বুধবার, ১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

হাতুরাসিংহেই ফের কোচ সাকিবদের

আসিফ ইকবাল, সিলেট থেকে

হাতুরাসিংহেই  ফের কোচ সাকিবদের

তাহলে চন্ডিকা হাতুরাসিংহেই দায়িত্ব নিচ্ছেন সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবালদের হেড কোচের। অস্ট্রেলিয়ার নিউসাউথ ওয়েলসের কোচিং করানো নিয়ে সামান্য যে সংশয়ের সৃষ্টি হয়েছিল, সেটা এখন পুরোপুরি দূরীভূত। শ্রীলঙ্কান বংশোদ্ভূত হাতুরাসিংহে গত পরশু নিউসাউথ ওয়েলসের সহকারী কোচের দায়িত্ব থেকে ইস্তফা দিয়েছেন। ফলে টাইগারদের হেড কোচের দায়িত্ব নিতে আর কোনো সংশয় থাকছে না। চুক্তি করতে ২০-২২ ফেব্রুয়ারি ঢাকা আসবেন হাতুরাসিংহে। পরশু রাতে সিলেটে মিডিয়ার মুখোমুখিতে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন স্পষ্ট করে জানিয়েছিলেন, আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে নতুন কোচের নিয়োগ দেবে বিসিবি, ‘১৮-২০ ফেব্রুয়ারির মধ্যে কোচের সঙ্গে চুক্তি করবে বিসিবি।’ গতকাল আনুষ্ঠানিকভাবে জানান, ‘হাতুরাসিংহে টেস্ট, ওয়ানডে ও টি-২০ তিন ফরম্যাটেরই কোচ।’  বিসিবি সভাপতি গতকাল নিজের বাসভবনে আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছেন, হাতুরাসিংহেই হেড কোচ। এর ফলে দ্বিতীয়বারের মতো হয়তো হাতুরাসিংহে টাইগারদের হেড কোচের দায়িত্ব নেবেন। তার সহকারী হিসেবে দেখা যেতে পারে টি-২০ বিশ্বকাপে সাকিব বাহিনীর টেকনিক্যাল কনসালটেন্ট হিসেবে কাজ করা শ্রীধরন শ্রীরামকে। হাতুরাসিংহে-শ্রীরাম টাইগারদের কোচিং জুটি-সংবাদটি ডিসেম্বরে প্রকাশিত হয়েছিল বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকায়। টাইগারদের সাবেক কোচের সঙ্গে চুক্তি হতে পারে ২ বছরের। এজন্য বিসিবিকে ৪-৫ লাখ মার্কিন ডলার গুনতে হবে বছরে।

ভারতের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ জয়ের পর ক্রিকেট বিশ্লেষকরা ধারণা করেছিলেন, এ যাত্রায় গদি টিকে যাচ্ছে রাসেল ডমিঙ্গোর। টেস্ট সিরিজের হোয়াইটওয়াশের পরও সেই ধারণা বদ্ধমূল ছিল সবার। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকান ভদ্রলোক জানতেন, তার বিদায়টা ভালো হবে না। বিসিবিকে সেই পথে হাঁটতে না দিয়ে নিজেই টাইগারদের কোচের দায়িত্ব ছেড়ে দেন গত ডিসেম্বরের শেষে। এরপর থেকে সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল, লিটন দাসরা কোচশূন্য। মার্চ মাস পর্যন্ত কোচশূন্য থাকার কথাই ছিল টাইগারদের। কিন্তু ক্রিকেট বোর্ড মরিয়া হয়েই খুঁজছিলেন একজন কোচ, যিনি ক্রিকেটারদের মেজাজি অভিভাবক হবেন। ২০১৪-২০১৭ সাল পর্যন্ত চণ্ডিকা হাতুরাসিংহে যে মেজাজে দলকে কোচিং করিয়েছেন, ঠিক সেরকম একজনকে খুঁজছিল। বিসিবির আগ্রহে অনেকে যোগাযোগ করেন। বিসিবি যোগাযোগ করেন মাইক হাসিসহ অনেকের সঙ্গে। তবে ক্রিকেট বোর্ডের বরাবরের পছন্দ হাতুরাসিংহে। তার দল পরিচালনা, ক্রিকেটারদের শৃঙ্খল জীবন, সাফল্য এবং সর্বোপরি তার টেকনিক্যাল মেথডের জন্য বিসিবি তাকেই এগিয়ে রেখেছিল।

হাতুরাসিংহে এর আগে সাকিবদের দায়িত্বে ছিলেন ২০১৪ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত। ছিলেন শ্রীলঙ্কার একজন মাঝারিমানের ক্রিকেটার। খেলেছেন ২৬ টেস্ট। কোচিং করানোর সময় টাইগারদের সাফল্য ছিল খুব ভালো। তার কোচিংয়ে বাংলাদেশ টেস্ট জিতেছিল ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। ওয়ানডেতে সাফল্য ছিল অনেক। তার সময় বাংলাদেশ ২০১৫ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল। সেরা আটে জায়গা নিতে মাশরাফি বাহিনী সেবার হারিয়েছিল ক্রিকেট পরাশক্তি ইংল্যান্ডকে। হাতুরাসিংহে বরাবরই কড়া মেজাজের কোচ ছিলেন। তিনি টিম ম্যানেজমেন্টের পার্ট ছিলেন। দল পরিচালনা থেকে শুরু করে একাদশ নির্বাচনেও তিনি থাকতেন। এবার আগের চেয়ে বেশি ক্ষমতা চাইছেন। বোর্ডও সম্মত হয়েছে। হাতুরাসিংহের টিম ম্যানেজমেন্টের পার্ট হিসেবেই কাজ করবেন।

বিসিবি তার সঙ্গে কথা বলে গত বছরের টি-২০ বিশ্বকাপের সময়। জন্ম শ্রীলঙ্কা। খেলেছেন দ্বীপরাষ্ট্রের হয়ে। এখন পরিবারসহ বসবাস সিডনিতে। গত টি-২০ বিশ্বকাপের সময় বিসিবি সভাপতি ও বোর্ড পরিচালকরা তাকে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দেয় কোচ হওয়ার। রাজি হলেও চূড়ান্ত  সিদ্ধান্ত জানাননি। এই দীর্ঘ সময় ধরে তার সঙ্গে লজিস্টিক ও আর্থিক বিষয় নিয়ে কথা চালায় বিসিবি। পরশু সন্ধ্যায় সংবাদ সম্মেলন শেষ করে বের হওয়ার সময় বিসিবি সভাপতি হাঁটতে হাঁটতে বলেছিলেন, ‘আমরা যে ধরনের কোচ খুঁজছি, ফুল টাইম ওটাতে হাতুরাসিংহে আছে। অন্য কেউ ফুল টাইম না। কেউ হয়তো ২০০ দিন করতে চায়। কেউবা আবার ১০০ দিন। আইপিএলসহ অনেক জায়গায় তাদের কাজ করতে দিতে হয়। এসব বিবেচনায় হাতুরাসিংহের চেয়ে সুবিধাজনক অবস্থানে কেউ নেই।’

সর্বশেষ খবর