মঙ্গলবার, ২৯ নভেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা
বিশ্বনেতাদের প্রতি প্রধানমন্ত্রী

যুদ্ধ বন্ধে সংলাপে বসুন

উগ্রবাদ প্রতিরোধে নারীর অংশগ্রহণে বাংলাদেশ রোল মডেল

নিজস্ব প্রতিবেদক

যুদ্ধ বন্ধে সংলাপে বসুন

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে নারীর অধিকতর অংশগ্রহণের কারণে বাংলাদেশে সব ক্ষেত্রে লিঙ্গসমতার উন্নতি হয়েছে। শান্তিরক্ষা, শান্তি প্রতিষ্ঠা, দুর্যোগব্যবস্থাপনা এবং সহিংস উগ্রবাদ প্রতিরোধে নারীর অংশগ্রহণে বাংলাদেশ একটি রোল মডেল। গতকাল সকালে ঢাকা সেনানিবাসের আর্মি মাল্টিপারপাস কমপ্লেক্সে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ পুলিশের যৌথভাবে আয়োজিত দুই দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক নারী, শান্তি ও নিরাপত্তা-ডব্লিউপিএস সেমিনারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরা যুদ্ধ এবং সংঘাতের ক্ষতিটা বুঝি। সে জন্য আমি বিশ্বনেতাদের আহ্বান জানাই, দয়া করে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ থামান। যে কোনো দেশের যে কোনো সংঘাত সংলাপ, রাজনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে সমাধান হতে পারে। আমরা কোনো যুদ্ধ চাই না। যুদ্ধ বন্ধে সংলাপে বসুন। আমরা চাই না কোনো মানুষ উদ্বাস্তু হোক। কারণ আমার সব অভিজ্ঞতা আছে। তিনি বলেন, যে কোনো সংঘাত ও দুর্যোগে নারীদের দুর্দশা অনেক গুণ বেড়ে যায়। এটা প্রশ্নাতীত, নারীরা সমাজের সবচেয়ে দুর্বল অংশ, বিশেষ করে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে। তারা বিভিন্ন ধরনের সহিংসতা, অপুষ্টি, অশিক্ষা এবং অন্যান্য মৌলিক চাহিদার ক্ষেত্রে বঞ্চনার শিকার। যে কোনো সংঘাত ও দুর্যোগে তাদের দুর্দশা বহু গুণ বেড়ে যায়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, নারীর শান্তি ও নিরাপত্তা সমস্যা সমাধানে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে ১ হাজার ৩২৫ নাম্বার প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে, যা নারীর শান্তি ও নিরাপত্তা-ডব্লিউপিএস এজেন্ডা প্রতিষ্ঠা করেছে। বাংলাদেশ এই প্রস্তাব প্রণয়নে অংশ নিতে পেরে গর্বিত। স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশ জাতীয় জীবনের সর্বক্ষেত্রে নারীর উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর নির্দেশনায় প্রণীত বাংলাদেশের সংবিধানও নারীর সমান অধিকার নিশ্চিত করেছে। সংবিধানের ২৮ (১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, রাষ্ট্র শুধুমাত্র ধর্ম, জাতি, বর্ণ, লিঙ্গ বা জন্মস্থানের ভিত্তিতে কোনো নাগরিকের প্রতি বৈষম্য করবে না, অথচ একই অনুচ্ছেদের (২) ধারায় বলা হয়েছে, নারীদের সমান অধিকার থাকবে রাষ্ট্র ও জনজীবনের সব ক্ষেত্রে।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, সরকার নারী নীতি-২০১১ প্রণয়ন করেছে এবং নীতিমালায় নারীর সামগ্রিক উন্নয়ন ও মূলধারার আর্থ-সামাজিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা এবং তাদের ক্ষমতায়নের পথে সব প্রতিবন্ধকতা দূর করার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, রাজনীতি, প্রশাসন, শিক্ষা, ব্যবসা, খেলাধুলা, সশস্ত্র বাহিনী প্রভৃতি খাতে তাদের বর্ধিত অংশগ্রহণ ও অবদান বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক দৃশ্যপটকে বদলে দিয়েছে। তিনি বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে লিঙ্গসমতায় বাংলাদেশের শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে। বাংলাদেশে নারীরা এখন সরকারের সচিব, সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি এবং অনেক প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ পদে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি জানান, সেমিনারে অংশগ্রহণকারীরা রাখাইন রাজ্য থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিক রোহিঙ্গাদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন জেনে তিনি আনন্দিত।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১৭ সালের নভেম্বরে বাংলাদেশ, কানাডা এবং যুক্তরাজ্য কর্তৃক চালু হওয়া প্রতিরক্ষা নেটওয়ার্কের নারী, শান্তি ও নিরাপত্তা প্রধানের বর্তমান চেয়ার হিসেবে সবাই ডব্লিউপিএস এজেন্ডাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেনও বক্তব্য রাখেন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার (পিএসও) লেফটেন্যান্ট জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান।

স্কুল বাছাবাছির মানসিকতা বাদ দিতে হবে : গতকাল সকালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) ও সমমানের পরীক্ষার ফল হস্তান্তর অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ফলাফলমুখী হয়ে স্কুল বাছাবাছির যে প্রবণতা, তা বন্ধের জন্য সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার মান বাড়াতে হবে। ভালো শিক্ষার্থী নিয়ে ফল ভালো করায় কোনো কৃতিত্ব নেই, বরং অপেক্ষাকৃত দুর্বল শিক্ষার্থীদের নিয়ে ভালো ফল করানোয় কৃতিত্ব বেশি। তিনি বলেন, এখন কোথা থেকে ধারণা হলো, মাত্র কয়েকটা স্কুল, ওখানে না পড়লে ইজ্জত থাকে না, পড়া হয় না। এই যে মানসিকতা, এটা বদলাতে হবে। 

শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে তাঁর হাতে ফলাফলের সারসংক্ষেপ ও পরিসংখ্যান তুলে দেন। পরে বিভিন্ন বোর্ডের চেয়ারম্যানগণ স্ব স্ব বিভাগের ফলাফলের পরিসংখ্যান প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দেন। এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।

সন্তানের ভালো ফলের জন্য অভিভাবকদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বাছাবাছির দিকে ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভালো ভালো কতগুলো স্কুল আছে, আমাদের অনেকের ধারণা ওইসব স্কুলে না পড়লে নাকি পড়াশোনাই করা হয় না।  বিভিন্ন জেলার স্কুল থেকে পাস করে নানা ক্ষেত্রে সফল হওয়ার নজিরগুলো তুলে ধরে তিনি বলেন, জেলা স্কুলগুলো তো সব সময়ই খুব ভালো স্কুল ছিল। নাম করা ছিল। আমাদের এখনো যারা আছে, বেশির ভাগই তো ওখান থেকে পাস করে আসছে। এখন কোথা থেকে ধারণা হলো, মাত্র কয়েকটা স্কুল, ওখানে না পড়লে ইজ্জত থাকে না, পড়া হয় না। এই যে মানসিকতা, এটা বদলাতে হবে। প্রতিটি স্কুলেই যেন ভালোভাবে পড়াশোনা হয়, তা নিশ্চিতের ওপর জোর দেন প্রধানমন্ত্রী।

শিক্ষার্থীদের ফেল করা নিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, একটু মনোযোগ দিয়ে পড়তে হবে। না পড়লে তো ফেল করবেই। কাজেই এটা মাথায় রেখে সবাইকেই পড়তে হবে। দারিদ্র্যবিমোচনে শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে উন্নয়নশীল দেশকে পরিচালনা করতে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার তাগিদ দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, শিক্ষা ছাড়া আমরা দারিদ্র্যবিমোচন করতে পারি না। আমরা এমডিজি সফলতার সঙ্গে বাস্তবায়ন করেছি, এসডিজিও আমরা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। তাছাড়া আমরা এখন উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। এই উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা যখন আমরা পেয়েছি, তখন এই উন্নয়নশীল দেশ পরিচালনা, উন্নয়নশীল দেশের যে কার্যক্রম তার জন্য আমাদের দক্ষ জনশক্তি দরকার। চলমান সংকটকালে সবাইকে মিতব্যয়ী ও অর্থ সাশ্রয়ী হওয়ার পরামর্শও দেন প্রধানমন্ত্রী।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর