শুক্রবার, ২ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

ওষুধের বাজারে উত্তাপ

জয়শ্রী ভাদুড়ী

ওষুধের বাজারে উত্তাপ

নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রায় সব পণ্যের বাজারে আগুন। এর মধ্যেই বেড়েছে ৫৩টি ওষুধের দাম। আরও বেশ কিছু ওষুধের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব জমা পড়েছে ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরে। ওষুধের দাম বাড়ায় রোগীর চিকিৎসা ব্যয় আরও বাড়ছে। ডলারের মূল্যবৃদ্ধি, আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধিকে ওষুধের দাম বাড়ানোর কারণ হিসেবে বলছে ওষুধ শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো।

ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের মুখপাত্র আইয়ুব হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘ডলারের মূল্যবৃদ্ধি, ওষুধের কাঁচামাল ও মোড়কের দাম বেড়ে যাওয়ায় লাভ না হওয়ায় অনেক কোম্পানি ওষুধ উৎপাদন বন্ধ করে দেয়। তখন বাজারে ওষুধের প্রাপ্যতা কমে যায়। মানুষ যাতে ওষুধ না     পেয়ে চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত না হয় সেটিও আমরা দেখি। ওষুধ কোম্পানি দাম বাড়ানোর আবেদন করলেই যে আমরা দাম বাড়াব তা নয়। আমরা তাদের খরচ যাচাই করে দাম নির্ধারণ করি। তিনি আরও বলেন, ‘লোসারটিলসহ কিছু ওষুধের দাম বেড়েছে। পাইপলাইনে দাম বাড়ানোর আবেদন আছে। আমাদের জেনেরিক আছে ১ হাজার ৬৫০টি। এর মধ্যে সরকার নিয়ন্ত্রণ করে ১১৭টি। এই ওষুধের ভিতরে ৫৩টি ওষুধের দাম পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে। এর বাইরের ওষুধগুলোর দাম বাড়াতে আমাদের কাছে আবেদন করলে আমরা তা যাচাই করে তার আবেদিত মূল্য বা তার চেয়ে কম মূল্য নির্ধারণ করে দিই।’ রাজধানীর ফার্মেসিগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, লোসারটান পটাশিয়াম ৫০ মিলিগ্রামের প্রতি পিসের দাম ৮ টাকা থেকে ১০ টাকা করা হয়েছে। প্যারাসিটামল ৫০০ মিলিগ্রামের ১০ পিস ওষুধের দাম ৮ টাকা থেকে ১২ টাকা হয়েছে। প্যারাসিটামল ৬৬৫ মিলিগ্রাম ১০ পিস ওষুধের দাম ১৫ থেকে ২০ টাকা হয়েছে। প্যারাসিটামল সিরাপের দাম হয়েছে ২০ টাকা থেকে ৩৫ টাকা। অ্যামলোডিপাইন অ্যাটেনোলোল ৫০০ মিলিগ্রামের দাম ৬ টাকা থেকে ৮ টাকা হয়েছে। ব্রোমাজিপাম ৩ মিলিগ্রামের দাম ৫ টাকা থেকে ৭ টাকা হয়েছে। ১০ পিস কিনতে আগে ৫০ টাকা লাগত, এখন থেকে ৭০ টাকা লাগছে। অ্যাসপিরিন ৭৫ মিলিগ্রামের দাম ৬ টাকা থেকে ৮ টাকা হয়েছে। মেট্রোনিডাজোল ৪০০ মিলিগ্রামের দাম ১ টাকা থেকে হয়েছে ২ টাকা।

বাড্ডার সাজিদ মেডিকেল হল নামের ফার্মেসিতে ওষুধ কিনতে এসেছিলেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী শরিফুল ইসলাম। তিনি বলেন, চাল, ডাল, তেল, সবজি সবকিছুর দাম ঊর্ধ্বমুখী। যে কোনো কিছুর দাম বাড়লে সেটা খাওয়া কমিয়ে দিই। তেলের দাম বাড়ার পর তেল কেনা কমিয়েছি। আমি উচ্চ রক্তচাপে ভুগছি। এটা নিয়ন্ত্রণে চিকিৎসকের পরামর্শে নিয়মিত ওষুধ সেবন করতে হয়। আগে এক পাতা ওষুধ ৮০ টাকায় কিনতাম, এখন সেটা ১০০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। আয় একই থাকছে, খরচ বেড়েই চলেছে। বাঁচতে গেলে ওষুধ তো কিনতেই হবে। এ খরচ আমি কীভাবে কমাব? স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের তথ্যমতে, বর্তমানে বাংলাদেশে চিকিৎসা নিতে গিয়ে ব্যক্তির নিজস্ব ব্যয় ৬৮ দশমিক ৫০%। এর মধ্যে ৬৪% ব্যয় হয় ওষুধে। স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের পরিচালক (গবেষণা) ডা. নুরুল আমিন বলেন, চিকিৎসা নিতে গিয়ে ওষুধে মানুষের সবচেয়ে বেশি ব্যয় হয়। ওষুধের দাম বাড়লে আউট অব পকেট এক্সপেন্ডিচার আরও বেড়ে যাবে। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘দেশে চিকিৎসা ক্ষেত্রে ব্যক্তির পকেট থেকে খরচ সবচেয়ে বেশি, প্রায় ৭২ শতাংশ। আমাদের দেশে স্বাস্থ্যবীমা নেই। এই বাড়তি ওষুধের দাম রোগীর ওপরে চাপ আরও বাড়াবে। তিনি বলেন, ৩০টি বড় ওষুধ কোম্পানি হাজারখানেক চিকিৎসককে ৫০০ কোটি টাকা ঘুষ দেয়। এই টাকা তো তারা নিজের পকেট থেকে দেয় না, ওষুধের দাম বাড়িয়ে সেটা তোলে।’ তিনি আরও বলেন, ‘১৯৯৪ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া একটা ভুল করেছিলেন ওষুধের দামে ইন্ডিকেটিভ প্রাইস ঠিক করে দিয়ে। ১১৭টা ওষুধের মূল্য সরকার নিয়ন্ত্রণ করে, বাকি ৩০০টি ওষুধের মূল্য কোম্পানি নিয়ন্ত্রণ করে। কোম্পানি তার মর্জি মতো দাম বসিয়ে ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরে নিয়ে যায়। ঔষধ প্রশাসন অধিদফতর তখন এর সঙ্গে ভ্যাট যোগ করে একটা মূল্য নির্ধারণ করে দেয়। ১৯৮২ সালের ওষুধ নীতিতে ফেরত না গেলে কেউ রেহাই পাবে না, ওষুধের দাম কমবে না।’ ওষুধ শিল্প সমিতির মহাসচিব এস এম শফিউজ্জামান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, গত মাসে ওষুধের কাঁচামাল আমদানির জন্য এলসি খুলেছিলাম ডলারের দাম ৮০ টাকায়। এখন যখন শিপমেন্ট এসে পৌঁছাচ্ছে তখন ডলারের দাম উঠেছে ১১০ টাকায়। প্রতি ডলারে ৩০ টাকা করে বেশি দিতে হয়েছে। প্রাইস পলিসি মোতাবেক প্রত্যেক বছরের বাজারের আর্থিক অবস্থা যাচাই করে এমআরপি পণ্যের দাম নির্ধারণ করার কথা। কিন্তু ২০ বছরেও তা করা হয়নি। প্যারাসিটামল শিশুরা খায়, তাই এতদিন আর্থিক ক্ষতি হলেও উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো আপত্তি করেনি। আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালের দামও চড়া। এখন কিছু ওষুধের দাম না বাড়ালে প্রতিষ্ঠানের টিকে থাকা মুশকিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে এমআরপি প্রোডাক্টের কিছু দাম বেড়েছে।’

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর