেন বিশাল ডোবা

ফতুল্লা স্টেডিয়ামে ময়লা আবর্জনা, ডোবায় পরিণত -বাংলাদেশ প্রতিদিন

নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় খান সাহেব ওসমান আলী আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম যেন বিশাল এক ডোবা- জলাভূমি। দূর থেকে যে কেউ বলবে- এটি খাল বা বিলের অংশ। আউটার স্টেডিয়াম থেকে শুরু করে মূল স্টেডিয়াম পানি আর কচুরিপানায় ভরা। কচুরিপানা আর কালো নোংরা পানির উৎকট দুর্গন্ধে টেকা দায়। আউটার স্টেডিয়ামের জলাবদ্ধতায় আটকে থাকা পানি চুইয়ে মূল স্টেডিয়ামের ভিতরে ঢুকে পড়ায় মাঠ পানির নিচে তলিয়ে যায়। জমে থাকা পানিতে জন্মেছে জলজ উদ্ভিদ। গেট পার হয়ে স্টেডিয়ামে যেতে হাঁটার রাস্তায় পানি। অনুশীলনের জায়গায়টিও পানির নিচে।

নারায়ণগঞ্জের ক্রীড়া সংশ্লিষ্টরা জানান, ফতুল্লায় খান সাহেব ওসমান আলী আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে দুটি আন্তর্জাতিক টেস্ট ও ১০টি ওয়ানডে ম্যাচসহ প্রিমিয়ার লিগের অনেক টুর্নামেন্ট গড়িয়েছে। স্থানীয়রা জানান, গত ছয় বছর ধরে এই স্টেডিয়ামে বেহাল অবস্থা বিরাজ করছে। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের মালিকানাধীন আন্তর্জাতিক মানের এই স্টেডিয়াম সংস্কারে কোনো উদ্যোগ নেই বলে অভিযোগ খেলোয়াড় ও সংগঠকদের। অযত্ন-অবহেলায় যেন এখন যে কোনো সময় পরিত্যক্ত ঘোষণা করার অপেক্ষায় রয়েছে। তবে কর্তৃপক্ষ বলছে, দ্রুতই মাঠের সংস্কার করে খেলার উপযোগী করতে কাজ চলছে। 

স্টেডিয়ামটির নির্মাণ ইতিহাস থেকে জানা যায়, ২০০০ সালের ১০ সেপ্টেম্বর বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই স্টেডিয়ামের উদ্বোধন করেন। ২০০৬ সালে বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়ার টেস্ট ম্যাচ দিয়ে আন্তর্জাতিক ভেন্যু হিসেবে যাত্রা শুরু করে স্টেডিয়ামটি। দুই টেস্ট এবং ১০টি ওয়ানডেসহ প্রিমিয়ার লিগের অনেক ম্যাচ হয়েছে এখানে। সবশেষ ২০১৫ সালে বাংলাদেশ-ওয়েস্ট ইন্ডিজ টেস্ট ম্যাচের পর আর কোনো আন্তর্জাতিক ম্যাচ মাঠটিতে হয়নি। সরজমিনে দেখা যায়, আউটার স্টেডিয়াম থেকে শুরু করে মূল স্টেডিয়ামে ভরা থই থই পানি আর কচুরিপানায়। মাঠটি ডিএনডি প্রজেক্টের ভিতরে থাকায় এবং ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড থেকে অনেক নিচু হওয়ায় সামান্য বৃষ্টিতেই তলিয়ে যায়। পাশের আউটার স্টেডিয়ামে বর্তমানে হাঁটু পানির নিচে। স্টেডিয়ামের দর্শক চেয়ারগুলো বিবর্ণ ও নষ্ট হওয়ার পথে। ২৫ হাজার দর্শকের ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন গ্যালারিতে বসার চেয়ার, ইলেকট্রনিক স্কোরবোর্ড, ভিআইপি গ্যালারি, সাংবাদিকদের বসার স্থান প্রেস বক্স, ক্রিকেটারদের ড্রেসিং রুম ও ওয়েটিংরুমসহ বাথরুম সবই ব্যবহারের অনুপযোগী হওয়ার পথে। হঠাৎ করে মূল রাস্তা থেকে দেখলে আন্তর্জাতিক স্টেডিয়াম না ভেবে বড় ধরনের জলাশয় ভেবে বসতে পারেন যে কেউ। স্টেডিয়ামের মূল মাঠে যেন ঘাসের চাষ করা হয়েছে। জেলা প্রশাসক ও জেলা ক্রীড়া সংস্থার (পদাধিকারে) সভাপতি মোস্তাইন বিল্লাহ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, স্টেডিয়ামটির মালিক মূলত জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ। এর উন্নয়নে ইতিমধ্যে বুয়েটের টিম নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়েছে। আমরা মাঠটির উন্নয়নে ক্রীড়া পরিষদে প্রস্তাব পাঠিয়েছি। কবে নাগাদ এর কাজ শুরু হবে, তা জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ বলতে পারবে। তবে মাঠের স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনতে মাস্টার প্ল্যান হচ্ছে তা জানতে পেরেছি। অর্থাৎ কাজ হবে এটি নিশ্চিত। বিসিবির নবনির্বাচিত পরিচালক ও নারায়ণগঞ্জ জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক তানভির আহমেদ টিটু বলেন, ‘স্টেডিয়ামটি পড়েছে ডিএনডি বাঁধের ভিতরে। বর্তমানে ডিএনডির অনেক এলাকা পানির নিচে। পুরো এলাকারই চিত্র এই স্টেডিয়াম। ডিএনডির কাজগুলো সম্পন্ন হলে তখন হয়তো চিরস্থায়ী সমাধানে আসা যাবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘যতটুকু জানি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড এবং জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ যৌথভাবে বুয়েটের মাধ্যমে জরিপ করেছে। বুয়েট এরই মধ্যে তাদের জরিপ প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। এখন জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের দায়িত্ব। তারা যেকোনো সময় কাজ শুরু করবে। জাতীয় ক্রীড়া সংস্থার সচিব পরিমল সিংহ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, ‘সাত দিন হয়েছে আমি যোগদান করেছি। পুরো বিষয়টি জানি না।’

সর্বশেষ খবর