বৃহস্পতিবার, ২৩ জুন, ২০২২ ০০:০০ টা
সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী

জনগণের ভোট কেড়ে ক্ষমতায় থাকতে চাই না

♦ সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে পদ্মা সেতু নির্মিত হয়েছে ♦ আমি বঙ্গবন্ধুর মেয়ে, যেটা পারব সেটাই বলব ♦ বিএনপি ক্ষমতায় এলে কাকে সরকারপ্রধান করবে ♦ তারেক কীভাবে ব্রিটিশ নাগরিক- খোঁজ করেন ♦ যারা খুনিদের আশ্রয় দেয় তারা কী মানবাধিকার শেখাবে

নিজস্ব প্রতিবেদক

জনগণের ভোট কেড়ে ক্ষমতায় থাকতে চাই না

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যেনতেনভাবে প্রধানমন্ত্রী হওয়াটা আমার লক্ষ্য না। জনগণের ভোট কেড়ে নিয়ে ক্ষমতায় থাকতে চাই না।

গতকাল সকালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের শাপলা হলে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। চলমান বন্যা পরিস্থিতি এবং ২৫ জুন দেশের সর্ববৃহৎ স্থাপনা বহুল আকাক্সিক্ষত পদ্মা সেতুর উদ্বোধন উপলক্ষে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে মঞ্চে প্রধানমন্ত্রীর পাশে ছিলেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য আমির হোসেন আমু, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম।

করোনার কারণে দীর্ঘ দুই বছর পর সরাসরি এ সংবাদ সম্মেলন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এতে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকের সম্পাদক, সিনিয়র সাংবাদিক, মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ, পদ্মা সেতুর বিশেষজ্ঞ প্যানেল সদস্যসহ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। দীর্ঘ এ সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লিখিত বক্তব্যের পর সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের খোলামেলা জবাব দেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, মিলিটারি ডিক্টেটররা যা করেছেন তার বিরুদ্ধে আমিই সংগ্রাম করেছি, আমিই আন্দোলন করেছি। জেল-জুলুম, বোমা, গ্রেনেড, গুলির সম্মুখীন আমিই হয়েছি। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছি বলেই দেশের উন্নয়ন হয়েছে। তিনি বলেন, প্র্রধানমন্ত্রী হওয়ার সুযোগ অনেক থাকে। কিন্তু ও রকম সুযোগ নিয়ে তো প্রধানমন্ত্রী হইনি কখনো। ১৯৯১ সালে হতে পারতাম। তিনি বলেন, বিচারপতি সাহাবুদ্দীন সাহেব তখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান। তিনি আমাদের ডেকে বলেছিলেন জামায়াত, জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগসহ মেজরিটি। আপনি সরকার গঠন করেন। আমি ক্ষমা চেয়ে চলে এসেছিলাম। আমি এভাবে ক্ষমতায় যাব না। আমি যখন সিট পাইনি আমি যাব না। তিনি বলেন, ২০০১ সালে আমাকে ক্ষমতায় আসতে দেওয়া হয়নি। আমাকে যখন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন ধরেছিলেন এবং তাদের এনার্জি মিনিস্টার এসেছিলেন এখানে, আমাকে একটি প্রস্তাব দিয়েছিলেন, ভারতেরও প্রস্তাব ছিল, আমাদের এখানে যে গ্যাস তা বিক্রি করতে হবে। আমেরিকার কোম্পানি গ্যাস উত্তোলন করবে, আর ভারতের কাছে গ্যাস বিক্রি করতে হবে। আমার কথা ছিল স্পষ্ট, গ্যাসের মালিক দেশের জনগণ। দেশের চাহিদা পূরণ হওয়ার পর ৫০ বছরের রিজার্ভ থাকবে, তারপর যদি অতিরিক্ত হয়, আমি বেচব। এটাই তো আমার অপরাধ ছিল যে আমার দেশের সম্পদ রক্ষা করতে চেয়েছিলাম। সে কারণে ২০০১ সালে আমাকে ক্ষমতায় আসতে দেওয়া হয়নি।

শেখ হাসিনা বলেন, ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসে। এরপর দেশে ইমারজেন্সি এলো। আট বছর জাতির জীবন থেকে নষ্ট হলো। কেয়ারটেকারের সময় যখন আমাকে গ্রেফতার করা হয় তখনো আমাকে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল যে আপনি নির্বাচন করবেন না, আপনাকে প্রাইম মিনিস্টারের মর্যাদা দেওয়া হবে। আমি বলেছিলাম, এ মর্যাদা তো আমি চাই না। যে ব্রিগেডিয়ার প্রস্তাব নিয়ে গিয়েছিল তাকে বলেছিলাম, আপনার আর্মি চিফকে বলে দিয়েন ’৫৪ সালে তাঁর (আর্মি চিফ) জন্ম। আমার বাপ ’৫৪ সালে মন্ত্রী ছিলেন। আমরা প্রধানমন্ত্রীর মেয়ে ছিলাম। আমরা মিন্টো রোডে থাকতাম। কাজেই ক্ষমতার লোভ আমাকে দেখিয়ে লাভ নাই। আমরা ইলেকশন চাই আর ক্ষমতায় যেতে চাই দেশের উন্নয়নের জন্য, সোজা কথা।

সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে পদ্মা সেতু নির্মিত হয়েছে : দেশি অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণে পাশে থাকায় বাংলাদেশের মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সব ষড়যন্ত্র-প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলা করে পদ্মা সেতু নির্মিত হয়েছে। মানুষের শক্তিতে তিনি সব সময় বিশ্বাস করেন। তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছিল বলেই পদ্মা সেতু মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। ব্যক্তিস্বার্থে বিশেষ এক ব্যক্তির উদ্যোগে ষড়যন্ত্র শুরু হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, পরে আরও কয়েকজন যুক্ত হয়েছেন। দুর্নাম রটানো হয়, দুর্নীতির অভিযোগ তোলা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এ ষড়যন্ত্রকারীরা ছাড়াও বিশ্বব্যাংকের অভ্যন্তরে একটি গ্রুপ ছিল, যারা অন্যায্যভাবে কিছু কিছু বিষয়ে প্রভাব বিস্তার করতে চেয়েছিল। বিশ্বব্যাংক একটি প্রতিষ্ঠানকে যোগ্য করার লক্ষ্যে পরোক্ষ চাপ দিতে থাকে। রাজি হইনি। এর পর থেকেই তারা পদ্মা সেতুর কার্যক্রমে বাধা দিতে থাকে। দুদক তদন্ত করে দুর্নীতির কোনো প্রমাণ পায়নি। পরে কানাডার আদালতেও প্রমাণিত হয়, পদ্মা সেতুতে কোনো দুর্নীতি হয়নি। তিনি জানান, ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর ’৯৭ সালে জাপান সফরে পদ্মা ও রূপসা নদীর ওপর সেতুর প্রস্তাব দিলে জাপান রাজি হয়। ২০০১ সালে পদ্মা সেতুর সমীক্ষার তথ্য আসে। ওই বছরের ৪ জুলাই ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর নির্মাণ কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়। ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে তা অগ্রাধিকার তালিকায় যুক্ত করে আওয়ামী লীগ সরকার।

ব্যয় বাড়ার কারণ ব্যাখ্যা করে প্রধানমন্ত্রী জানান, ২০১০ সালের মধ্যে নকশা চূড়ান্ত হয়। পরের বছর জানুয়ারিতে সংশোধিত ডিপিপি দাঁড়ায় ২০ হাজার ৫০৭ কোটি টাকা। সেতুর দৈর্ঘ্য ৫ দশমিক ৫৮ কিলোমিটার থেকে বাড়িয়ে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার করার কারণে ব্যয় বাড়ে। এরপর ৪১টি স্প্যানের মধ্যে ৩৭টি স্প্যানের নিচ দিয়ে নৌযান চলাচলের সুযোগ রাখা হয়েছে। যুক্ত করা হয় রেলসংযোগ। কংক্রিটের বদলে ইস্পাত বা স্টিলের অবকাঠামো যুক্ত হয়। পাইলিংয়ের ক্ষেত্রেও গভীরতা বাড়ে। বাড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন ব্যয়। ২০১৭ সালে সরকার জমি অধিগ্রহণে জমির দামের তিন গুণ অর্থ দেওয়া শুরু করে। ২০১৬ সালে সেতুর খরচ আবার বাড়ে। ওই সময় ডলারের বিপরীতে টাকার মান ৯ টাকা কমে যায়। নদীশাসনে নতুন করে ১ দশমিক ৩ কিলোমিটার যুক্ত হয়। সব মিলে ৮ হাজার কোটি টাকা খরচ বেড়ে যায়। নিরাপত্তায় সেনাবাহিনীকে যুক্ত করা হয়। সব মিলে পদ্মা সেতুর প্রকল্প ব্যয় ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। ২১ জুন পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ২৭ হাজার ৭৩২ কোটি ৮ লাখ টাকা।

আমি বঙ্গবন্ধুর মেয়ে, যেটা পারব সেটাই বলব : বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন বন্ধ করার পর যারা সমালোচনা করেছিলেন তাদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের মেয়ে। আমি যেটা পারব সেটাই বলব, যেটা বলব ইনশা আল্লাহ আমি সেটা করব এবং সেটা আমি করে দেখাতে পারি। সেজন্য আমি দেশবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। তিনি বলেন, ২৫ জুন শনিবার বহুল আকাক্সিক্ষত পদ্মা সেতুর শুভ উদ্বোধন হতে যাচ্ছে। পদ্মা সেতু আমাদের অহংকার, আমাদের গর্ব। প্রমত্তা পদ্মা নদী দেশের দক্ষিণাঞ্চলকে রাজধানী ঢাকা এবং অন্যান্য জেলা থেকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছিল। সেটা এখন যুক্ত হচ্ছে। পদ্মা সেতু প্রকল্প নিয়ে তিনি বলেন, আমাদের বিশেষজ্ঞ প্যানেল আজকে জামিলুর রেজা সাহেব (গবেষক, শিক্ষাবিদ, প্রকৌশলী ও বিজ্ঞানী অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী ছিলেন পদ্মা সেতুর বিশেষজ্ঞ প্যানেলের প্রধান) আমাদের মাঝে নেই, আমি তাঁকে শ্রদ্ধা জানাই। যখন বিশ্বব্যাংকসহ বড় বড় মহারথী সরে গেল, তাঁরা কিন্তু সরে যাননি। তাঁরা সাহস দেখিয়েছেন, এ উপদেষ্টা প্যানেল কিন্তু কাজ করেছে। তাঁরা যদি আমাদের পাশে না দাঁড়াতেন আমরা পদ্মা সেতু করতে পারতাম কি না সন্দেহ ছিল। কাজেই আমি তাঁদের সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই, কৃতজ্ঞতা জানাই যে, তাঁরা এ সাহসিক ভূমিকা নিয়েছিলেন। হয়তো আমি খুশি হতাম আজকে যদি জামিলুর রেজা সাহেব বেঁচে থাকতেন, আর পদ্মা সেতু দেখে যেতে পারতেন।

পরনির্ভরশীলতার অচলায়তন ভাঙতে পেরেছি : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সাহস নিয়ে নিজেদের টাকায় পদ্মা সেতু করার ফলে আজকে বাংলাদেশের সম্মানটা ফিরে এসেছে। নইলে আমাদের দেশের সকলের একটা পারসেপশন ছিল, একটা মানসিকতা ছিল যে, আমরা অন্যের অর্থায়ন ছাড়া কিছুই করতে পারব না। এই যে একটা পরনির্ভরশীলতা, পরমুখাপেক্ষিতা- এটাই কিন্তু আমাদের মাঝে ছিল। একটা দীনতা ছিল। বিশ্বব্যাংক যখন এ টাকাটা তুলে নিয়ে গেল, আমরা অন্তত সে জায়গা থেকে বের হয়ে আসতে পেরেছি। সেই অচলায়তন ভেঙে আমরা যে একটা আত্মমর্যাদাশীল জাতি, আমরা যে পারি, সেটা প্রমাণ করতে পেরেছি।

নিজের ভাঁড় ভালো না, গোয়ালার ঘির দোষ দিয়ে লাভ কী : পদ্মা সেতু ইস্যুতে বিশ্বব্যাংক বা বিরোধিতাকারীরা দুঃখ প্রকাশ করেছে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার কথা হলো, ‘নিজের ভাঁড় ভালো না, গোয়ালার ঘির দোষ দিয়ে লাভ কী? বিশ্বব্যাংককে আমি কী দোষ দেব। তারা বন্ধ করল কাদের প্ররোচনায়। সেটা তো আমাদের দেশেরই কিছু মানুষের প্ররোচনায় তারা বন্ধ করেছিল। এটাই তো বাস্তবতা। আর যারা বিভিন্ন কথা বলেছেন, তাদের কিছু কথা আমি ওঠালাম। কথা আরও আছে। সেখানে আমার তো কিছু বলার দরকার নেই। এটা তারা নিজেরাই বুঝতে পারবে, যদি তাদের অনুশোচনা থাকে। আর না থাকলে আমার কিছু বলার নেই। আমার কারও বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই। বরং আমি ধন্যবাদ জানাই। ধন্যবাদ জানাই এজন্যই যে, এ ঘটনাটি ঘটেছিল বলেই আমরা এটা করতে পেরেছি।

শত প্রতিকূলতার মধ্যেও পদ্মা সেতু নির্মাণে সমর্থন ও সহযোগিতার জন্য দেশবাসীকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানুষের কাছ থেকে যে অভূতপূর্ব সাড়াটা আমি পেয়েছিলাম, সেটাই কিন্তু আমার সাহস আর শক্তি। মানুষ আমার পাশে দাঁড়িয়েছিল। তাদেরই সাহসে এ পদ্মা সেতু আজ মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। তিনি বলেন, কেননা, তাদের সাহসে সাহসী হয়েই নিজস্ব অর্থায়নে এ সেতু নির্মাণ করতে পেরেছি। তিনি বলেন, উৎসব সবাই করবেন কিন্তু প্রত্যেকে একটু ধৈর্য্য ধারণ করবেন, নিয়ম মানবেন। কোথাও কোনো দুর্ঘটনা যাতে না ঘটে সেদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি রাখবেন। তিনি বলেন, যার যার জায়গা থেকে যেমনভাবে হোক এ উৎসবে সবাই শামিল হবেন- এটা আমাদের মর্যাদার বিষয় যে আমরাও পারি। এটাই আমরা প্রমাণ করেছি। কাজেই সেভাবেই সবাই উৎসবে শামিল হবেন।

বিএনপি ক্ষমতায় এলে কাকে সরকারপ্রধান করবে? : এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ প্রাচীন একটি দল। সাধারণ মানুষ এ দল গঠন করে। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা স্বৈরশাসক। তিনি খুনি মোশতাকের সঙ্গে হাত মেলান। জাতির পিতার হত্যার সঙ্গে জড়িত তিনি। তিনি আইয়ুব খানের পদাঙ্ক অনুসরণ করেন। তিনি কারফিউ গণতন্ত্র দিয়েছেন। তাঁর হাতে তৈরি দল বিএনপি। আরেক দল জাতীয় পার্টিও একইভাবে স্বৈরশাসকের হাতে তৈরি।

প্রধানমন্ত্রী পাল্টা প্রশ্ন করে বলেন, যে দলগুলো তৃণমূল থেকে উঠে আসেনি, সেই দলগুলোর কাছে কী আশা করেন? ওই দলের নেতৃত্ব কার হাতে? একজন অর্থ আত্মসাৎ, দুর্নীতির দায়ে সাজাপ্রাপ্ত আসামি। নির্বাহী ক্ষমতাবলে সাজা স্থগিত করে বাসায় থাকার সুযোগটা দিয়েছি বয়সের কথা বিবেচনা করে। আরেকজন ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলা, একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামি ও পলাতক। তিনি বলেন, ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি একেক সিটে দিনে তিনবার করে প্রার্থী পরিবর্তন করে। ঢাকা থেকে একজন ঠিক হয়। আবার লন্ডন থেকে আরেকজন। যে যত টাকা দিয়েছে, তাকে মনোনয়ন দিয়েছে। তারা মাঝখানে নির্বাচন ছেড়ে চলে গেল।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, যখন মাঝপথে কেউ নির্বাচন ছেড়ে চলে যায়, তখন তো মাঠ ফাঁকা। বাকিরা তখন যা খুশি তা-ই করতে পারে। সেই দোষ তো আওয়ামী লীগের না। বিএনপি যদি ক্ষমতায় আসে, তবে কাকে সরকারপ্রধান করবে? তিনি বলেন, ‘কোনো দল নির্বাচনে জয়ী হলে কে সরকারপ্রধান হবেন, সেটা আগেই বিবেচনা করা হয়। তারা যে নির্বাচন করবে, তাতে কাকে দেখাবে? সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামিকে? সে তো দেশের নাগরিকত্ব বাতিল করে ব্রিটিশ নাগরিকত্ব নিয়েছে। সাজাপ্রাপ্ত আসামি হয়ে কত টাকা খরচ করে ব্রিটিশ নাগরিকত্ব পেল একটু খোঁজ করেন। এখানে গণতন্ত্রের দোষ কোথায়? জাতীয় পার্টি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আরেকটা দলের তো তথৈবচ অবস্থা। তাদের তো সাংগঠনিক তৎপরতা নেই। আর আমাদের বাকি ছিল বাম দলগুলো। তারা তো ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্র হতে হতে দাঁড়ি, কমা, সেমিকোলন। ভাঙতে ভাঙতে বাম থেকে ডানে কাত হয়, কখনো বামে কাত হয়। আছে কে? শক্তিশালী একটা দল করে দেন। মাঠে দেখা হবে।

শেখ হাসিনা বলেন, একটি দল তখনই জনগণের বিশ্বাস ও আস্থা অর্জন করে যখন জানে, সেই দল নির্বাচনে জয়ী হলে কে হবে সরকারপ্রধান। এটি সবাই বিবেচনা করে। কিন্তু তারা কাকে দেখাবে? এতিমের টাকা মেরে দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে? আমিই নির্বাহী আদেশে তাঁর সাজা স্থগিত করেছি। নাকি তারা গ্রেনেড হামলার মামলায় সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি, যে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব ছেড়ে ব্রিটিশ নাগরিক হয়ে আছে তাকে? এই নেতৃত্ব নিয়ে তারা ইলেকশন করবে কীভাবে, সেটিই বড় কথা। চেয়ারম্যান করতে পারে, এ রকম একটা যোগ্য নেতাও কি নেই?

দক্ষিণাঞ্চলে কৃষিবিপ্লব হবে : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, পদ্মা সেতু হওয়ায় দক্ষিণাঞ্চলে কৃষিবিপ্লব হবে। আজ সকালেই আমার সঙ্গে একজনের কথা হলো। ফরিদপুরে তার চামড়া ইন্ডাস্ট্রি আছে, জুতা তৈরি করে। আমি তাকে বললাম, এখন কৃষি প্রক্রিয়াজাত শিল্প করবা। সেই ব্যবস্থা নাও। আমরা এখন কৃষিকে গুরুত্ব দিচ্ছি। তিনি বলেন, খাদ্যপণ্যটাই আমাদের সবচেয়ে দরকারি। খাদ্য উৎপাদন হলে দেশের খাদ্য চাহিদাও মেটানো যাবে। শেখ হাসিনা বলেন, খাদ্য প্রক্রিয়াজাত করলে শুধু রপ্তানি নয়, দেশেও কিন্তু বাজার সৃষ্টি হচ্ছে। এখন তো আল্লাহর রহমতে দারিদ্র্য বিমোচন হচ্ছে। আমরা গ্রামে গ্রামে উন্নয়ন করছি। তিনি আরও বলেন, এখন তো কাজের লোক পাওয়া যাবে না, তাই ঘরে বসে যেন ‘রেডি টু কুক’ বা রান্নার জন্য প্রস্তুত, খাওয়ার জন্য প্রস্তুত- এ রকম থাকলে সবার জন্য সুবিধা হয়। বাড়ির গৃহিণীরা বেশি খুশি হবে। কষ্ট করে মাছ কাটতে হবে না, তরকারিও কাটতে হবে না, প্রস্তুত করা খাবার বাসায় এনে শুধু রান্না করে খাবে। আমি বলেছি, এ ধরনের শিল্পকারখানার উদ্যোগ নিতে হবে, বিশেষ করে দক্ষিণাঞ্চলে।

আপনারা তদন্ত করুন : ড. মুহাম্মদ ইউনূস কোনো একটি ফাউন্ডেশনে ৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থ দিয়েছিলেন- এক আওয়ামী লীগ নেতা ও সংসদ সদস্য সম্প্রতি এমন বক্তব্য দিয়েছেন। এ বিষয়ে তদন্ত হবে কি না- এমন প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারা সাংবাদিক। আপনারাও তো তদন্ত করতে পারেন, কিন্তু করেন না। আপনারা তদন্ত করুন। একজন ব্যাংকের এমডি হয়ে কোনো ফাউন্ডেশনে এত অর্থ কীভাবে দেন? আপনারা অনুসন্ধান করুন। আমি (তদন্ত) করতে গেলে তো আবার বলবেন প্রতিহিংসাপরায়ণ। তাই আপনারা খুঁজে বের করলেই ভালো হয়। ড. ইউনূসের আর্থিক অনিয়ম নিয়ে আরও অভিযোগ রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, কোন ব্যাংকে কত টাকা আছে, কোন ব্যাংক থেকে কত টাকা সরিয়ে নিয়েছেন, সেগুলো খুঁজে বের করুন। কোনো ফাউন্ডেশন বা ট্রাস্ট করে তার টাকা কীভাবে ব্যক্তিগত হিসাবে চলে যায়? এক চেকে ৬ কোটি টাকা তুলে নিয়ে ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে জমা করে, সেই টাকা উধাও (ভ্যানিশ) করে দেওয়া হলো! এসব বিষয় নিয়ে অনুসন্ধানের আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, বেশিদিন আগের কথা তো নয়। ২০২০ সালের কথা। অ্যাকাউন্ট নম্বর তো আছেই। আপনারা অনুসন্ধান করুন, তথ্য বের করুন। তারপর ব্যবস্থা নেওয়ার প্রয়োজন হলে আমরা নেব।

জুজুর ভয় দেখিয়ে লাভ নেই : পদ্মা সেতুতে বিশ্বব্যাংক অর্থায়ন বন্ধ করলেও বাংলাদেশের নামে বরাদ্দকৃত টাকা তারা ফেরত নিতে পারেনি বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, বিশ্বব্যাংক কোনো অনুদান দেয় না। আমরা লোন নিই। যে টাকাটা বাংলাদেশের নামে স্যাংশন হবে, সেটা নষ্ট করার কোনো রাইট তাদের নেই। পদ্মা সেতু থেকে টাকা তারা বন্ধ করছে, কিন্তু ওই টাকা আমরা উদ্ধার করতে পেরেছি। এ টাকা আমরা অন্যান্য প্রজেক্টে ব্যবহার করতে পেরেছি। বিশ্বব্যাংক কোনো একটি দেশের একটি প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দ দিলে দেশটি চাইলে অন্য প্রকল্পে ব্যবহার করতে পারে। এরা দাতা নয়। আমরা ভিক্ষা নিই না। তিনি বলেন, আমি ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে ওই দাতা কথাটি বন্ধ করে দিলাম। আমি বলেছি, কীসের দাতা? এরা উন্নয়ন সহযোগী।

গণমাধ্যমেরও বিষয়টি মাথায় রাখা উচিত উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, আমরা কিন্তু কারও থেকে ভিক্ষা নিই না। ঋণ নিই। সঙ্গে সঙ্গে পরিশোধও করি। এটুকু ঠিক, সুবিধাটা স্বল্পসুদ। আমাদের কেউ করুণা করে না। আমরা কারও করুণা ভিক্ষা নিইনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, একসময় আমরা কনসোর্টিয়ামের মিটিংয়ে প্যারিসে যেতাম। আমি বললাম, প্রতিদিন আমরা যাব কেন? ওরা এসে এখানে টাকা দিয়ে যাবে। আমি শুরু করলাম। আমরা ঢাকায় মিটিং করেছি। এই টেকনিক্যাল জিনিসগুলো জানা দরকার। আমাদের জুজুর ভয় দেখিয়ে লাভ নেই। তিনি বলেন, বাংলাদেশ কখনো কোনো চাপের কাছে নতিস্বীকার করেনি, করবেও না। আমাদের যে আত্মবিশ্বাস আছে তা নিয়েই আমরা এগিয়ে যাব এবং জনগণের শক্তি নিয়েই দেশ এগিয়ে যাবে।

প্রয়োজনীয়তা দেখে দ্বিতীয় পদ্মা সেতু : দ্বিতীয় পদ্মা সেতু নির্মাণে সরকারের ভাবনা সম্পর্কে জানতে চাইলে শেখ হাসিনা বলেন, সারা দেশে বিভিন্ন সেতু নির্মাণ করে সংযোগ তৈরি করেছি। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর দ্বিতীয়টার জন্য আয়োজন রয়েছে। তবু আগে দেখতে হবে, এটার প্রয়োজনীয়তা কতটুকু? সেটা বিবেচনা করে করা হবে। এখনই এত বড় একটা কাজ শেষ করে, আবার আরেকটা শুরু করতে পারব না। তিনি বলেন, ভবিষ্যতে যখন প্রয়োজন হবে করব। আগেই বলেছি কোনো প্রয়োজন হলে সেটা থেকে রিটার্ন কী আসবে, সেটাও আমাকে দেখতে হবে। সেটা দেখেই প্রকল্প নেব।

পদ্মা সেতু নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্যের জবাব : প্রশ্নোত্তরের আগে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি ১৯৯৭ সালে জাপান সফরে পদ্মা ও রূপসা নদীর ওপর সেতু নির্মাণের প্র্রস্তাব করি। জাপান সরকার দুটি নদীর ওপরই সেতু নির্মাণে রাজি হয়। যেহেতু পদ্মা অনেক খরস্রোতা ও বিশাল নদী, তাই পদ্মা নদী সমীক্ষা শুরু করে। আর রূপসা নদীর ওপর আমার অনুরোধের আগেই নির্মাণকাজ শুরু করে। ২০০১ সালে পদ্মা সেতু নির্মাণের সমীক্ষার তথ্য আমাদের দেয়। শেখ হাসিনা বলেন, জাপানের সমীক্ষায় মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে পদ্মা সেতু নির্মাণের স্থান নির্বাচন করা হয়। এ সমীক্ষার ভিত্তিতে ২০১১ সালের ৪ জুলাই আনুষ্ঠানিকভাবে আমি মুন্সীগঞ্জের মাওয়ায় পদ্মা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করি। এরপর নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে পদ্মা সেতু নির্মাণের বিভিন্ন ধাপের কথা তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। পদ্মা সেতু নিয়ে যারা নেতিবাচক মন্তব্য করেছিলেন, তাদেরও কিছু বক্তব্য তুলে ধরে তার জবাব দেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, আশা করি পদ্মা সেতুর মান নিয়ে কেউ কোনো প্রশ্ন তুলতে পারবে না।

পদ্মা সেতু এশিয়ান হাইওয়ের সঙ্গে সংযোগের বড় লিঙ্ক : প্রধানমন্ত্রী বলেন, পদ্মা সেতু ঘিরে গড়ে উঠবে নতুন অর্থনৈতিক অঞ্চল ও হাইটেক পার্ক। ফলে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট হবে। দেশে শিল্পায়নের গতি ত্বরান্বিত হবে। পদ্মা সেতু এশিয়ান হাইওয়ের সঙ্গে সংযোগেরও একটি বড় লিঙ্ক। তাই আঞ্চলিক বাণিজ্যে এ সেতুর ভূমিকা অপরিসীম। তা ছাড়া পদ্মার দুই পারে পর্যটন শিল্পেরও ব্যাপক প্রসার ঘটবে। শেখ হাসিনা বলেন, পদ্মা সেতু নির্মাণ বা এর কাজের গুণগতমান নিয়ে কোনো আপস করা হয়নি। এ সেতু নির্মিত হয়েছে বিশ্বের সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ও উপকরণ দিয়ে। পুরো নির্মাণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে সর্বোচ্চ মান বজায় রেখে।

বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকার আন্তরিকভাবে কাজ করছে : সংবাদ সম্মেলনের শুরুতেই বন্যা পরিস্থিতি তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বন্যার ঝুঁকির কথা তুলে ধরে সরকারের তরফ থেকে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি রয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, বন্যা শুরু হয়েছে, সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বন্যার ঝুঁকিটা আমাদের থাকে। সেজন্য আমাদের আগাম প্রস্তুতি আছে। 

সব দলের অংশগ্রহণে অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন হবে : প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেছেন, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন (ইসি) সম্পূর্ণ স্বাধীন। নির্বাচন কমিশনের চাহিদা অনুযায়ী সরকার সহায়তা করে থাকে। স্বাধীনভাবে নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব পালনে সহায়তা করা সরকার ও নির্বাহী কর্তৃপক্ষের আবশ্যিক দায়িত্ব। আশা করি সব রাজনৈতিক দলের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হবে। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে একাদশ সংসদের বাজেট অধিবেশনের গতকালের বৈঠকে টেবিলে উত্থাপিত প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে তিনি এ কথা বলেন।

বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য সৈয়দ আবু হোসেন বাবলার উত্থাপিত প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা আরও বলেন, দেশের গণতন্ত্রের বিকাশ ও অগ্রযাত্রায় আওয়ামী লীগই অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে। বর্তমান কমিশন সংবিধান ও প্রচলিত আইনের অধীনে জাতীয় সংসদসহ সব ধরনের নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে বদ্ধপরিকর। সব রাজনৈতিক দলের নির্বাচনে অংশগ্রহণসহ দলীয় কার্যক্রম নির্বিঘ্নে করার পরিবেশ নিশ্চিত করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টিতে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার আন্তরিক এবং ইতিবাচক ভূমিকা পালন করে আসছে। এ সময় তিনি ইসি নিয়োগে আইন প্রণয়ন, অনুসন্ধান কমিটির মাধ্যমে নতুন কমিশন গঠন, ইভিএম চালু, স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স প্রবর্তন, ভোটার নিবন্ধন, ভোটার তালিকা তৈরিসহ নির্বাচন কমিশনের কর্মকাণ্ড এবং সরকারের বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত সংসদে তুলে ধরেন।

মেগা প্রকল্পে অধিকাংশ বৈদেশিক ঋণ নমনীয়, সুদের হার কম : বিরোধী দল জাতীয় পার্টির ফখরুল ইমামের প্রশ্নের লিখিত জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানান, মেগা প্রকল্প অনুমোদনের আগে যথাযথ আর্থিক ও অর্থনৈতিক বিশ্লেষণ করা হয়েছে। ফলে এসব প্রকল্প বাস্তবায়নের বিরূপ কোনো প্রভাবের সম্ভাবনা নেই। যে কারণে প্রকল্প বাস্তবায়নের ধারা অব্যাহত রাখা সম্ভব হবে। তিনি আরও জানান, মেগা প্রকল্পগুলোর অধিকাংশ বৈদেশিক ঋণ বা অনুদান সহায়তায় গ্রহণ করা হলেও এসব ঋণ নমনীয় প্রকৃতির। সুদের হার তুলনামূলক কম ও ঋণ পরিশোধের মেয়াদ এবং গ্রেস পিরিয়ডও অনেক। উন্নয়ন সংস্থার দেওয়া ঋণের অর্থ অবমুক্তির ক্ষেত্রে বড় ধরনের কোনো জটিলতা দেখা যায়নি বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

২০৪১ সালে উচ্চ আয়ের দেশে উন্নীত হবে : কিশোরগঞ্জ-৫ আসনের সরকারি দলের এমপি মো. আফজাল হোসেনের প্রশ্নের লিখিত জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, নানামুখী উদ্যোগ বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে আমরা ২০৩১ সালে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালে উচ্চ আয়ের দেশে উন্নীত হব ইনশা আল্লাহ।

সংসদ নেতা বলেন, কৃষিকে আধুনিকায়নের লক্ষ্যে কৃষকদের কৃষি যন্ত্রের ক্রয়মূল্যের ওপর ৫০ থেকে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত সহায়তার মাধ্যমে হ্রাসকৃত কম মূল্যে কৃষি যন্ত্রপাতি সরবরাহ করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকারের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য হলো চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের উপযুক্ত তথ্য-প্রযুক্তিনির্ভর দক্ষ মানবসম্পদ সৃষ্টি করা। সে লক্ষ্যে সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষার্থীদের ৩০ শতাংশে উন্নীত করার পরিকল্পনা করেছে। এ ছাড়া চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের চ্যালেঞ্জসমূহ বিবেচনায় নিয়ে প্রতিযোগিতামূলক বাজারে টিকে থাকার লক্ষ্যে শিল্প খাতে নিয়োজিত জনশক্তির যুগোপযোগী দক্ষতা নিশ্চিত করতে অধিকতর ফলাফলভিত্তিক একটি প্রশিক্ষণ প্রকল্প গ্রহণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে গঠিত ‘জাতীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন তহবিল’ এর কার্যক্রম পূর্ণাঙ্গভাবে শুরু করার জন্য স্থায়ী জনবল নিয়োগ শুরু হয়েছে। জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (এনএসডিএ) জাতীয় দক্ষতা পোর্টাল বিনির্মাণ ও জাতীয় দক্ষতা নীতি প্রণয়নপূর্বক বাস্তবায়ন শুরু করেছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর