শিরোনাম
শুক্রবার, ৩ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

মৃত্যুদণ্ড ১৩, যাবজ্জীবন ১৯ জনের

আমিনবাজারে ছয় ছাত্র পিটিয়ে হত্যার চাঞ্চল্যকর মামলার রায়

আদালত প্রতিবেদক

মৃত্যুদণ্ড ১৩, যাবজ্জীবন ১৯ জনের

রায় ঘোষণার পর গতকাল আসামিদের নিয়ে যাওয়া হয় -বাংলাদেশ প্রতিদিন

ঢাকার সাভারের আমিনবাজারে ডাকাত সন্দেহে ছয় ছাত্রকে পিটিয়ে হত্যার দায়ে ১৩ আসামিকে মৃত্যুদন্ড দিয়েছে আদালত। পাশাপাশি ১৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড এবং ১০ হাজার টাকা জারিমানা করা হয়েছে। এ ছাড়া অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় মামলার বাকি ২৫ আসামিকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়েছে। গতকাল ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক ইসমত জাহান এ মামলার রায় ঘোষণা করেন।

এর আগে রাষ্ট্র ও আসামি পক্ষের যুক্তিতর্ক শুনানি শেষে ২২ নভেম্বর রায়ের জন্য দিন ধার্য করেন বিচারক। এ মামলার  ৬০ আসামির মধ্যে তিনজন বিচার চলাকালে মারা যাওয়ায় মামলা থেকে তাদের অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।

মৃত্যুদন্ড পাওয়া ১৩ আসামি হলেন- আবদুল মালেক, সাঈদ মেম্বার, আবদুর রশীদ, ইসমাইল হোসেন, জমসের আলী, মীর হোসেন, মজিবর রহমান, আনোয়ার হোসেন, রজ্জব আলী সোহাগ, মো. আলম, মো. রানা, মো. হামিদ ও মো. আসলাম। আর যাবজ্জীবন দন্ডপ্রাপ্ত ১৯ আসামি হলেন- শাহীন আহম্মদ, মো. ফরিদ খান, মো. রাজীব হোসেন, মো. ওয়াসিম, মো. ছাত্তার, মো. সেলিম, মনির হোসেন, মো. আলমগীর, মোবরক হোসেন, অখিল খন্দকার, মো. বশির, রুবেল হোসেন, মো. নুর ইসলাম, মো. শাহাদাত হোসেন জুয়েল, মো. টুটুল, মো. মাসুদ, মো. মোখলেছ, মো. তোতন ও মো. সাইফুল ইসলাম। এ ছাড়া বিচার চলাকালে মারা যাওয়া তিন আসামি হলেন কবির হোসেন, রাশেদ ও সাব্বির আহমেদ।

মামলা সূত্রে জানা গেছে, ২০১১ সালের ১৭ জুলাই পবিত্র শবেবরাতের রাতে সাত বন্ধু ঘুরতে গিয়েছিলেন ঢাকার অদূরে সাভারের আমিনবাজারের বড়দেশী গ্রামে। দিবাগত রাত সোয়া ১টার দিকে স্থানীয় কিছু দুর্বৃত্ত সাত ছাত্রকে ‘ডাকাত’ বলে পিটিয়ে ও কুপিয়ে জখম করে। এতে ছয় ছাত্র মারা যান। গুরুতর আহত হলেও প্রাণে বেঁচে যান আল-আমিন। ২০১৬ সালে তিনি আদালতে সাক্ষ্য দেন।

ওই ঘটনায় নিহত ছয়জন হলেন- ধানমন্ডির ম্যাপললিফ স্কুলের ‘এ’ লেভেলের ছাত্র শামস রহিম শাম্মাম, মিরপুর সরকারি বাঙ্্লা কলেজের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের ইব্রাহিম খলিল, বাঙ্্লা কলেজের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের তৌহিদুর রহমান পলাশ, তেজগাঁও কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রথম বর্ষের টিপু সুলতান, মিরপুরে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজির (বিইউবিটি) বিবিএ দ্বিতীয় বর্ষের সিতাব জাবীর মুনিব এবং বাঙ্্লা কলেজের উচ্চমাধ্যমিকের ছাত্র কামরুজ্জামান। হামলায় গুরুতর আহত হলেও প্রাণে বেঁচে যান কেবল আল-আমিন। ওই হত্যাকান্ডের পর সাভার থানা পুলিশ একটি মামলা করে, যাতে অজ্ঞাতপরিচয় গ্রামবাসীকে আসামি করেন ওই থানার উপ-পরিদর্শক আনোয়ার হোসেন। অন্যদিকে ডাকাতির অভিযোগ এনে আল-আমিন এবং তার নিহত ছয় বন্ধুর নামে একটি মামলা করেন স্থানীয় বালু ব্যবসায়ী মালেক। পরে আলোচিত ওই ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্তে বেরিয়ে আসে, নিহত ছাত্ররা ডাকাত ছিলেন না। পরে ছয় ছাত্র হত্যা মামলার তদন্তভার থানা পুলিশের হাত থেকে সিআইডি এবং পরে আদালতের নির্দেশে র‌্যাবের হাতে যায়। র‌্যাবের সহকারী পরিচালক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শরীফ উদ্দিন ২০১৩ সালের ১৩ জানুয়ারি সেই মালেকসহ ৬০ জনকে আসামি করে ঢাকার মুখ্য বিচারিক হাকিমের আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। ওই বছর ৮ জুলাই ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত দায়রা জজ মো. হেলালউদ্দিন আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন। এ ছাড়া বেঁচে যাওয়া একমাত্র ভিকটিম আল-আমিনকে ডাকাতির মামলা থেকে সেদিনই অব্যাহতি দেন। মামলার তদন্ত চলাকালে আসামিদের মধ্যে ১৪ জন ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। মামলার বিচারকালে রাষ্ট্রপক্ষের ৫৫ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়। রাষ্ট্রপক্ষে এ মামলা পরিচালনা করেন আইনজীবী আবদুল মতিন, আনন্দ চন্দ্র বিশ্বাস প্রমুখ।

সর্বশেষ খবর