বুধবার, ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

যতক্ষণ মোদি আছেন সমস্যার সমাধান করে ফেলব : শেখ হাসিনা

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমি জানি, যতক্ষণ পর্যন্ত মোদি আছেন, বাংলাদেশ-ভারত আমরা সব সমস্যার সমাধান করে ফেলব। আমরা বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে অনেক অনিষ্পন্ন সমস্যার সমাধান ইতোমধ্যে করেছি। আমি আশা করি, তিস্তা পানি বণ্টন চুক্তিসহ অন্যান্য অনিষ্পন্ন বিষয়গুলো শিগগিরই সম্পন্ন করতে পারব।

গতকাল ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লির হায়দরাবাদ হাউসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক শেষে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, আমাদের দুঃখের সময় ভারতই আমাদের পাশে থাকে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ভারত বাংলাদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং নিকটতম প্রতিবেশী। গত ৫০ বছরে একটি শক্তিশালী অংশীদারিত্ব তৈরির মাধ্যমে দুই দেশ পারস্পরিক স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে কাজ করছে। আজকে আমরা কুশিয়ারা ইস্যু সমাধান করেছি এবং আমি আশাবাদী, মোট যে ৫৪টি নদী আছে, সেগুলোর সমাধান হবে। ৫৪টি অভিন্ন নদী এবং ৪ হাজার কিলোমিটার সীমান্ত বেষ্টিত বাংলাদেশ ও ভারত দুই দেশ তাদের জনগণের সম্মিলিত কল্যাণে বদ্ধপরিকর। শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ ও ভারত অংশীদার হিসেবে একসঙ্গে কাজ করতে পারলে কেবল তা দুই দেশের জন্যই নয়, বরং পুরো অঞ্চলে শান্তি ও সমৃদ্ধি বয়ে আনবে। আমাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বজায় রাখতে এবং আমাদের দুই দেশের ও আঞ্চলিক শান্তি, নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সহযোগিতামূলক প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে আমি ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি একমত হয়েছি। দুই দেশের মধ্যে স্বাক্ষর হওয়া বেশ কিছু সমঝোতা স্মারকের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যেটা আমাদের দুই দেশের সম্পর্ককে আরও উন্নত করবে। আর আমাদের দুই দেশের মানুষের আরও বেশি উন্নতি হবে, সেই সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।

বাংলাদেশ-ভারত দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে ‘প্রতিবেশী কূটনীতির’ রোল মডেল হিসেবে দেখার কথাও বলেন শেখ হাসিনা। তিনি ভারতের স্বাধীনতার ৭৫তম বছর পূর্তি উপলক্ষে বছরব্যাপী আয়োজিত ‘আজাদি কা অমৃত মহোৎসব’-এর সফল সমাপ্তির জন্য ভারতকে অভিনন্দন জানান। দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় বৈঠককে আরেকটি ‘ফলপ্রসূ আলোচনা’ হিসেবে বর্ণনা করে বলেন, এই বৈঠকের ফল দুই দেশের জনগণকেই উপকৃত করবে বলে আমি আশা করছি। দুই দেশের মধ্যকার প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন এবং পারস্পরিক অগ্রাধিকারমূলক বিষয় আলোচনায় স্থান পায় জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, কানেকটিভিটি, ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগ, পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা, নিরাপত্তা, সীমান্ত এবং ঋণ সুবিধার ক্ষেত্রগুলো নিয়ে আলোচনা হয়। ভারতের সরকারপ্রধান নরেন্দ্র মোদির দূরদর্শী নেতৃত্বের প্রশংসা করে শেখ হাসিনা বলেন, এটি আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে আরও গতি প্রদান করেছে। ইংরেজিতে তাঁর ভাষণ শুরু করলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলায় বলেন, প্রতিবেশীদের সমস্যা যে আলাপ-আলোচনার মধ্যে সমাধান করা যায়, বাংলাদেশ-ভারত সেই দৃষ্টান্ত দেখিয়েছে। ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রী মোদিজির ভাষণে আপনারা সেটা পেয়েছেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারত সরকার এবং দেশটির জনগণের ত্যাগের কথা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, সেই সময় থেকে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ইতিহাস, সংস্কৃতি, পারস্পরিক আস্থা ও সম্মান, দীর্ঘস্থায়ী বন্ধুত্ব এবং সহযোগিতার সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, তিন বছর পর আবার ভারত সফর করছেন, এটা তাঁর জন্য আনন্দের। ১৯৭৫ সালে যখন বাবা, মা, ভাই- সব হারিয়ে আমরা অসহায় দুই বোন এই ইন্ডিয়াতেই আশ্রয় পেয়েছিলাম। শুধু আমি না, আমাদের পরিবারের আরও অনেকেই আপনজন হারিয়ে গুলিতে আহত অবস্থায় এখানেই আশ্রয় নিয়েছিল। ইন্ডিয়া আমাদের দুঃখের সময় আমাদের পাশে থাকে।

সর্বশেষ খবর