শুক্রবার, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

অনিয়মের খেসারত ৬৯ প্রাণ দিয়ে!

করতোয়ায় নৌকাডুবি

পঞ্চগড় প্রতিনিধি

অনিয়মের খেসারত ৬৯ প্রাণ দিয়ে!

পঞ্চগড়ে করতোয়ায় নৌকাডুবিতে এ পর্যন্ত ৬৯ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। আরও তিনজন এখনো নিখোঁজ রয়েছেন। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীদের অভিযোগ, নৌকাটি ছিল ছোট ও পুরনো। এটি ছিল সর্বোচ্চ ৫০ জন যাত্রী ধারণ ক্ষমতার। দুর্ঘটনার দিনে যাত্রী উঠেছিলেন ১০০-এর বেশি। নৌকায় এসব যাত্রী ওঠার সময় স্থানীয় চেয়ারম্যান, পুলিশ এবং ফায়ার সার্ভিসের দায়িত্বশীল লোকও ছিল। স্থানীয়দের প্রশ্ন, তাদের উপস্থিতিতেই ছোট নৌকাটিতে এত যাত্রী উঠেছিল কীভাবে? সংশ্লিষ্টরা এর দায় এড়াতে পারেন না। ঘাট পরিচালনায়ও ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ করেছেন তারা।

মৃত ব্যক্তিদের একজন বাদে সবাই সনাতন হিন্দু ধর্মাবলম্বী। তারা মহালয়ার পূজাতে অংশ নিতে বদেশ্বরী মন্দিরে যাচ্ছিলেন। ২৫ সেপ্টেম্বর আউলিয়ার ঘাটে নদী পার হওয়ার সময় নৌকাটি ডুবে যায়।

স্থানীয়রা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলছেন, ঘাট পরিচালনায় রয়েছে ব্যাপক অনিয়ম। ইজারার শর্তানুযায়ী নতুন নৌকা দেওয়ার কথা। পারাপারের জন্য রাখার কথা অন্তত চারটি নৌকা। অথচ দুর্ঘটনাকবলিত নৌকাটি ছিল অত্যন্ত ছোট এবং অনেক পুরনো। ঘাটে নৌকা ছিল মাত্র দুটি। আউলিয়ার  ঘাট নিয়ন্ত্রণ করে জেলা পরিষদ। প্রতি বছর এই ঘাট থেকে বিপুল অঙ্কের অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা হয়। ইজারার শর্তানুযায়ী, যাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য নানা উদ্যোগ নেওয়ারও শর্ত রয়েছে। কিন্তু ইজারাদার, জেলা পরিষদ বা স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ কেউই এই উদ্যোগ নেননি। ভাড়া ৫ টাকা হলেও প্রত্যেক যাত্রীর কাছে নেওয়া হয় ১০ টাকা। প্রতিদিন মাড়েয়া বামুন পাড়া ইউনিয়নের করতোয়া নদীর এই ঘাট দিয়ে অন্তত ৫ হাজার মানুষ নদী পারাপার হয়। প্রতি বছর মহালয়ার দিনে অন্তত ১০ হাজার মানুষ যাতায়াত করে। এ ছাড়া কার্তিক ও বৈশাখ মাসে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশেষ পূজার দিনে হাজার হাজার পূজারি যাতায়াত করে। স্থানীয়দের অনেকে মন্দির কমিটির লোকদেরও দায়ী করছেন। কারণ সেদিন এত লোক সমাগম হলেও ঘাটে তাদের কোনো স্বেচ্ছাসেবক ছিল না। মন্দির কমিটির সদস্য দীনবন্ধু রায় স্বীকার করেন, আমাদের দায় একটু আছে। ইজারাদার আবদুল জব্বার জানান, চার বছর ধরে এই ঘাট ইজারা নিচ্ছেন তিনি। এবার সাড়ে ৯ লাখ টাকা দিয়ে জেলা পরিষদ থেকে এই ঘাট ইজারা নিয়েছেন তিনি। তিনি বলেন, নৌকাগুলো এক বছর আগে বানানো। মাড়েয়া বামুন পাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবু আনছার মো. রেজাউল করিম (শামীম) জানান, নৌকাডুবির ব্যাপারে জেলা পরিষদ এবং ইজারাদার দায় এড়াতে পারে না। ঘাটের কোনো উন্নয়ন হয়নি। এ ব্যাপারে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আনোয়ার সাদাত সম্রাট বলেন, বদেশ্বরী মন্দিরে মহালয়ার পূজা উপলক্ষে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে একটি কমিটি করে দেওয়া হয়। তারা অনেকেই সেখানে উপস্থিত ছিলেন। সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের চেয়ারম্যানও উপস্থিত ছিলেন। তারা মাঝিকে নির্দেশ দিলে এত যাত্রী উঠত না। এত মৃত্যুর ঘটনাও ঘটত না। ওই নৌদুর্ঘটনার কারণ উদঘাটনে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি করা হয়েছে। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক দীপংকর রায় এই কমিটির আহ্বায়ক। তিনি জানান, তদন্তের পর দায় কার তা বোঝা যাবে। ওই নৌকাডুবির ঘটনায় মৃত ও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে নগদ ৫০ হাজার করে টাকাসহ খাদ্য সহায়তা দিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। বৃহস্পতিবার উপজেলার মাড়েয়া বামনহাট ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে মৃত ও নিখোঁজদের স্বজনদের হাতে এই সহায়তা তুলে দেন রেলমন্ত্রী অ্যাডভোকেট মো. নুরুল ইসলাম সুজন এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান। জেলা প্রশাসক জহুরুল ইসলামের সভাপতিত্বে এ সময় উপস্থিত ছিলেন- দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরের মহাপরিচালক আতিকুল হক, রংপুর বিভাগীয় কমিশনার সাবিরুল ইসলাম, রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি আবদুল আলীম মাহমুদ, পুলিশ সুপার এস এম সিরাজুল হুদা প্রমুখ।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর