আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী নির্বাচনেও তাঁর দলকে জনগণ ভোট দেবে, এমন প্রত্যাশা ব্যক্ত করে বলেছেন, উন্নয়নের মাধ্যমে আমরা দেশকে বদলে দিয়েছি। সে কারণেই দেশের জনগণ আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে ভোট দেবে। আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে, জনগণের ওপর আমাদের আস্থা আছে। গতকাল বিকালে তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবনে আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম প্রেসিডিয়ামের বৈঠকে সূচনা বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী এমন প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।
করোনা মহামারী মোকাবিলায় তাঁর সরকারের গৃহীত নানা পদক্ষেপের কথা বৈঠকে তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনা সংকটে বিভিন্ন প্রণোদনা প্যাকেজ দিয়ে দেশের অর্থনীতিকে আমরা স্থিতিশীল রেখেছি। বর্তমানে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৯৪ শতাংশ এবং মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৫৯১ মার্কিন ডলার।
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী তাঁর বক্তৃতায় আরও বলেন, আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। আজকে আমরা ক্ষমতায় রয়েছি বলেই মানুষের জীবমনানের উন্নয়ন হয়েছে। কমিউনিটি ক্লিনিক, আমার বাড়ি আমার খামার ও আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে সমস্ত সুযোগ-সুবিধা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিচ্ছি। দেশের কেউ গৃহহীন থাকবে না। শতভাগ মানুষ বিদ্যুতের আওতায় এসেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে বিকাল সাড়ে ৪টায় শুরু হওয়া এ বৈঠকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ছাড়াও প্রেসিডিয়াম সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, কাজী জাফরুল্লাহ, নুরুল ইসলাম নাহিদ, ড. আবদুর রাজ্জাক, লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান, রমেশ চন্দ্র সেন, অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম, অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম ছাড়াও প্রচার সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ উপস্থিত ছিলেন।
বর্জ্য শোধনাগার ঢাকার বাইরে করার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর : সাড়ে ৩৭ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ১১টি প্রকল্প অনুমোদন করেছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ নির্বাহী কমিটি (একনেক)। গতকাল শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় এ অনুমোদন দেওয়া হয়। গণভবন থেকে ভার্চুয়াল মাধ্যমে যুক্ত হয়ে এতে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা। তিনি এ সময় সব ধরনের বর্জ্য শোধনাগার ঢাকার বাইরে নির্মাণ করার নির্দেশ দেন। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। এ সময় পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম, পরিকল্পনা সচিব প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য মামুন-আল-রশীদ, মোসাম্মৎ নাসিমা বেগম উপস্থিত ছিলেন। এম এ মান্নান জানান, ৩৩৩ কোটি ৩২ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অধিভুক্ত এলাকায় বর্জ্য অপসারণ ও ব্যবস্থাপনা, সড়ক মেরামতে ব্যবহৃত আধুনিক যান-যন্ত্রপাতি সংগ্রহ এবং ম্যাকানাইজড পার্কিং স্থাপনের মাধ্যমে যানজট নিরসন’ প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রকল্পটি অনুমোদনের সময় প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন নির্দেশনা দেন। মন্ত্রী বলেন, সম্প্রতি ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটির ময়লার গাড়িচালকরা বেশ কিছু দুঃখজনক ঘটনা ঘটিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী বিষয়গুলো অবগত। এজন্য তিনি (প্রধানমন্ত্রী) বলেছেন, গাড়িচালকদের বিশেষ ট্রেনিং দিতে হবে। এসব ঘটনা (দুর্ঘটনা) আর দেখতে চাই না। বর্জ্য শোধনাগার শহরের বাইরে স্থাপন করতে হবে। সেগুলোতে মডার্ন টেকনোলজি যোগ করতে হবে। কেমিক্যাল এবং ফিজিক্যাল দুই ক্ষেত্রেই সর্বশেষ টেকনোলজি ব্যবহার করতে হবে। একনেকে অনুমোদিত প্রকল্পগুলো হচ্ছে- মোংলা কমান্ডার ফ্রোটিলা ওয়েস্ট (কমফ্লোট ওয়েস্ট)-এর অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প; চট্টগ্রাম, কুমিল্লা এবং ময়মনসিংহ (ত্রিশাল) মিলিটারি ফার্ম আধুনিকায়ন প্রকল্প; ১০টি অগ্রাধিকারভিত্তিক শহরে সমন্বিত স্যানিটেশন ও হাইজিন প্রকল্প; ঢাকা পানি সরবরাহ নেটওয়ার্ক উন্নয়ন প্রকল্প; ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অধিভুক্ত এলাকায় বর্জ্য অপসারণ ও ব্যবস্থাপনা, সড়ক মেরামতে ব্যবহৃত আধুনিক যান-যন্ত্রপাতি সংগ্রহ এবং ম্যাকানাইজড পার্কিং স্থাপনের মাধ্যমে যানজট নিরসনকরণ প্রকল্প; ঢাকার আজিমপুরস্থ মাতৃসদন ও শিশু স্বাস্থ্য প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানে কর্মরত চিকিৎসক, কর্মকর্তা, সিনিয়র স্টাফ নার্স ও প্রশিক্ষণার্থীদের জন্য হোস্টেল/ডরমিটরি নির্মাণ; শেখ হাসিনা ইনস্টিটিউট অব ফ্রন্টিয়ার টেকনোলজির প্রাথমিক অবকাঠামো নির্মাণ; গোপালগঞ্জ জেলার গুরুত্বপূর্ণ পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন এবং স্মার্ট কৃষি কার্ড ও ডিজিটাল কৃষি (পাইলট) প্রকল্প।