বৃহস্পতিবার, ১৩ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা
আজ থেকে ১১ দফা বাস্তবায়ন

ভাড়া না বাড়িয়েই অর্ধেক আসনে যাত্রী নিতে হবে

নিজস্ব প্রতিবেদক

এক সপ্তাহে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী বেড়েছে দ্বিগুণ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আজ থেকে কার্যকর হচ্ছে ১১ দফা বিধিনিষেধ। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এ নির্দেশনা কার্যকর থাকবে বলে জানিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। আগামী শনিবার থেকে ভাড়া না বাড়িয়ে অর্ধেক যাত্রী নিয়ে চলাচল করবে বাস।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, ‘কয়েক দিন আগেও সংক্রমণের হার ছিল দুই শতাংশের কাছাকাছি। গতকাল (মঙ্গলবার) সেটা প্রায় ৯ শতাংশে পৌঁছেছে। আজ (বুধবার) হয়তো আরও বাড়বে। আর এই হারে বাড়তে থাকলে আমরা ধারণা করছি আগামী কয়েক দিনে হাসপাতালে রোগী বাড়বে। হাসপাতালেও রোগীর সংখ্যা বাড়ছে, রোগীদের হাসপাতালে আসা শুরু হয়ে গেছে। আর এভাবে হাসপাতালে তিন-চার গুণ রোগী হলে বেকায়দায় পড়তে হবে। হাসপাতাল ব্যবস্থা, চিকিৎসক-নার্সদের ওপর চাপ পড়বে, মৃত্যুর হারও বাড়বে।’ গতকাল ঢাকায় বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ানস অ্যান্ড সার্জনস মিলনায়তনে বিভিন্ন হাসপাতালে অ্যাম্বুলেন্স ও কম্পিউটার বিতরণ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘যদিও টিকা নেওয়ার কারণে মৃত্যুর হার কিছুটা কম। কিন্তু রোগী যদি লাখ লাখ হয় তাহলে তারা কোথায় থাকবে- এ বিষয়গুলো আমাদের মনে রাখতে হবে। শিক্ষার্থীদের টিকাদান কর্মসূচি চলছে। তাদের ডেকেও টিকা নিতে আনা যায়নি। কিন্তু যেই বলা হলো টিকা ছাড়া স্কুলে আসা যাবে না, সেই তারা আসা শুরু করল। আরও ১ কোটি ১৮ লাখ শিক্ষার্থীকে এই মাসের মধ্যে টিকা দেওয়ার পরিকল্পনা আছে।’

১১ দফা বিধিনিষেধ চলাকালীন পুরনো ভাড়ায় গণপরিবহন পরিচালনা করতে হবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। তবে বাড়া বৃদ্ধি না করলেও মালিকপক্ষ যত আসন তত যাত্রী পরিবহনের অনুমতি চেয়েছে। গতকাল দুপুরে বিআরটিএ চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদারের সঙ্গে মালিকপক্ষের এ নিয়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।

করোনা নিয়ন্ত্রণে সরকারের নতুন বিধিনিষেধ অনুযায়ী, আগামী ১৫ জানুয়ারি থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে অর্ধেক যাত্রী নিয়ে সড়কে বাস চলাচল করবে। তবে এ ক্ষেত্রে নতুনভাবে ভাড়া বাড়ানো হয়নি। বিদ্যমান ভাড়ায় যাত্রী পরিবহন করবেন বাস মালিকরা। তবে এ নির্দেশনার পর থেকেই ভাড়া বাড়ানো বা যত আসন তত যাত্রীর দাবি জানায় মালিকপক্ষ। তাদের মতে, বিপুলসংখ্যক নগরবাসীর এই শহরে অর্ধেক যাত্রী পরিবহন করলে গণপরিবহন সংকটে পড়তে হবে। এ জন্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে যত আসন তত যাত্রী পরিবহনের অনুমতি চেয়েছেন তারা।

বৈঠক প্রসঙ্গে বিআরটিএ চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার বলেন, ‘এখন বাস ভাড়া বাড়ানো যৌক্তিক হবে না। কারণ গত নভেম্বর মাসে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে বাস ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। এ নিয়ে পরিবহন মালিক ও শ্রমিক নেতাসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আমাদের ব্যাপক আলোচনা হয়েছে। তারা সবশেষে একমত হয়েছেন, ভাড়া বাড়ানো হলে যাত্রীদের ওপর বেশি চাপ তৈরি করা হবে এবং এটি এ মুহূর্তে বাড়ানো যৌক্তিক হবে না।’ ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, ‘আমরা ভাড়া বাড়ানোর পক্ষে না। তবে অর্ধেক যাত্রী পরিবহন করলে বিপুলসংখ্যক নগরবাসী গণপরিবহন সংকটে পড়বে। এমনিতেই কর্মদিবসে সকালের অফিস সময়ে সাধারণ মানুষ পরিবহন সংকটে পড়ে যায়। এ অবস্থায় অর্ধেক যাত্রী পরিবহন করলে সংকট আরও বাড়তে পারে। এ জন্য আমরা সব স্বাস্থ্যবিধি মেনে যত আসন তত যাত্রী পরিবহনের অনুমতি চেয়েছি।’ আজ থেকে কার্যকর হওয়া বিধিনিষেধে স্বাস্থ্যবিধি মানায় সবচেয়ে বেশি জোর দেওয়া হয়েছে। দোকান, শপিং মল ও বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতা এবং হোটেল-রেস্তোরাঁসহ সব জনসমাগমস্থলে বাধ্যতামূলক সবাইকে মাস্ক পরতে হবে। নয় তো আইনানুগ শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে। রেস্তোরাঁয় বসে খাবার খেতে এবং আবাসিক হোটেলে থাকার জন্য অবশ্যই করোনার টিকা সনদ প্রদর্শন করতে হবে। আগামী শনিবার থেকে অর্ধেক যাত্রী নিয়ে চলাচল করবে ট্রেন। অর্ধেক আসন ফাঁকা গেলেও ভাড়া বাড়ানো হবে না। তবে এবার ট্রেনের সংখ্যা কমবে না। স্বাস্থ্য অধিদফতর জানিয়েছে, দেশে গত সপ্তাহে এর আগের সপ্তাহের তুলনায় দ্বিগুণ রোগী বেড়েছে। অধিদফতরের মুখপাত্র অধ্যাপক রোবেদ আমিন ভার্চুয়াল বুলেটিনে বলেছেন, ‘আগের সপ্তাহের তুলনায় পরের সপ্তাহে ১৬৯ দশমিক ১২ শতাংশ রোগী বৃদ্ধি পেয়েছে। ৫ থেকে ১১ জানুয়ারি পর্যন্ত আমরা শতাংশের হিসাবে প্রায় দ্বিগুণ রোগী পেয়েছি। ৫ জানুয়ারি ছিল ৪ দশমিক ২০ শতাংশ, ১১ জানুয়ারি এসে ৮ দশমিক ৯৭ শতাংশ সংক্রমণ হয়েছে। গত সাত দিনে প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গেছে। ১ জানুয়ারি পর্যন্ত সংক্রমণ আমাদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। এর পর থেকে এটা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। কোনো এলাকায় সংক্রমণ ১০ ভাগের ওপরে গেলে সেটিকে ঝুঁকিপূর্ণ বলা হয়। গুচ্ছ সংক্রমণ ছড়াতে থাকলে তা একসময় কমিউনিটিতে ছড়িয়ে যায়।

সর্বশেষ খবর