শনিবার, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

অদিতা ধর্ষণ হত্যায় তিনজন গ্রেফতার

নোয়াখালী প্রতিনিধি

নোয়াখালী সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী তাসনিয়া হোসেন অদিতা (১৪) ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় তিনজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তারা হলো- নোয়াখালী পৌরসভার লক্ষ্মীনারায়ণপুরের খলিল মিয়ার ছেলে আবদুর রহিম রণি (২০), অজি উল্লার ছেলে মো. সাঈদ (২০) ও ইসরাফিল আলম (১৪)। গতকাল দুপুরে নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার মো. শহীদুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়- রণির প্রাইভেট থেকে কিছুদিন আগে পড়া বন্ধ করে দিয়ে অন্য স্থানে প্রাইভেট পড়া শুরু করে অদিতা। এতে ক্ষিপ্ত হয় রণি। যদিও পরে   অদিতাদের বাসায় বিভিন্ন সময় আসা-যাওয়া করত সে। অদিতার মা ঘরে না থাকার সুযোগে রণি বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা থেকে ২টার মধ্যে কোনো একসময় বাসায় গিয়ে অদিতাকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। পরে ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার জন্য ঘরে থাকা ছোরা দিয়ে হাত ও গলা কেটে অদিতাকে হত্যা করে এবং ঘটনা ভিন্ন খাতে নেওয়ার জন্য ঘরের আলমারিতে থাকা মালামাল ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখে। কিন্তু কোনো মূল্যবান জিনিস খোয়া যায়নি। পুলিশ সুপার জানান, শিক্ষার্থীর মৃতদেহ উদ্ধারের পরপর পুলিশের একাধিক দল পৃথক অভিযান চালিয়ে ইসরাফিল, তার ভাই সাঈদ ও রণিকে গ্রেফতার করে। রণির মাথা, ঘাড়, গলাসহ শরীরের একাধিক স্থানে নখের আঁচড় দেখে হত্যায় সে জড়িত বলে ধারণা করা হচ্ছে। ঘটনাস্থল থেকে হত্যায় ব্যবহৃত একটি ছোরা উদ্ধার করা হয়েছে।

পুলিশ সুপার জানান, হত্যার ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন। গ্রেফতারদের মধ্যে রণি ও ইসরাফিলকে আসামি হিসেবে এবং সাঈদকে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়। পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সামনে থেকে গ্রেফতারদের গাড়িতে তোলার সময় বিক্ষুব্ধরা রণির ওপর হামলা চালায়। তারা তাকে জুতাপেটা করে। এদিকে খুনিদের বিচার দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ হয়েছে। গতকাল সকাল ১০টা থেকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে মুজিব চত্বরে সচেতন নোয়াখালীবাসীর ব্যানারে শত শত তরুণ, বিভিন্ন নাগরিক সংগঠনের প্রতিনিধি মানববন্ধন ও বিক্ষোভে অংশ নেন। ২ ঘণ্টার বেশি মানববন্ধন ও সমাবেশ শেষে বিক্ষোভ মিছিল নোয়াখালী প্রেস ক্লাবের সামনে এসে সমাবেশের মধ্য দিয়ে শেষ হয়। মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশে অদিতা হত্যার সঠিক তদন্ত ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক বিচারের দাবি জানানো হয়। একই সঙ্গে নোয়াখালীতে আইনশৃঙ্খলার ক্রমাবনতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে মেয়েদের নিরাপত্তা, কিশোর গ্যাং বন্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানানো হয়।

সমাবেশে বক্তব্য দেন উন্নয়ন সংগঠক আবদুল আউয়াল, নারী অধিকার জোটের সভাপতি লায়লা পারভীন, সংগঠক মুনীম ফয়সল, সার্ভিস ফর হিউম্যান বিয়িং অর্গানাইজেশনের সভাপতি ফাহিদা সুলতানা, আলোকিত মানবিক অর্গানাইজেশনের সভাপতি পারভেজ মোল্লা প্রমুখ। এ ছাড়া নোয়াখালী নাগরিক অধিকার আন্দোলন, নোয়াখালী সাইবার ওয়ারিয়র্স, নিরাপদ নোয়াখালী চাই, ড্রিম লাইট অব হেল্প সেন্টার, রয়েল ডিস্ট্রিক্ট নোয়াখালীসহ বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশে সংহতি প্রকাশ করে। প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার নোয়াখালী জেলা শহর মাইজদীর লক্ষ্মীনারায়ণপুরের নিজ বাসায় অদিতাকে গলা ও হাতের রগ কেটে হত্যা করা হয়। রাত ৯টার দিকে লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। অদিতা নোয়াখালী সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী ও লক্ষ্মীনারায়ণপুর মহল্লার আবুল খায়ের পেশকার বাড়ির মৃত রিয়াজ হোসেনের মেয়ে। তার মা স্থানীয় একটি বেসরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা।

সর্বশেষ খবর