বৃহস্পতিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

এনআইডি সার্ভার ও জনবল যাচ্ছে স্বরাষ্ট্রে

গঠিত হচ্ছে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অধিদফতর, চূড়ান্ত আইনের খসড়া

উবায়দুল্লাহ বাদল

অবশেষে জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধনের (এনআইডি) সব ধরনের কার্যক্রম চলে যাচ্ছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের আওতায়। এ লক্ষ্যে এনআইডির সার্ভার রুমসহ যাবতীয় সরঞ্জাম ও জনবল সুরক্ষা সেবা বিভাগে হস্তান্তর করা হবে। এনআইডি কার্যক্রম পরিচালনায় হস্তান্তরিত জনবলসহ প্রয়োজনীয় জনবলের মাধ্যমে সুরক্ষা সেবা বিভাগের আওতায় ‘জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন অধিদফতর’ নামে নতুন একটি দফতর গঠিত হবে। নতুন এই অধিদফতর দেখভালে সুরক্ষা সেবা বিভাগে ২৫ জনবলের একটি অনুবিভাগ গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে। এসব সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে শিশুর জন্মের পর পরই জাতীয় পরিচয়পত্র (ইউনিক আইডি) দেওয়া হবে। ওই আইডির নম্বরটিই হবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির জন্মনিবন্ধন, জাতীয় পরিচয়পত্র ও ভোটার নম্বর। এমন সব বিধান যুক্ত করে জাতীয় পরিচয় (এনআইডি) নিবন্ধন আইনের খসড়া চূড়ান্ত করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ। সংশ্লিষ্টরা জানান, এর আগে গত ১০ অক্টোবর মন্ত্রিসভা প্রস্তাবিত আইনটির খসড়া নীতিগত অনুমোদন দিলেও খসড়ার কিছু বিষয়ে ন্যূনতম পরিবর্তনের নির্দেশনা দেয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ৩০ অক্টোবর এ সংক্রান্ত আন্তমন্ত্রণালয় সভায় খসড়াটি উপস্থাপন করে সংশ্লিষ্টদের মতামত নেওয়া হয়। তাদের মতামত অন্তর্ভুক্ত করে গত ৭ নভেম্বর আইনের খসড়াটি ২২ নভেম্বর আইন মন্ত্রণালয়ে ভেটিংয়ের জন্য পাঠানো হয়েছে। ভেটিং সাপেক্ষে শিগগিরই চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিসভায় উপস্থাপন করা হবে। অনুমোদনের পর আইনটি বিল আকারে জাতীয় সংসদে পাসের পরই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে এনআইডি কার্যক্রমের যাত্রা শুরু হবে।

খসড়ায় নতুন যা যুক্ত হলো : প্রস্তাবিত আইনের খসড়া পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, মন্ত্রিসভায় নীতিগত অনুমোদনের পর প্রস্তাবিত আইনের খসড়ায় তিনটি বিষয়ে সংশোধন এবং দুটি নতুন বিষয় সংযুক্ত করা হয়েছে। নতুন সংযোজন করা বিষয়ের মধ্যে রয়েছে- বর্তমানে নির্বাচন কমিশনের আওতাধীন এনআইডির সার্ভার রুমসহ যাবতীয় সরঞ্জাম এবং জনবলও স্বরাষ্ট্রের সুরক্ষা সেবা বিভাগে হস্তান্তর। পাশাপাশি এসব হস্তান্তরিত সার্ভার, সরঞ্জাম ও জনবল নিয়ে সুরক্ষা সেবা বিভাগের অধীনে একটি নতুন অধিদফতর গঠনের বিষয়টি সুস্পষ্ট করা হয়েছে। এই অধিদফতর তদারকিতে সুরক্ষা সেবা বিভাগের কার্যপরিধি তালিকা সংশোধন করে আরও একটি নতুন অনুবিভাগ গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে। সংশোধনের মধ্যে রয়েছে- খসড়ায় ‘নির্বাচন কমিশন’-এর পরিবর্তে ‘সরকার’ শব্দ প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। জাতীয় পরিচয় নিবন্ধকের পদ ও অধিদফতর সৃজনের প্রস্তাব অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া ইউনিক আইডির বিষয়ে আরও পরিষ্কার করে বলা হয়- সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির জন্মনিবন্ধন, জাতীয় পরিচয়পত্র ও ভোটার নম্বর একই হবে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির মৃত্যুর পরও ওই নম্বরে কাউকে আইডি দেওয়া হবে না।

সুরক্ষা সেবা বিভাগের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মকর্তা জানান, ইসির আপত্তির মুখেও সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে এনআইডি কার্যক্রম স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগে আনা হচ্ছে। এ লক্ষ্যে গত বছরের ১৭ মে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের তিনটি নির্দেশনা দেওয়া হয় সুরক্ষা সেবা বিভাগকে। এর একটি হলো-সুরক্ষা সেবা বিভাগের কার্যতালিকা সংশোধন করে এনআইডি কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত করা। আরেকটি হলো-‘নির্বাচন কমিশন’-এর পরিবর্তে ‘সরকার’ শব্দ প্রতিস্থাপন ও অন্যান্য আবশ্যিক পরিবর্তন সাধনের লক্ষ্যে বিদ্যমান আইন সংশোধন করা। তিন নম্বরটি এনআইডির সার্ভার রুমসহ যাবতীয় সরঞ্জাম এবং জনবল ইসির পরিবর্তে স্বরাষ্ট্রের সুরক্ষা সেবা বিভাগে হস্তান্তর করা। এসব মেনে নতুন এনআইডি আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। ইতোমধ্যে এনআইডি কার্যক্রম তদারকিতে সুরক্ষা সেবা বিভাগে আরও একটি অনুবিভাগ গঠনের জন্য ২৫ জনবলের পদ সৃজন প্রস্তাব জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এর আগে গত ১০ অক্টোবর প্রস্তাবিত আইনটির খসড়া নীতিগত অনুমোদনের পর মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, নির্বাচন কমিশনের কাছ থেকে জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধনের কাজ সরকারের অধীনে আসার পাশাপাশি শিশুর জন্মের পর পরই জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ২০১০ সালের জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন অনুযায়ী এনআইডির নিবন্ধন প্রক্রিয়া নির্বাচন কমিশনের কাছে ছিল। নির্বাচন কমিশন থেকে এখন এটা সরকারে নিয়ে আসতে চাচ্ছে। এ জন্য এটা হোম মিনিস্ট্রির সুরক্ষা সেবা বিভাগে নিয়ে আসা হয়েছে। মন্ত্রিসভা মনে করে যে, এই আইনটা আরেকটু রিভিউ করা দরকার। নতুন আইনটি পাস হয়ে যাওয়ার পর এনআইডির পুরো কাজ সুরক্ষা সেবা বিভাগ করবে। তখন জন্মের সঙ্গে সঙ্গে এনআইডি হয়ে যাবে। এনআইডিকে সরকারের অধীনে আনার যুক্তি তুলে ধরে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, মূলত ১৯৯৬ সালে ভোটার আইডি কার্ড নিয়ে নির্বাচন কমিশনের অধীনে কার্যক্রম শুরু হয়েছিল। পরে যা এনআইডি হিসেবে রূপান্তর করা হয়। কিন্তু বেসিক কনসেপ্ট তখন ছিল নির্বাচন সম্পর্কিত। পরে যখন এনআইডিতে টার্ন হলো, তখন এটার সঙ্গে সব কর্মসূচি এবং আইডেন্টিফিকেশন সবকিছু যোগ করে দেওয়া হলো। এখন দেখা যাচ্ছে, এটা নির্বাচন কমিশনের চেয়ে বেশি প্রয়োজন সরকারের সরাসরি তত্ত্বাবধানে থাকা। নির্বাচন কমিশন তো সবক্ষেত্রে সরকারের সঙ্গে অত ডিরেক্ট রিলেটেড না। সে জন্য এটা ডিসিশন অনুযায়ী সুরক্ষা সেবা বিভাগে নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত হয়েছে, যারা পাসপোর্টটা হ্যান্ডল করে।

সর্বশেষ খবর