শনিবার, ৯ জুলাই, ২০২২ ০০:০০ টা

ট্রেন-লঞ্চে বিপর্যয় ভোগান্তিতে যাত্রীরা

গোলাম রাব্বানী

ঈদুল আজহার যাত্রায় শেষ মুহূর্তে ট্রেন-লঞ্চে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। রাজশাহীগামী সিল্কসিটি এক্সপ্রেস দুপুর ২টা ৪৫ মিনিটে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ট্রেন ঢাকায় আসতে দেরি করায় স্টেশন কর্তৃপক্ষ ট্রেনটির যাত্রার সময় দুই দফায় পিছিয়ে দেয়। প্রথমে বিকাল সাড়ে ৫টায় সময় বেঁধে দিলেও পরে তা আরও পিছিয়ে ৬টা ৫ মিনিট করা হয়। অতিরিক্ত যাত্রীর চাপে চাকার স্পিরিং ভেঙে প্রায় ৭ ঘণ্টা বন্ধ ছিল পঞ্চগড় এক্সপ্রেস ট্রেন।

দীর্ঘ সময় ট্রেনের জন্য অপেক্ষায় চরম ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা। ট্রেনের ছাদসহ কোথাও তিল ধারণের জায়গা ছিল না। অনেককে ঝুলে ঝুলে যেতে দেখা গেছে।

এদিকে ঈদযাত্রার শেষ মুহূর্তে ঢাকা নদীবন্দর সদরঘাট টার্মিনালে ঘরমুখী মানুষের ভিড় বাড়তে থাকে। লঞ্চগুলোতে অতিরিক্ত যাত্রী বহন না করার নির্দেশনা থাকলেও বেশির ভাগ লঞ্চ কর্তৃপক্ষ সেই নির্দেশনা মানছে না। লঞ্চের ছাদে যাত্রীদের সমাগম দেখা গেছে। টার্মিনালে দুপুর থেকে পটুয়াখালীগামী লঞ্চের সংকট দেখা যায়। এ সময় যাত্রীরা পন্টুনে বসে অপেক্ষা করেন। বিকাল থেকে পটুয়াখালীগামী লঞ্চ পন্টুনে ভিড়লে যাত্রীরা তড়িঘড়ি করে লঞ্চে ওঠেন। তবে পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় এবার ঈদযাত্রায় সদরঘাট টার্মিনালে তুলনামূলক চাপ কম। গতকাল সদরঘাট টার্মিনালে ভোর থেকেই যাত্রীর ভিড় বাড়তে থাকে। যাত্রীরা পরিবার-পরিজন ও মালামাল নিয়ে গন্তেব্যের উদ্দেশে লঞ্চে উঠেন। অনেককেই পন্টুনে মালামাল নিয়ে বসে থাকতে দেখা যায়। সকাল থেকে দক্ষিণাঞ্চলের ৪৩টি রুটের লঞ্চগুলোতে অন্যান্য দিনের তুলনায় যাত্রীর চাপ বেশি ছিল।

ট্রেনে বিপর্যয় : গতকাল রাজশাহীর যাত্রী শফিক আহমেদ বলেন, চলতে ফিরতেই চার-চারটা ঘণ্টা পার করে ফেললাম। চেয়ে থাকতে থাকতে চোখ ব্যথা হয়ে গেল! তবুও এলো না সিল্কসিটি এক্সপ্রেস। স্টেশন ঘুরে দেখা গেছে, বিভিন্ন প্ল্যাটফরমে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে অপেক্ষায় রয়েছেন শত শত যাত্রী। গরমে নাকাল হয়ে ট্রেনের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন তারা। রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলার বাসিন্দা আশিক। তিনি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করেন। ঈদের ছুটিতে যাবেন গ্রামের বাড়িতে। বিকালে তিনি বলেন, ট্রেন ধরার জন্য দুপুরের আগেই স্টেশনে পৌঁছেছি। পাঁচ ঘণ্টা বসে থেকেও ট্রেনের দেখা মেলেনি। দেখা গেছে, তারাকান্দিগামী যমুনা এক্সপ্রেস বিকাল ৪টা ৪৫ মিনিটে ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত দুই নম্বর প্ল্যাটফরমেই ছিল। এ ছাড়া আখাউড়াগামী তিতাস কমিউটার ৫টা ৪৫ মিনিটে, টাঙ্গাইল কমিউটার ৬টা, দেওয়ানগঞ্জগামী ব্রহ্মপুত্র এক্সপ্রেস সোয়া ৬টা এবং কিশোরগঞ্জগামী ১১ সিন্দু ৬টা ৪০ মিনিটে ছেড়ে যাওয়ার অপেক্ষায় ছিল। ঈদযাত্রার চতুর্থ দিন কমলাপুর থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে যেসব ট্রেন ছেড়ে গেছে তার প্রতিটিতেই ছিল উপচেপড়া ভিড়। অতিরিক্ত যাত্রীর চাপের পাশাপাশি ট্রেনগুলোও ছেড়েছে কিছু বিলম্বে।

লঞ্চ সংকট : সদরঘাট টার্মিনাল সূত্রে জানা যায়, গতকাল ভোর ৫টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত টার্মিনালে লঞ্চ এসেছে ৮৯টি এবং টার্মিনাল ছেড়ে গেছে ৮৬টি লঞ্চ। পটুয়াখালীগামী লঞ্চের যাত্রী মুকুল মিয়া বলেন, সদরঘাটে যাত্রীদের জন্য লঞ্চের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা আছে। কিন্তু টার্মিনালে এসে দেখেন, ওই রুটের কোনো লঞ্চ নেই। এরপর পরিবার-পরিজন নিয়ে টার্মিনালের পন্টুনে লঞ্চের অপেক্ষায় বসে থাকেন তিনি। বিকালের দিকে লঞ্চ এলে টিকিট নিয়ে লঞ্চে ওঠেন। এদিকে গতকাল সকাল সাড়ে ৯টার দিকে হাতিয়াগামী এমভি ফারহান-৩ ও কর্ণফুলী লঞ্চের কর্মচারীদের মধ্যে নিজেদের লঞ্চে যাত্রী ওঠানোকে কেন্দ্র করে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। ঘটনাটি বিআইডব্লিউটিএর কর্মকর্তারা জানতে পেরে অভিযুক্ত এমভি ফারহান-৩ লঞ্চের চার কর্মচারীকে আটক করেন। আটক ব্যক্তিরা সদরঘাট এলাকায় কোনো লঞ্চে কাজ করবেন না এই মর্মে মুচলেকা দিলে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। বিআইডব্লিউটিএর নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের ঢাকা নদীবন্দরের যুগ্ম পরিচালক মো. শহিদউল্যাহ বলেন, সকালে লঞ্চে যাত্রী ওঠানোকে কেন্দ্র করে এমভি ফারহান-৩ ও কর্ণফুলী লঞ্চের কর্মচারীদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। তিনি আরও বলেন, সকাল থেকে চাঁদপুর, পটুয়াখালী ও হাতিয়া রুটে যাত্রীর ভিড় বাড়তে থাকে। নির্দিষ্ট সময়ের প্রায় ঘণ্টাখানেক আগে বেশ কয়েকটি লঞ্চ ছেড়ে গেছে।

সর্বশেষ খবর