শিরোনাম
রবিবার, ২১ আগস্ট, ২০২২ ০০:০০ টা
চা শ্রমিকের মজুরি ১৪৫ টাকার প্রস্তাব

এক পক্ষ মানল, অন্য পক্ষের প্রত্যাখ্যান

নিজস্ব প্রতিবেদক, সিলেট ও শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি

চা শ্রমিকদের মজুরি ১৪৫ টাকা করার প্রস্তাব এক পক্ষ মেনে নিলেও প্রত্যাখ্যান করেছে আরেক পক্ষ। প্রত্যাখ্যানকারীরা ৩০০ টাকা মজুরির দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।

গতকাল রাতে শ্রীমঙ্গলে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) নৃপেণ পাল বলেন, আমরা প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাবকে সম্মান জানাই। কিন্তু ভ্যালি নেতৃবৃন্দ ও সাধারণ শ্রমিকরা এ প্রস্তাব মানছেন না।

কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক বিজয় হাজরা বলেন, শ্রমিকরা এ প্রস্তাব না মানায় আমাদের চলমান আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।

গতকাল বিকালে শ্রীমঙ্গলে বিভাগীয় শ্রম দফতর কার্যালয়ে উপাধ্যক্ষ আবদুস শহীদ এমপির নেতৃত্বে চা শ্রমিক নেতাদের নিয়ে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর এ প্রস্তাব জানানো হয় শ্রমিক নেতাদের। বৈঠকে শ্রম অধিদফতরের মহাপরিচালক খালেদ মামুন চৌধুরীসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকে আবদুস শহীদ এমপি বলেন, প্রধানমন্ত্রী চা শ্রমিকদের বিষয়ে খুবই আন্তরিক। সমস্যার কথা শোনার পর থেকে সমাধানের জন্য ব্যস্ত হয়ে উঠেছেন। এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের সঙ্গে তার একাধিকবার কথা হয়েছে। তাকে জানানো হয়েছে প্রধানমন্ত্রী চা শ্রমিকদের ১৪৫ টাকা মজুরি মেনে নেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন। শ্রমিকরা যেন এ প্রস্তাব মেনে নিয়ে ধর্মঘট প্রত্যাহার করে নেন। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রী ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র সফর শেষ করে দেশে এসে চা শ্রমিক নেতাদের নিয়ে গণভবনে বসবেন। তাদের কথা শুনবেন। ওই বৈঠকের পর চা শ্রমিক ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) নৃপেন পাল গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, তারা প্রধানমন্ত্রীর প্রতি সম্মান জানিয়ে ধর্মঘট প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। তার দাবি ছিল প্রধানমন্ত্রী যেন প্রস্তাবটি পুনরায় বিবেচনা করেন। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাদের যে বৈঠক হবে তা যেন ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বড় পর্দায় দেখানো হয়। তাহলে সাধারণ চা শ্রমিকরাও প্রধানমন্ত্রীর কথা শুনতে পারবেন। চাইলে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তারা কথা বলতে পারবেন। তার এ বক্তব্যের পরপরই বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন বিভিন্ন ভ্যালির নেতাকর্মী ও সাধারণ শ্রমিকরা। তারা প্রধানমন্ত্রীর এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে দাবি আদায়ে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।

মনু-ধলই ভ্যালির সভাপতি ধনা বাউরি বলেন, আমরা প্রধানমন্ত্রীর এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলাম। শ্রমিকরা পেটের জ্বালায়, খুদার জ্বালায় ৩০০ টাকা মজুরির দাবিতে আন্দোলন করছেন। দাবি আদায়ে আমরা এ আন্দোলন চালিয়ে যাব।

লস্করপুর ভ্যালির সাধারণ সম্পাদক অনিরুদ্ধ বাড়াইক বলেন, আমরা এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করছি। আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব।

এদিকে নতুন নির্ধারিত শ্রম অধিফতর ও সরকারের সঙ্গে বৈঠকের পর ১৪৫ টাকা মজুরির আশ্বাসে ধর্মঘট প্রত্যাহারের ঘোষণা দিলেও নেতাদের এ সিদ্ধান্তের পর সিলেটে বিক্ষোভ করেন সাধারণ শ্রমিকরা। বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে মালনীছড়া, হিলুয়াছড়া ও তারাপুর চা বাগানের শ্রমিকরা ৩০০ টাকা মজুরির দাবিতে স্লোগান দিতে থাকেন। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ধর্মঘট চালিয়ে যাওয়ারও কথা জানান তারা।

এর আগে দুপুর ১২টার দিকে হবিগঞ্জের বাহুবলে সিলেট-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করেন চা শ্রমিকরা। এ সময় বাহুবল উপজেলার বাগানবাড়ি এলাকার ফয়জাবাদ, রশীদপুর, বৃন্দাবন ও কামাইছড়াসহ পাঁচটি বাগানের কয়েক হাজার শ্রমিক সড়কে অবস্থান নেন। ফলে মহাসড়কের দুই পাশে শত শত যানবাহন আটকা পড়ে সৃষ্টি হয় তীব্র যানজট।

খবর পেয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য শাহ নওয়াজ গাজী মিলাদসহ প্রশাসনের কর্মকর্তা ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে শ্রমিকদের শান্ত করেন। পরে দুপুর ২টার দিকে অবরোধ প্রত্যাহার করেন চা শ্রমিকরা।

গত শনিবার চা শ্রমিকরা এ আন্দোলন শুরু করেছিলেন। এর আগে সরকার ও মালিকপক্ষের সঙ্গে শ্রমিকদের শ্রীমঙ্গল ও ঢাকায় দুই দফা বৈঠক হয়েছিল। সে বৈঠকগুলো কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই শেষ হয়েছিল।

বরিশালে মানববন্ধন : নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল জানান, সিলেটের চা শ্রমিকদের আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে বরিশালে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল সকাল ১০টায় নগরীর সদর রোডের অশ্বিনী কুমার হলের সামনে ধ্রুবতারা ইয়ুথ ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন বরিশালের ব্যানারে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

 

সর্বশেষ খবর