রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে ভোটারদের কাছে প্রার্থীদের জবাবদিহিতা ততই বাড়ছে। জনতার অনেক প্রত্যাশা রয়েছে প্রার্থীদের কাছে। আবার প্রার্থীদের কাছেও আছে নগরবাসীর চাওয়া-পাওয়ার অনেক হিসাব। আর তাই ইশতেহার প্রকাশসহ বিভিন্ন পন্থায় প্রার্থীরা ভোটারদের কাছে তাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা জানিয়ে দিচ্ছেন। গতকাল পাবলিক লাইব্রেরি মাঠে এমনই একটি জবাবদিহিতামূলক- ‘জনতার মুখোমুখি’ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজন। এতে নগরবাসীর বিভিন্ন প্রশ্নের সম্মুখীন হন প্রার্থীরা। নগরীর অভিশাপ বলে খ্যাত শ্যামাসুন্দরী খাল সংস্কার, বর্ধিত এলাকায় রাস্তাঘাট নির্মাণ, বেকার সমস্যা সমাধানসহ বিভিন্ন দাবি তুলে ধরে অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এ সময় ৯ মেয়র প্রার্থীই প্রতিশ্রুতি দেন নির্বাচিত হলে নগরের সব সমস্যা সমাধান করবেন। অনুষ্ঠানে তারা রংপুর সিটিকে দুর্নীতিমুক্ত, আধুনিক, পরিচ্ছন্ন, স্মার্ট সিটি গড়ার শপথ নেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার। অনুষ্ঠান শেষে ড. বদিউল আলম মজুমদার সাংবাদিকদের বলেন- সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, আইনানুগ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনই হলো ক্ষমতা বদলের পথ। নির্বাচনের সঙ্গে আমাদের ভবিষ্যৎ বংশধরদের স্বার্থ নিহিত রয়েছে। এটি অশান্তির মাধ্যমে, বেআইনি, সহিংসভাবে হলে তা রাষ্ট্রের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে না। গতবার রংপুর সিটি নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ হয়েছিল। আমরা ওই নির্বাচনের প্রশংসা করে নির্বাচন কমিশনকে অভিনন্দন জানিয়েছিলাম। আমরা এর আগেও বলেছি ইভিএম একটি জালিয়াতির যন্ত্র। কিন্তু নির্বাচন কমিশন সেই পুরনো গান গাইছে, এটি দিয়ে যে জালিয়াতি করা যায় তার কেউ প্রমাণ করতে পারেনি। ইভিএম নিয়ে নির্বাচন কমিশন সুজনসহ সচেতন নাগরিকদের কথায় কর্ণপাত করছে না। এর আগে অনুষ্ঠানে এক শিক্ষার্থী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, নগরীতে খেলার মাঠের অভাব রয়েছে। তাই অল্প বয়সী শিক্ষার্থীরা মাদকের দিকে ঝুঁকে পড়েছে। তারা শিক্ষা থেকে দূরে গিয়ে মোবাইল ফোনে আসক্ত হয়ে পড়ছে। বিলকিস বেগম নামে এক নারী বলেন, জরাজীর্ণ শ্যামাসুন্দরী খালটি যেন সংস্কার করেন এটি নগরবাসীর দাবি। এসবের জবাবে জাতীয় পার্টির প্রার্থী সদ্য বিদায়ী মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বলেন, শ্যামাসুন্দরী খাল উন্নয়নে দখলদার উচ্ছেদ, ডিজিটাল সার্ভে ও পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ করা হয়েছে। তিনি আবার নির্বাচিত হলে শ্যামাসুন্দরী খালের উন্নয়ন কার্যক্রমকে এগিয়ে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। আওয়ামী লীগের প্রার্থী অ্যাডভোকেট হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়া নগরীকে তিলোত্তমা নগরীতে পরিণত করতে কাজ করার অঙ্গীকার করেন। জাসদের শফিয়ার রহমান নগরীর বর্ধিত ওয়ার্ডগুলোতে নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দেন। স্বতন্ত্র লতিফুর রহমান মিলন কৃষিভিত্তিক আধুনিক নগরী গড়ার প্রতিশ্রুতি দেন। জাকের পার্টির খোরশেদ আলম, ইসলামী আন্দোলনের আমিরুজ্জামান পিয়াল, স্বতন্ত্র মেহেদী হাসান বনি, খেলাফত মজলিসের তৌহিদুর রহমান মণ্ডল ও বাংলাদেশ কংগ্রেসের আবু রায়হান দুর্নীতিমুক্ত নগরী গড়ার পাশাপাশি যানজট নিরসন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও রাস্তাঘাট উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দেন।উল্লেখ্য, রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে নয়জন, সাধারণ সদস্য পদে ১৮৩ জন ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ৬৮ জনসহ মোট ২৬০ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।