রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর ধলপুরের আউটফলে তেলেগু কলোনির বাসিন্দা তেলেগু সম্প্রদায়ের নারী রামনাম্মা কাঁদতে কাঁদতে ডিএসসিসির উদ্দেশে বলেছেন, ‘আমরা এখন যেখানে বসবাস করছি, আগে সেখানে পা দিলে রক্ত আসত। এ মাটি এখন শক্ত হয়েছে। আর প্রশাসনের চোখে পড়ে গেছে। আমরা কোথায় যাব? মেয়র সাব! যদি এ জায়গা নিতে চান, তাহলে বিষ দিয়ে আমাদের মেরে ফেলেন। তারপরে জায়গা নেন।’ জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে গতকাল আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তেলেগু সম্প্রদায়ের পক্ষে কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি এসব কথা বলেন। ‘আউটফল তেলেগু কলোনির ভূমিহীন ১৩০টি পরিবারকে পুনর্বাসন ছাড়া উচ্ছেদ করার পাঁয়তারার প্রতিবাদ’ শীর্ষক এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ, নিজেরা করি, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি), ব্লাস্ট, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা), আইন ও সালিশ কেন্দ্র, মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন, এএলআরডি ও ভুক্তভোগী জনগোষ্ঠী।
সংবাদ সম্মেলন থেকে পুনর্বাসন ছাড়া উচ্ছেদ বন্ধ, তাদের উপাসনালয়ের সুরক্ষা, বাসযোগ্য আবাসনের ব্যবস্থা করাসহ সাতটি দাবি তুলে ধরা হয়। ৯ ফেব্রুয়ারি দুই দিনের মধ্যে তেলেগু কলোনি খালির নির্দেশ জারি করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। তারপর স্থানীয় কাউন্সিলর, যাত্রাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা একই নির্দেশ দেন। ফলে কলোনিজুড়ে উচ্ছেদ আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, শহর পরিচ্ছন্নতার কাজে ব্রিটিশ ও পাকিস্তান আমল থেকে ঢাকা সিটি করপোরেশন ও পৌরসভা এলাকায় তারা বসবাস করে আসছিলেন। ১৯৮২ সালে একটি এনজিওর মাধ্যমে টিকাটুলী থেকে তাদের সায়েদাবাদ হুজুরবাড়ী এলাকায় আনা হয়। পরে ১৯৯০ সালে সরকারিভাবে তাদের ধলপুরে আনা হয়, যা পরবর্তী সময়ে ‘মেথর কলোনি’ নামে পরিচিতি লাভ করে।সংবাদ সম্মেলনে ডিএসসিসি মেয়রের উদ্দেশে তেলেগু সম্প্রদায়ের নারী রামনাম্মা কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘এক সপ্তাহ ধরে আমাদের ঘুম নেই, খাওয়া নেই। আমরা কী পাপ করেছি মেয়র সাব? আমরা কী অপরাধ করেছি? এ মাটিতে জন্ম কি আমাদের ভুল?’ সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে এএলআরডির ব্যবস্থাপক (প্রোগ্রাম) রফিক আহমেদ বলেন, বস্তি উচ্ছেদ মামলায় হাইকোর্টের নির্দেশনা রয়েছে, পুনর্বাসন ছাড়া কোনো বস্তি বা কলোনি উচ্ছেদ করা যাবে না। এখানে বৈধভাবে বসবাসরত পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের উচ্ছেদ হবে মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের কাজল দেবনাথ বলেন, ‘ঢাকা শহরে ১৪টি জায়গায় ডাম্পিং স্টেশন আছে। তেলেগুদের যেখানে থাকতে দেওয়া হয়েছিল, সেটিও ছিল ডাম্পিং স্টেশন। সেখানে মরা গরু, ছাগল, কোরবানির চামড়া, আবর্জনা সবকিছু ফেলা হয়। এখন যখন জায়গাটি বসবাসের উপযোগী হয়েছে, তখন এতে চোখ পড়েছে সিটি করপোরেশনের।’
সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তৃতা করেন হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত, এএলআরডি নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, বেলার হেড অব প্রোগ্রাম ফিরোজুল ইসলাম, ব্লাস্টের তাজুল ইসলাম, মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের আইনজীবী নাহিদ শামস প্রমুখ।