সোমবার, ২৬ ডিসেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বাংলাদেশে হস্তক্ষেপের অভিযোগ রাশিয়ার

শাহীনবাগে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে ঘটনা প্রত্যাশিত ছিল - রুশ মুখপাত্র

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বাংলাদেশে হস্তক্ষেপের অভিযোগ রাশিয়ার

বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র হস্তক্ষেপ করার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করেছে রাশিয়া। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা গত ২২ ডিসেম্বর মস্কোতে এক ব্রিফিংয়ে এ কথা জানান। গতকাল ঢাকায় রাশিয়ার দূতাবাস এ তথ্য জানিয়েছে। রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ব্রিফিংয়ের বিবরণীতে ‘বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের চেষ্টা’ শীর্ষক বক্তব্য প্রকাশিত হয়েছে। এতে ঢাকার শাহীনবাগে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে ঘটনা উল্লেখ করে রুশ মুখপাত্র বলেছেন, ওই ঘটনা ‘প্রত্যাশিত’। মারিয়া জাখারোভার বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি বাংলাদেশে ব্রিটিশ ও জার্মান কূটনৈতিক মিশনেরও সমালোচনা করা হয়। ব্রিফিংয়ে রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা বলেন, তারা বাংলাদেশে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের নিরাপত্তা ঘিরে ব্যাপকভাবে প্রচারিত ঘটনাটি লক্ষ্য করেছেন। তিনি ২০১৩ সালে নিখোঁজ বিরোধী দলের এক নেতার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন। সেখানে একটি সংগঠনের লোকজনের কারণে তার নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়েছিল বলে অভিযোগ উঠেছে। সংগঠনটির লোকজন রাষ্ট্রদূতের সেখানে যাওয়ার পক্ষে ছিলেন না। মারিয়া জাখারোভা বলেন, ঘটনাটি মার্কিন কূটনীতিকের তৎপরতার প্রত্যাশিত ফল। যিনি বাংলাদেশের নাগরিকদের মানবাধিকার সুরক্ষার নামে ক্রমাগত দেশটির অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে প্রভাব সৃষ্টির চেষ্টা চালাচ্ছেন। বাংলাদেশে ব্রিটিশ ও জার্মান কূটনৈতিক মিশনের তার (আমেরিকান রাষ্ট্রদূতের) সহকর্মীরা একই ধরনের কাজ করছেন। তারা বাংলাদেশে আগামী সংসদ নির্বাচন স্বচ্ছ ও অংশগ্রহণমূলক করার জন্য স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে প্রকাশ্যে সুপারিশ করছেন।

পিটার হাসের শাহীনবাগে নিখোঁজ বিএনপি নেতার বাসায় যাওয়ার সমালোচনা করেন মারিয়া জাখারোভা। তিনি বলেন, আমরা বিশ্বাস করি, সার্বভৌম রাষ্ট্রগুলোর অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার মৌলিক নীতি লঙ্ঘন করে, এমন পদক্ষেপগুলো মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়। মারিয়া জাখারোভো বলেন, কেউ যদি জানতে চান, কূটনীতিক, দায়মুক্তি, দূতাবাস, নিরাপত্তা-শব্দগুলো কেমন হবে, তাহলে আমরা সব সময় আন্তর্জাতিক আইন, কূটনৈতিক ও কনস্যুলার সম্পর্কে ভিয়েনা সনদ অনুযায়ী এই বিষয়গুলো অনুসরণের আহ্বান জানাই। এগুলোই মৌলিক নীতি। আমরা যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও অন্যান্য দেশগুলোকে শুধু তাদের নিজস্ব নিরাপত্তার ক্ষেত্রেই যত্নবান হওয়া বা মন্তব্য করার জন্য বলব না, পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সংস্থাসহ বিভিন্ন দেশ ও তাদের প্রতিনিধিরা যখন তাদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করে, তখন তাদের সহকর্মীদের সমর্থন করার আহ্বান জানাই।

মারিয়া জাখারোভা বলেন, অন্য দূতাবাস, কনস্যুলেট জেনারেল, সরকারি সংস্থার প্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী হামলা করা হচ্ছে বা তারা হুমকি পাচ্ছে-এ বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্র দেখতে চায় না বা এ কথা শুনতে চায় না। তারা এ বিষয়ে কোনো খেয়ালই করে না। সর্বোপরি, তারা নীরব থাকে এবং সবচেয়ে খারাপভাবে বলতে গেলে, এর মাধ্যমে তারা হামলার ন্যায্যতা দেয়। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসীরা সিরিয়ায় আমাদের দূতাবাসে একের পর এক হামলা চালায়, তখন আমরা জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের মাধ্যমে আমেরিকানদের এর জবাব দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলাম। সবকিছু স্পষ্ট ছিল। তবুও জনসম্মুখে অবস্থান নিতে এবং নিরাপত্তা পরিষদের ‘সাধারণ কণ্ঠস্বর’ ব্যবহার করতে তাদের অনিচ্ছার কোনো রাজনৈতিক যুক্তি থাকতে পারে না। রাশিয়ার মুখপাত্র বলেন, কূটনীতিকদের সুরক্ষা এবং দূতাবাস ও কূটনীতিকদের ওপর সন্ত্রাসী হামলার নিন্দা জানানোর বিষয়ে একটি স্পষ্ট অবস্থান নিয়ে নিরাপত্তা পরিষদে আমাদের প্রস্তাবকে ওয়াশিংটন সমর্থন করেনি। নিরাপত্তা ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিমুখী অবস্থান নয়, বরং সমন্বিত অবস্থান প্রয়োজন বলে উল্লেখ করা হয় রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে ব্রিফিংয়ের লিখিত বিবরণীতে।

এর আগে গত ১৪ ডিসেম্বর ঢাকার শাহীনবাগে প্রায় এক দশক ধরে নিখোঁজ বিএনপি নেতা সাজেদুল ইসলাম সুমনের বাসায় যান মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। খবর পেয়ে ‘মায়ের কান্না’ নামে আরেকটি সংগঠনের নেতা-কর্মীরা সেখানে অবস্থান নেন। তারা পিটার হাসকে ঘিরে ধরে একটি স্মারকলিপি দেওয়ার চেষ্টা করেন। রাষ্ট্রদূত সেটি না নিয়ে নিরাপত্তাকর্মীদের সহায়তায় সেখান থেকে বেরিয়ে যান। ওই ঘটনার পরদিন ১৫ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরানের সঙ্গে আলোচনায় পিটার হাসের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছেন মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক মার্কিন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ডোনাল্ড লু। ঢাকায় নিজ দেশের দূতাবাসকর্মীদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে যুক্তরাষ্ট্র। পরে মার্কিন উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়েন্ডি শারম্যান বাংলাদেশের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলমের সঙ্গে টেলিফোনে আলাপের সময় নিজেদের দূতাবাসকর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের অনুরোধ জানান বলেও এক বিবৃতিতে বিষয়টি জানান যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র নেড প্রাইস।

সর্বশেষ খবর