মঙ্গলবার, ২৮ জুন, ২০২২ ০০:০০ টা

অর্থবছরের শেষেও বাজেট বাস্তবায়ন অর্ধেক

মানিক মুনতাসির

চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের সমাপ্তি ঘটবে আর মাত্র তিন দিন পরই। অর্থাৎ ৩০ জুন নতুন বাজেট পাস হলে ১ জুলাই থেকে নতুন অর্থবছরের বাজেট বাস্তবায়ন শুরু হবে। এরই মধ্যে জুন-মার্চ নয় মাসের বাজেট বাস্তবায়নের প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। এতে চলতি অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে বাজেটের মাত্র ৪৪ শতাংশ বাস্তবায়ন হয়েছে, যা অর্ধেকেরও কম। এতে হতাশা ব্যক্ত করেছেন অনেকেই।

এদিকে টানা দুই বছরের মহামারির পর চলতি বছরের শুরুতে করোনার প্রকোপ স্তিমিত হয়ে আসে। এতে জমজমাটভাবে শুরু হয় সব ধরনের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড। অবশ্য গত দু-তিন সপ্তাহ ধরে করোনার সংক্রমণে আবারও ঊর্ধ্বমুখিতা দেখা দিয়েছে। তবে সরকারের বাজেট বাস্তবায়নে গতি ফেরেনি। চলতি অর্থবছরের নয় মাসে (জুলাই-মার্চ) সংশোধিত বাজেটের মাত্র ৪৪ শতাংশ বাস্তবায়ন হয়েছে। আর মূল বাজেটের ক্ষেত্রে এ হার আরও কম- ৪৩ শতাংশ। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ বাজেট বাস্তবায়নের এ খসড়া হিসাব চূড়ান্ত করেছে। অর্থ বিভাগ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটের আকার ধরা হয় ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা। যদিও পরে সংশোধিত বাজেটে তা কমিয়ে ৫ লাখ ৯৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর বিপরীতে অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে ব্যয়ের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৬২ হাজার ৬৪৪ কোটি টাকা। গত ২০২০-২১ অর্থবছরের একই সময়ে মোট ব্যয়ের পরিমাণ ছিল ২ লাখ ৪২ হাজার ৩৪ কোটি টাকা। এ বিষয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, বাজেট বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সব সময়ই এমন চিত্র দেখা যায়। অর্থবছরের শেষ তিন মাসে তাড়াহুড়া করে এডিপির অর্থ ব্যয় দেখানো হয়। এতে বাজেট বাস্তবায়নের গুণাগুণ নষ্ট হয়, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির অভাব পরিলক্ষিত হয়। এটা অনেক ক্ষেত্রেই হতাশাজনক বলে তিনি মনে করেন। এদিকে বাজেটের উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, সাধারণভাবে কোনো অর্থবছরই পুরো বাজেট বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয় না। এমনকি সংশোধিত বাজেটও পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয় না। গত পাঁচ বছরে মূল বাজেটের গড়ে ৮১ শতাংশ এবং সংশোধিত বাজেটের গড়ে ৮৬ দশমিক ৮০ শতাংশ বাস্তবায়িত হয়েছে। এ চিত্রকেও হতাশাজনক বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। কেননা সরকারের বাজেট বাস্তবায়কারী সংস্থাগুলোর স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির অভাবে বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে গতি আসে না। অর্থবছরের শেষে এসে তাড়াহুড়া করে এডিপির শতভাগ বাস্তবায়ন দেখানো হয়। এতে সরকারি অর্থের অপচয় ঘটে বলে মনে করেন ড. হোসেন জিল্লুর রহমান। অর্থ বিভাগের হিসাব মতে, নয় মাসে সার্বিক লক্ষ্যমাত্রার (এনবিআর ও এনবিআর-বহির্ভূত) ৬৯ শতাংশ রাজস্ব আদায় হয়েছে। মূল বাজেটে সার্বিক রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ৩ লাখ ৮৯ হাজার কোটি টাকা। এর বিপরীতে আদায় হয়েছে ২ লাখ ৭০ হাজার ৬৬৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আওতাধীন রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা। এর বিপরীতে নয় মাসে আদায় হয়েছে ২ লাখ ৩৯ হাজার ৬৮৯ কোটি টাকা (লক্ষ্যমাত্রার ৭২ শতাংশ)। ফলে বাজেটে শুধু ব্যয়ের বেলায়ই ধীরগতি রয়েছে এমনটি নয়, আয়ের ক্ষেত্রেও ধীরগতি বিরাজ করছে। এর গতি বাড়াতে মূলত সরকারের বাজেট বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন আনার তাগিদ দিয়েছেন বিশ্লেষকরা।

সর্বশেষ খবর