শনিবার, ২৭ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা
কুমিল্লায় কাউন্সিলর হত্যা

বিদেশি পিস্তল দিয়ে গুলি, খুনিদের হাতে ছিল মেশিনগানও

মহিউদ্দিন মোল্লা, কুমিল্লা

কুমিল্লায় চাঞ্চল্যকর কাউন্সিলর সৈয়দ মোহাম্মদ সোহেল ও আওয়ামী লীগ নেতা হরিপদ সাহা জোড়া খুনে বিদেশি মডেলের পিস্তল ব্যবহার করা হয়েছে। এ ছাড়া খুনিদের নিরাপত্তায় ঘটনাস্থলের বাইরে আতঙ্ক ছড়াতে হালকা মেশিনগান (এলজি) ব্যবহার করা হয় বলে ধারণা করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।  

নাম না প্রকাশ করার শর্তে কুমিল্লা জেলা পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, কাউন্সিলর সোহেলের গায়ে বিদ্ধ বুলেট দেখে মনে হয়েছে এগুলো ৭.৬৫ কিংবা ৭.৬২ মডেলের পিস্তলের। সাধারণত টার্গেটকে ২০০ গজ পর্যন্ত দূর থেকে কুপোকাত করতে এ মডেল পিস্তল ব্যবহার করা হয়। ঘটনার সময় উপস্থিত সুজানগরের যুবক ইমদাদুল হক  প্রিতুল বলেন, ‘সোমবার বিকাল ৪টার দিকে হঠাৎ করেই সন্ত্রাসীরা সোহেল মামার অফিসে গুলি করতে করতে ঢোকে। বাইরে দুজন ও ভিতরে ছিল তিন/চারজন। সবার হাতে পিস্তল ছিল। এ সময় তারা কাউন্সিলর সোহেল মামাকে লক্ষ্য করে এক বা দুই হাত দূর থেকে ৮/১০ রাউন্ড গুলি ছোড়ে। আর আমরা যারা অফিসে ছিলাম তাদের ওপর এলোপাতাড়ি গুলি ছোড়ে। এ সময় আমরা প্রতিহত করতে গেলে তারা আমাদের লক্ষ্য করে বৃষ্টির মতো গুলি ছোড়ে।’ গুলিবিদ্ধ কাউন্সিলরের ঘনিষ্ঠজন মাজেদুল হক বাদল জানান,  ‘সন্ত্রাসীরা যেসব পিস্তল ব্যবহার করেছে তা দেখে মনে হলো এগুলো অত্যাধুনিক। তারা যখন কাউন্সিলর সোহেলকে লক্ষ্য করে গুলি করে তখন আমি বাধা দেই। তখন তারা আমাকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। যা আমার ডান পায়ে লাগে। আমি তখন মরার মতো ভান করে মাটিয়ে শুয়ে থাকি। তারা আমাকে মৃত ভেবে চলে যায়।’ এদিকে ঘটনার পরে কাউন্সিলর সোহেলের কার্যালয়ের সামনে গুলির যে খোসাগুলো উদ্ধার করা হয় তা এলজির। সন্ত্রাসীরা আতংক তৈরির জন্য ফাঁকা গুলিবর্ষণ করে। কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনওয়ারুল আজিম বলেন, আমরা ধারণা করছি কাউন্সিলর সোহেল হত্যাকান্ডে পিস্তল ব্যবহার করা হয়েছে। আমরা আলামত ফরেনসিক বিভাগে পাঠিয়েছি। রিপোর্ট পেলেই বিস্তারিত বলতে পারব। কাউন্সিলর সোহেলের কার্যালয়ের সামনে যে গুলির খোসা পেয়েছি সেগুলো দেশীয় এলজির।

আমাকে হত্যা করে এমন সাধ্য কারও নেই : মাদক ও চাঁদাবাজি বন্ধে হঠাৎ তৎপর হওয়ায় কাউন্সিলর সৈয়দ মোহাম্মদ সোহেলের ওপর যে কোনো সময় হামলা হতে পারে, এমন ধারণা করতেন পরিবারের লোকজন। এ নিয়ে তাকে বেশ কয়েকবার সতর্ক করেন তারা। বিষয়টি পাত্তা দিতেন না তিনি। বরং বলতেন, ‘এই পাথুরিয়াপাড়ায় আমাকে হত্যা করে, এমন সাধ্য কারও নেই। আমাকে এক আল্লাহ ছাড়া কেউ মারতে পারবেন না।’ কাউন্সিলরের আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা যায়। কাউন্সিলরের ছোট ভাই সৈয়দ মোহাম্মদ রুমন জানান, অতিরিক্ত জনপ্রিয়তার কারণে সবসময় নির্ভার থাকতেন আমার ভাই। তাকেই প্রকাশ্যে হত্যা করা হলো। হত্যাকারীদের অর্থের উৎস সম্পর্কে খোঁজ নিলে এ ঘটনার পিছনে কারা জড়িত, সে তথ্য বেরিয়ে আসবে বলে মনে করেন তিনি। প্রসঙ্গত, ২২ নভেম্বর বিকালে কার্যালয় থেকে ১০ গজ দূরে অবস্থিত থ্রি-স্টার এন্টারপ্রাইজে ঢুকে গুলি করে হত্যা করা হয় কুমিল্লা নগরীর ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সোহেল ও সহযোগী হরিপদ সাহাকে। সোহেলের শরীরে ৯টি গুলি করে খুনিরা।

সর্বশেষ খবর