রবিবার, ২ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

চ্যালেঞ্জের বছর আওয়ামী লীগের

১৬ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জ সিটি ও জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে ইউপি ভোট জুলাইয়ের আগে ৪১ মেয়াদোত্তীর্ণ জেলা, মহিলা লীগ, যুব মহিলা লীগ, তাঁতী লীগ, ছাত্রলীগ এবং ডিসেম্বরে জাতীয় সম্মেলনের জটিলতা

রফিকুল ইসলাম রনি

চ্যালেঞ্জের বছর আওয়ামী লীগের

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দুই বছর বাকি থাকলেও চলতি বছরকেই আওয়ামী লীগের জন্য চ্যালেঞ্জ মনে করছেন দলীয় নীতিনির্ধারকরা। এর মধ্যে রয়েছে- ১৬ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন, টাঙ্গাইল-৭ আসনের উপনির্বাচন এবং জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে তিন ধাপে ইউপি নির্বাচনী ফসল ঘরে তোলা।

এ ছাড়া এমপি-মন্ত্রীদের সঙ্গে তৃণমূল নেতা-কর্মীর দূরত্ব নিরসন করা। মেয়াদোত্তীর্ণ ৪১ জেলার সম্মেলন শেষ করে ডিসেম্বরে জাতীয় সম্মেলন শেষ করা। জোট শরিকদের সঙ্গে দূরত্ব নিরসন করে ভোট বাড়ানোর দিকে গুরুত্ব দেওয়ার বিষয়টিও আছে। একই সঙ্গে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য নিয়ে সরকারবিরোধী যে কোনো আন্দোলন রাজপথে মোকাবিলা করতে হবে শক্ত হাতে। বিতর্কিত নেতাদের লাগাম টানার পাশাপাশি করোনাকালে বাস্তবমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে দল এবং সরকারের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি করতে হবে। ফলে জাতীয় নির্বাচনের আগে এ বছরটি বেশ চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে পার করবে আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারকরা এমনটাই ভাবছেন।

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও রাজশাহী সিটি মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘জন্মলগ্ন থেকেই আওয়ামী লীগ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে আসছে। চলতি বছরে আমাদের হাতে অনেক কাজ রয়েছে। এর মধ্যে স্থানীয় সরকারের নির্বাচনে দলীয় ফসল ঘরে তোলা, মেয়াদ উত্তীর্ণ জেলা-উপজেলার সম্মেলন শেষ করা এবং কেন্দ্রীয় সম্মেলনের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া।’ তিনি বলেন, ‘আগামী ১৬ জানুয়ারি নাসিক নির্বাচনে জয় দিয়ে আমাদের সাংগঠনিক বছর শুরু করব। এরপর স্থানীয় সরকারের যেসব নির্বাচন আছে, সেগুলোতেও আমাদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা আসবে।’ 

করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রমনের ঝুঁকি নিয়ে শুরু হলো নতুন বছর। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নানা চাপ সামাল দেওয়া সরকারের জন্য বরাবরই চ্যালেঞ্জ। এ বছর সরকার ও আওয়ামী লীগকে জনগণের মন জয়ে মনোযোগী হতে হবে। ২০২৩ সালের শেষের দিকে কিংবা ২০২৪ সালের শুরুর দিকে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা। সে ক্ষেত্রে প্রথমেই সংসদের ৩০০ আসনে দলীয় প্রার্থী বাছাই করার জন্য মাঠ পর্যায়ে জরিপ কার্যক্রম চালানো হবে। এর আগে আওয়ামী লীগের জাতীয় ত্রিবার্ষিক সম্মেলন আয়োজনের উদ্যোগ রয়েছে।  দলটির একাধিক নেতা জানিয়েছেন, জাতীয় সম্মেলন ও আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে এ বছর তৃণমূল পর্যন্ত দলকে আরও সুসংগঠিত ও সুশৃঙ্খল করে তারা গড়ে তুলতে চান। অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব মিটিয়ে দলকে ঐক্যবদ্ধ করতে চান তারা। এর মধ্য দিয়ে নির্বাচনী প্রস্তুতি এগিয়ে রাখতে চায় দলটি। এ ছাড়া যে কোনো ষড়যন্ত্রের বিষয়ে সতর্ক থেকে রাজনীতির মাঠ বিরোধীদের দখলে নিতে দেবে না আওয়ামী লীগ। অন্যদিকে নতুন বছরের শুরু থেকেই সিটি করপোরেশন ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হবে ক্ষমতাসীন দলকে। এ বছর মেয়াদোত্তীর্ণ কয়েকটি সহযোগী সংগঠনকেও সম্মেলনের মাধ্যমে ঢেলে সাজাতে চান তারা। পাশাপাশি সম্মেলন হওয়া সহযোগী সংগঠনগুলো ব্যস্ত থাকবে তাদের তৃণমূল গোছানোর কাজে।

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘জাতীয় নির্বাচনের দুই বছর বাকি থাকলেও আমাদের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। এর অংশ হিসেবে স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতে নৌকার বিজয় নিশ্চিত করছি। সংগঠনকে শক্তিশালী করতে জেলা-উপজেলার সম্মেলন করছি।’ তিনি বলেন, ‘এ বছর তৃণমূল থেকে সংগঠন গুছিয়ে আনা আমাদের গুরুত্বপূর্ণ কাজ হবে। জনপ্রিয়তা বাড়াতে আরও বেশি যত্নশীল নেতৃত্বকে সামনে আনতে হবে। নেতা-কর্মীদের আরও বেশি গণমুখী হতে হবে।’

আগামী ১৬ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন। প্রতীক বরাদ্দের পর জমে উঠেছে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা। এ সিটিতে নৌকার বিজয় নিশ্চিত করতে জোর তৎপর শুরু করেছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী ও তার সমর্থকরা। বসে নেই আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারাও। ইতোমধ্যে দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক ও ঢাকা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজমের নেতৃত্বে ১৭ জন কেন্দ্রীয় নেতাদের সমন্বয়ে ওয়ার্ডভিত্তিক টিম গঠন করা হয়েছে। চলতি বছরের শুরুতেই নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নৌকার বিজয়ের মধ্য দিয়ে বছর শুরুর টার্গেট আওয়ামী লীগের। এ ছাড়া ১৬ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে টাঙ্গাইল-৭ (মির্জাপুর) আসনের উপনির্বাচন। এখানে নৌকার মনোনয়ন পেয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও টাঙ্গাইল চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি খান আহমেদ শুভ। সেখানেও নৌকার বিজয় নিশ্চিত করতে কাজ করছেন দলীয় শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা। গত বছরের শুরু হওয়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের পঞ্চম ও ষষ্ঠ ধাপের ভোট গ্রহণ হবে এ মাসেই। এ ধাপগুলোতেও নৌকার বিজয় নিশ্চিত করতে চায় আওয়ামী লীগ। তবে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিদ্রোহীদের নিয়ে ব্যাপক অস্বস্তিতে রয়েছে আওয়ামী লীগ। সাংগঠনিক শাস্তির মুখেও ভোটের মাঠে নৌকার বিরুদ্ধে অনড় ছিলেন বিদ্রোহী ও তাদের মদদদাতারা। স্থানীয় এমপি ও জেলা-উপজেলার প্রভাবশালী নেতারা নৌকার বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ায় তৃণমূল এখন দলে দলে বিভক্ত। দলের অভ্যন্তরে তৈরি হয়েছে দল-উপদল। তবে নতুন বছরে তৃণমূলের সৃষ্ট এসব সমস্যা সমাধানে কাজ করবে আওয়ামী লীগ।

সূত্রমতে, ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এরই মধ্যে ৭৮ সাংগঠনিক জেলার মধ্যে ৩৭টির সম্মেলন হয়েছে। চলতি বছরের মধ্যে ৪১টি জেলার সম্মেলন শেষ করতে হবে। সারা দেশে আওয়ামী লীগের প্রায় ৬৫০টি উপজেলা, থানা ও পৌরসভা কমিটি রয়েছে। এখনো ৪৫০টি কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ। আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগ, তাঁতী লীগ এবং ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগের সাংগঠনিক মেয়াদ শেষ হয়েছে। চলতি বছরের মার্চেই সম্মেলন করার কথা রয়েছে।

রাজশাহী বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, চলতি বছর সারা দেশে সাংগঠনিক কার্যক্রম জোরদার করা হবে। ১৯ ফেব্রুয়ারি পাবনা, ২০ ফেব্রুয়ারি নাটোর, ২৮ ফেব্রুয়ারি জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন করা হবে। এ ছাড়া পাঁচটি উপজেলার সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। মেয়াদোত্তীর্ণ জেলা-উপজেলা ছাড়াও সহযোগী সংগঠনকে ঢেলে সাজাতে কর্মযজ্ঞ শুরু হয়েছে।

 

সর্বশেষ খবর