সোমবার, ২১ নভেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা
বিশেষজ্ঞ অভিমত

আসামি আনা নেওয়ার ব্যবস্থায় বিস্মিত হয়েছি

জিন্নাতুন নূর

আসামি আনা নেওয়ার ব্যবস্থায় বিস্মিত হয়েছি

মেজর জেনারেল (অব.) আবদুর রশিদ

‘ঢাকার সিজেএম আদালত ফটকের সামনে থেকে মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত দুই জঙ্গি আসামিকে ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় আদালতে আসামি আনা-নেওয়ার ব্যবস্থায় বিস্মিত হয়েছি।’ নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) আবদুর রশিদ গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে এ কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘আদালতে আসামিদের মধ্যে কাউকে ডান্ডাবেড়ি পরিয়ে আবার কাউকে সশস্ত্র অবস্থায় পুলিশ সদস্যরা আনা-নেওয়া করেন। তবে এবার জঙ্গি ছিনতাইয়ের ঘটনায় বড় ধরনের অবহেলা ঘটেছে। আর এমনটি শুধু এক দিনই ঘটেনি। ধারণা করছি জঙ্গিদের সহযোগীরা এ বিষয়টি অনেক দিন পর্যবেক্ষণ করে দুর্বল জায়গা খুঁজে বের করেছে জঙ্গিরা। এ জন্য তাদের অতর্কিত হামলা তারা সার্থকভাবে করতে সক্ষম হয়েছে। তা না হলে এই জনাকীর্ণ এলাকায় এবং শহরের ভিতরে অনেক স্থানে নিরাপত্তা-বেষ্টনী থাকার পরও জঙ্গিরা যে পালিয়ে গেল, তা জঙ্গিদের অনেক দিনের পর্যবেক্ষণের ফসল বলে মনে করছি।’

এই নিরাপত্তা বিশ্লেষক বলেন, ‘এ ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ফাঁকফোকর আগে থেকেই জঙ্গিরা পর্যবেক্ষণ করেছে। তারা অনেক দিন ধরে এটি পর্যবেক্ষণ করে অতর্কিতে হামলা চালিয়েছে। এই আসামিদের নিরাপত্তার জন্য যে পুলিশ সদস্যরা নিয়োজিত ছিলেন, এ অতর্কিত হামলার বিষয়ে তাদের কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতা ছিল না। যার ফলে তারা হঠাৎ এই হামলা ঠেকাতে পারেননি। আদালতের এই জনাকীর্ণ এলাকা থেকে জঙ্গিদের সহযোগীরা তাদের ছিনতাই করতে পারে। কিন্তু তাদের মোটরসাইকেলে করে তুলে নিয়ে যাওয়ার ঘটনাটি আরেকটি বিষয়। ঢাকা শহরে আমাদের নিরাপত্তার যে বলয় আছে, অর্থাৎ মোড়ে মোড়ে পুলিশ থাকে, সেগুলো ভেদ করে যে জঙ্গিরা পালিয়ে গিয়েছে সেই বিষয়টি আমার কাছে বড় বিস্ময়!’ আবদুর রশিদ বলেন, ‘এই ঘটনাটি জনমনে বড় ধরনের শঙ্কা তৈরি করেছে। এই ছিনতাইয়ের ঘটনায় মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত জঙ্গিদের সহযোগীদের উদ্দেশ্য ছিল তাদের মৃত্যুদন্ড থেকে বাঁচানো, একই সঙ্গে প্রশাসনের ক্ষমতাকে অবমূল্যায়ন করা। জঙ্গিরা সেই বার্তা খুব ভালোভাবে দিতে পেরেছে। এখন শঙ্কার জায়গা থেকে ফেরত আসতে চাইলে প্রথমেই যা প্রয়োজন তা হলো জঙ্গিদের পুনরায় গ্রেফতার করা। এরই মধ্যে জোরেশোরে সেই গ্রেফতার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। দেশজুড়ে রেড অ্যালার্ট জারি হয়েছে। সীমান্তে প্রতিরোধব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। সবকিছু দেখে ধারণা করছি পালিয়ে যাওয়া এই দুই জঙ্গি অচিরেই ধরা পড়বে। সেই ধরা পড়ার প্রক্রিয়াতে পুলিশ প্রশাসনসহ গোয়েন্দা বাহিনী সবাই সক্রিয় হয়েছে। তাদের ধরতে খুব বেশি সময় লাগবে বলেও আমি মনে করি না।’

তিনি বলেন, ‘এ ঘটনা থেকে শিক্ষণীয় হচ্ছে, আদালতে যে আসামিরা যাবেন, কারাগারে আনা-নেওয়ার পথে তাদের জন্য কতটা নিরাপত্তা-বলয় তৈরি করতে হবে সেটি নির্ভর করে সেই আসামির রাজনৈতিক চরিত্র, তার জঙ্গিবাদের প্রোফাইল ও দুর্ধর্ষতার ওপর। এ বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে নিরাপত্তা-বলয় তৈরি করতে হবে। আমাদের যে সিস্টেমে নিরাপত্তা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে সেই সিস্টেমকে রিভিজিট করতে হবে। পুনরায় খতিয়ে দেখতে হবে বর্তমান প্রেক্ষাপটে এটি কার্যকর কি না। এটি করতে পারলে আগামী দিনে বাংলাদেশ আরও বেশি নিরাপত্তার-বলয় তৈরি করতে সক্ষম হবে।’

সর্বশেষ খবর