বহুল আলোচিত-সমালোচিত ট্রাম্পের ‘বিগ বিউটিফুল বিল’ মাত্র চার ভোটের ব্যবধানে প্রতিনিধি পরিষদে পাসের পর তা যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতার দিবসে আইনে পরিণত হতে চলেছে। ৪ জুলাই অপরাহ্ণে (বাংলাদেশ সময় শনিবার ভোর) তা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প স্বাক্ষর করবেন বলে হোয়াইট হাউসের সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ট্রাম্প এ প্রসঙ্গে বলেন, এই বিল দেশকে রকেটের গতিতে এগিয়ে নেবে। এটা হতে যাচ্ছে আমেরিকার জন্য চমৎকার এক বিল। অন্যদিকে প্রতিনিধি পরিষদে বিরোধী দল ডেমোক্র্যাট নেতারা মন্তব্য করেছেন, এটা হবে খেটে খাওয়া মানুষের গলার কাঁটা। স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা ও গরিব মার্কিনিদের খাদ্য-সহায়তা কর্মসূচিতে কমবে বরাদ্দ। জ্যেষ্ঠ নাগরিকের সুযোগ-সুবিধাও কর্তন করবে। এভাবে ধনীদের আরও ধনী হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হবে। সীমান্তে দেয়াল নির্মাণসহ অভিবাসন-দমনের অভিযান জোরদারে বরাদ্দ বাড়বে। আরও ডিটেনশন সেন্টার নির্মাণের সুযোগ রয়েছে এই বিলে। কর ছাড় বাতিল হবে পরিচ্ছন্ন জ্বালানি প্রকল্পে। যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় দেনার সঙ্গে যুক্ত হবে আরও সাড়ে ৪ ট্রিলিয়ন ডলার।
মার্কিন কংগ্রেসে বাংলাদেশিসহ এশীয় আমেরিকানদের স্বার্থ ও অধিকার নিয়ে কর্মরত কংগ্রেসে এশিয়ান প্যাসিফিক আমেরিকান ককাসের চেয়ারপারসন কংগ্রেসওম্যান গ্রেস মেং ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে প্রদত্ত এক বিবৃতিতে দিয়েছেন। বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, এই নয়া বিধি কার্যকর হলে নিম্ন ও মাঝারি আয়ের বাংলাদেশি মার্কিনিসহ ৪৫ লাখ এশীয় চিকিৎসাসেবার সুযোগ হারাবেন। প্রতি চারজন বাংলাদেশিসহ এশীয়দের একজনই পুষ্টিকর খাদ্য ক্রয়ে সরকারি বরাদ্দ হারাবেন ২৫ ভাগ। নিউইয়র্কের বাংলাদেশি ও চীনা অধ্যুষিত এলাকা থেকে নির্বাচিত কংগ্রেসওম্যান (ডেমোক্র্যাট) গ্রেস মেং উল্লেখ করেছেন, আমেরিকার ইতিহাসে নিকৃষ্টতম এবং অমানবিক একটি বিধি তৈরির বিল পাস করলেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের রিপাবলিকানরা। এর ফলে ১৭ মিলিয়ন আমেরিকান (১ কোটি ৭০ লাখ) হারাবেন বিনামূল্যের চিকিৎসাসেবা। এ ছাড়া শিশু-জ্যেষ্ঠ সিটিজেনসহ যুদ্ধ ফেরত লাখ লাখ মার্কিনি পুষ্টিকর খাদ্য কেনার সহায়তা হারাবেন। এই বিধির পরিপ্রেক্ষিতে জাতীয় দেনার পরিমাণ বাড়বে সাড়ে ৪ ট্রিলিয়ন ডলারের মতো। আর লাভবান হবেন ইলন মাস্কের মতো ট্রাম্পের ধনাঢ্য বন্ধুরা। গ্রেস মেং বলেছেন, ধনীদের স্বার্থে গরিব মার্কিনিদের এভাবে জিম্মি করার বিলে ভোট প্রদানকারী রিপাবলিকানদের লজ্জিত হওয়া উচিত। মার্কিনিরা এহেন নিষ্ঠুর আচরণের জবাব অবশ্যই সামনের বছরের মধ্যবর্তী নির্বাচনে রিপাবলিকানদের দেবে। উল্লেখ্য, কর ছাড় ও বিপুল ব্যয়ের লক্ষ্যে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের আকাঙ্ক্ষিত ‘বিগ বিউটিফুল বিল’ কংগ্রেসে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের মুখোমুখি হলেও শেষ পর্যন্ত সামান্য ব্যবধানে উৎরে গেছে। ক্যাপিটল হিলে তুমুল বাদানুবাদ চলা অধিবেশনের পর প্রতিনিধি পরিষদে বৃহস্পতিবার বিকালে ২১৮-২১৪ ভোটে বিলটি পাস হয়। মঙ্গলবার একই বিল উচ্চকক্ষ সিনেটে মাত্র ১ ভোটের ব্যবধানে গৃহীত হয়েছিল। কংগ্রেসের বাজেট দপ্তরের অনুমান, এই বিলের কারণে পরবর্তী ১০ বছরে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল বাজেট ঘাটতি আরও ৩ দশমিক ৩০ ডলার বাড়বে এবং কোটি কোটি মানুষ স্বাস্থ্যসেবার আওতার বাইরে চলে যাবে। তবে হোয়াইট হাউস এই পূর্বানুমানের সঙ্গে একমত নয়। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ট্রাম্প দাবি করেন, এই বিল ‘দেশকে রকেটের গতিতে এগিয়ে নেবে। এটা হতে যাচ্ছে এই দেশের জন্য চমৎকার এক বিল’। ট্রাম্প শুক্রবার স্থানীয় সময় বিকাল ৫টার দিকে বিলে স্বাক্ষর করে একে আইনে পরিণত করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। সূত্রগুলো জানায়, এর আগেই ট্রাম্প এমন প্রত্যাশার কথা জানিয়েছিলেন যে, বিগ বিউটিফুল বিলটি আইনে পরিণত করা হবে স্বাধীনতা দিবসের আমেজে। কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদে ভোটের পর রিপাবলিকান স্পিকার মাইক জনসন উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যানদের ধন্যবাদ দিয়েছেন। ভোটের আগে তাকে টেক্সাসের চিপ রয়ের মতো অনেক রিপাবলিকান আইনপ্রণেতার মন জয় করতে হয়েছে। সিনেটে পাস হওয়ার পর চিপ রয় বিলটিকে ‘প্রহসন’ অ্যাখ্যা দিয়েছিলেন। কিন্তু পরে নিম্নকক্ষে ভোট শুরু হওয়ার পর মত বদলান। দিন কয়েক আগেও তার মতো অনেক রিপাবলিকানই বিলের বিরোধিতা করেছিলেন। শেষ পর্যন্ত বিলটির বিপক্ষে ভোট দেন কেবল থমাস মেসি ও ব্রায়ান ফিজপ্যাট্রিক। এরা দুজনই রিপাবলিকান। বিলটি চার ভোটের ব্যবধানে পাস হয়েছে- জনসন এই ঘোষণা দেওয়ার পরপরই ডজনের বেশি রিপাবলিকান আইনপ্রণেতা হাউসের ফ্লোরে জড়ো হয়ে ‘ইউএসএ, ইউএসএ’ স্লোগান দিতে থাকেন।
বিলটি ২০১৭ সালে ট্রাম্প যে কর ছাড় দিয়েছিলেন, এ বিলের মাধ্যমে সেই ছাড় স্থায়ী হবে। পাশাপাশি বখশিশ, ওভারটাইম ও সামাজিক নিরাপত্তা খাতের সুবিধাভোগীদের পাওয়া অর্থে কর প্রত্যাহার হবে। এই দুইয়ের কারণে পরবর্তী ১০ বছরে ফেডারেল সরকারের আয় কমবে প্রায় সাড়ে ৪ ট্রিলিয়ন ডলার। বিলটি আইনে পরিণত হওয়ার পর ট্রাম্প সীমান্ত নিরাপত্তা, আটক কেন্দ্র ও অভিবাসন নীতি কার্যকরের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের পেছনে প্রায় ১৫ বিলিয়ন ডলার খরচের সুযোগ পাবেন। সামরিক খাতে খরচ হবে আরও ১৫ বিলিয়ন ডলার, যার মধ্যে আছে প্রেসিডেন্টের বহুল আকাঙ্ক্ষিত ‘গোল্ডেন ডোম’ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা কর্মসূচি।