মঙ্গলবার, ৩ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

মন্দা অর্থনীতিতে আশার আলো রপ্তানি খাত

♦ নভেম্বরের পর ডিসেম্বরেও রেকর্ড ♦ ৬ মাসে আয় ২৭ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

মন্দা অর্থনীতিতে ‘আশার আলো’ দেখাচ্ছে রপ্তানি খাত। গত নভেম্বরের পর সদ্য সমাপ্ত ডিসেম্বর মাসেও রেকর্ড পরিমাণ রপ্তানি আয় অর্জিত হয়েছে। স্বাধীনতার পর দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো পর পর দুই মাসে রপ্তানি আয় ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আয়ের রেকর্ড হলো। গত নভেম্বরে পণ্য খাতে নিট রপ্তানির আয় ৫ দশমিক ০৯ বিলিয়ন ডলার অর্জিত হয়। আর ডিসেম্বরে সেটিকে অতিক্রম করে ৫ দশমিক ৩৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রপ্তানি আয়ের নতুন রেকর্ড হয়েছে। পর পর দুই মাসে রেকর্ড পরিমাণ রপ্তানি আয় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়াতে সহায়তা করবে বলে আশা করা হচ্ছে। সে কারণে এখন রপ্তানি আয়কেই মন্দা অর্থনীতির ‘আশার আলো’ হিসেবে দেখছেন ব্যবসায়ীরা। নিট তৈরি পোশাক রপ্তানি খাতের ব্যবসায়ীদের সংগঠন বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এত সংকটের মধ্যেও পর পর দুই মাসে রেকর্ড রপ্তানি আয় আমাদের আশার আলো দেখাচ্ছে। এর ফলে ডলারের যে সংকট, সেটি কেটে যাবে বলে আমরা মনে করছি। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)-এর ভাইস চেয়ারম্যান ও সিইও এ এইচ এম আহসান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, চলতি অর্থবছরের শুরুর দিকে কিছুটা খারাপ করলেও গত দুই মাসে রপ্তানি আয়ে রেকর্ড ভালো কিছুর ইঙ্গিত দিচ্ছে। এর ফলে ব্যবসায়ীদের মধ্যে আস্থা বাড়বে। তারা উৎপাদন বাড়াতে উৎসাহী হবেন। ইপিবির তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে (জুলাই-ডিসেম্বর) ২৭ দশমিক ৩২ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি আয় অর্জিত হয়েছে। এটি আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ২ দশমিক ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বেশি। ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথমার্ধে ২৪ দশমিক ৬৯ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয় এসেছিল। শুধু তাই নয়, চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধের জন্য রপ্তানি আয়ের যে কৌশলগত লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল সরকার, প্রাপ্ত আয় সেটিকেও ছাড়িয়ে গেছে। জুলাই-ডিসেম্বর মেয়াদে সরকারের রপ্তানি আয়ের টার্গেট ছিল ২৭ দশমিক ১৯ বিলিয়ন ডলার। ইপিবির পর্যালোচনায় দেখা গেছে, মূলত তৈরি পোশাকের ওপর নির্ভর করেই রেকর্ড ভাঙছে রপ্তানি আয়। গত ছয় মাসে যে ২৭ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয় এসেছে তার মধ্যে ২৩ বিলিয়ন ডলারই তৈরি পোশাক থেকে। এর মধ্যে নিট পোশাকে ১৩ দশমিক ৪২ এবং ওভেন গার্মেন্টস রপ্তানিতে ১৮ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ইউরোপ-আমেরিকার বাইরে জাপান, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও কোরিয়ার মতো অপ্রচলিত বাজারগুলোতে তৈরি পোশাক রপ্তানি বাড়ছে। এ ছাড়া পোশাক খাতের ব্যবসায়ীরা এখন সাধারণ পোশাকের বাইরে বেশি দামের হাইভ্যালুড পোশাক রপ্তানির দিকেও ঝুঁকছেন। কাঁচামালের আমদানি ব্যয় বাড়ার কারণেও তৈরি পণ্যের দাম বেড়েছে কিছুটা। এসব কারণেই রপ্তানি আয়ে রেকর্ড হচ্ছে। বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি বলেন, ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে অর্থনীতিতে সবচেয়ে বেশি বিপর্যয় তৈরি করেছে ডলার সংকট। রপ্তানি আয়ের ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি সেই সংকট কাটাতে বড় ভূমিকা রাখবে। নতুন বছরে এই খাতটিই আমাদের আশার আলো দেখাচ্ছে।

সর্বশেষ খবর