মঙ্গলবার, ৩ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

গ্রেফতার ৭০ ভাগ জঙ্গি তরুণ

সিটিটিসি

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিভিন্ন অভিযানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে গ্রেফতার জঙ্গিদের ৭০ শতাংশের বয়স ১৭ থেকে ৩৪ বছরের মধ্যে। গতকাল ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে টেকনাফ থেকে গ্রেফতার ছয়জনের বিষয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব জানান কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) অতিরিক্ত কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান।

তিনি বলেন, ১৭ থেকে ৩৪ বছর বয়সীদের দ্রুত রেডিকালাইজ করা যায়। তাই জঙ্গিরা কম বয়সী তরুণদের খোঁজে থাকে। সাইবার ওয়ার্ল্ডে জঙ্গিদের দেওয়া ভিডিও কনটেন্টে লাইক, কমেন্ট করলেই তাদের টার্গেট করে জঙ্গিরা। জঙ্গি সংগঠনগুলো সাইবার স্পেসে অনেকটাই সক্রিয়। তারা দীর্ঘ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জঙ্গি সদস্য নির্বাচন করে। তারা সাইবার স্পেসে তাদের যে নিজস্ব সাইট ও প্ল্যাটফরম আছে, সেখানে এনক্রিপটেড অ্যাপসের মাধ্যমে তাদের বিভিন্ন রেডিকালাইজড কনটেন্টের ব্যাপক প্রচারণা চালায়। এই প্রচারণায় উদ্বুদ্ধ হয়ে যারা লাইক বা কমেন্ট করেন, তাদের মধ্য থেকে টার্গেট গ্রুপকে এক্সপার্ট জঙ্গিরা সদস্য নির্বাচন করে।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, রবিবার রাজধানীর সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল, চট্টগ্রাম ও টেকনাফ থেকে ছয়জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা হলেন- সৌদি প্রবাসী দলনেতা আবদুর রউফ, সাকিব, শামীম হোসেন, নাদিম শেখ, আবছার ও সাইদ উদ্দিন। এদের মধ্যে অনলাইনে আল-কায়েদার মতাদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে বাংলাদেশে ‘কথিত জিহাদ’ করার পরিকল্পনা ছিল আবদুর রউফের। সেই লক্ষ্যে সৌদি আরব থেকে দেশে ফিরে বাড়ি ফেরেননি তিনি। বিমানবন্দর থেকে সরাসরি চলে যান জঙ্গি ক্যাম্পে। আবদুর রউফ সমন্বয়ক হয়ে সবাইকে অনলাইনে একত্র করে শরিয়াহভিত্তিক রাষ্ট্র গঠন, জিহাদ প্রভৃতি বিষয় নিয়ে আলোচনা করতেন। পরবর্তী সময়ে তাদের অনলাইনে বিদেশে অবস্থানরত এক বাংলাদেশি সহযোগীর সঙ্গে পরিচয় হয় এবং অডিও-ভিডিও কলে যোগাযোগ স্থাপন করে। বিদেশে অবস্থানরত ওই ব্যক্তি সবাইকে হিজরত করে জিহাদের জন্য উদ্বুদ্ধ করে। পরে সে লিবিয়ায় অবস্থানরত আরও একজন বাংলাদেশি এবং টেকনাফের স্থানীয় একজনের সঙ্গে সবার পরিচয় করিয়ে দেয়। সম্মিলিত আলোচনায় সিদ্ধান্ত হয় আবদুর রউফ, শামীম, সাকিব, নাদিম, সাইদসহ অন্য যারা হিজরতে রাজি তারা প্রথমে টেকনাফ গিয়ে তাদের স্থানীয় সহযোগীদের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করবেন। পরে তারা বাংলাদেশে ইসলামী শাসন কায়েমের জন্য জিহাদ করবেন।

সিটিটিসির অতিরিক্ত কমিশনার আসাদুজ্জামান বলেন, গত বছর নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে সবাইকে নিজ নিজ ব্যবস্থাপনায় টেকনাফে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। সে অনুসারে ১৬ নভেম্বর সাকিব ও নাদিম টেকনাফ যান এবং স্থানীয় সহযোগী আবছার তাদের টেকনাফে ভাড়া বাসায় থাকার ব্যবস্থা করে দেন। আর আবদুর রউফ ছুটি না পাওয়ায় যথা সময়ে দেশে আসতে ব্যর্থ হলে তারা টেকনাফের বাসায় অবস্থান করেন এবং অপেক্ষা করতে থাকেন। ২২ নভেম্বর আবদুর রউফ দেশে এলে তার সহযোগী শামীম ঢাকার হযরত শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে রিসিভ করে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী তাদের অন্য সহযোগীদের ভাড়া করা বাসায় নিয়ে যান। সেখানে অবস্থান করে বিভিন্ন শলাপরামর্শ করেন তারা। দুই দিন পর তারা দুজন সাকিবের সঙ্গে যোগাযোগ করে অন্য সহযোগীদের জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন। অ্যাপসে যোগাযোগ স্থাপনের মাধ্যমে দল গঠন করেন তারা। পরে স্থানীয় সহযোগীদের নিয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে তারা দেশে জঙ্গিবাদের জন্য টেকনাফে হিজরত করে অবস্থান করছিলেন।

 

সর্বশেষ খবর