মঙ্গলবার, ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

রোহিঙ্গারা এখন বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে

প্রতিদিন ডেস্ক

রোহিঙ্গারা এখন বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের আরও উন্নত ভাসানচরে স্থানান্তর করতে বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী গুয়েন লুইসের সহায়তা চেয়েছেন। তিনি বলেন, মানবিক কারণে বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেওয়া হলেও তারা এখন বাংলাদেশের জন্য বড় ধরনের বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। গতকাল সকালে গুয়েন লুইস প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবনে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে এলে তিনি এ আহ্বান জানান। খবর বাসস। বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর স্পিচ রাইটার এম নজরুল ইসলাম সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। এম নজরুল ইসলাম প্রধানমন্ত্রীর উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, ‘শেখ হাসিনা বলেছেন, যেহেতু খুব শিগগির রোহিঙ্গাদের তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর কোনো নিশ্চয়তা নেই, তাই রোহিঙ্গাদের আরও উন্নত ভাসানচরে স্থানান্তর করা উচিত এবং জাতিসংঘ এ বিষয়ে সহযোগিতা করতে পারে।’ শেখ হাসিনা বলেন, রোহিঙ্গারা বর্তমানে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ঘনবসতিপূর্ণ জীবনযাপন করছেন। তিনি আরও বলেন, ‘যদি রোহিঙ্গাদের বসবাসের জন্য জীবিকার ব্যবস্থা সম্পন্ন ভাসানচরে স্থানান্তর করা যায়, তাহলে তারা বসবাসযোগ্য পরিবেশে মর্যাদাপূর্ণ জীবনযাপন করতে পারবেন। কারণ, এখানে লাখেরও বেশি লোকের আবাসনের ব্যবস্থা রয়েছে’। শেখ হাসিনা আরও বলেন, ভাসানচরে উন্নতমানের জীবনযাপন ও রোহিঙ্গা শিশুদের নিজস্ব ভাষায় শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে। রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়ার পর থেকে সহযোগিতার জন্য জাতিসংঘকে ধন্যবাদ জানান, প্রধানমন্ত্রী এবং জাতিসংঘ এ সহায়তা অব্যাহত রাখবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। বৈঠকে শেখ হাসিনা বলেন, রোহিঙ্গারা কক্সবাজারে সামাজিক সমস্যা সৃষ্টি করছে। তাদের মধ্যে অনেকেই মাদক, অস্ত্র ও মানব পাচারে জড়িয়ে পড়েছে। তিনি আরও বলেন, রোহিঙ্গারা অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব এবং জঙ্গিবাদেও জড়িত। তিনি বলেন, কক্সবাজারে রোহিঙ্গারা স্থানীয়দের চেয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠে পরিণত হয়েছে। বৈঠকে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে নারীর ক্ষমতায়ন ও নারী শিক্ষা নিশ্চিত করার পাশাপাশি এমডিজির লক্ষ্য অর্জন ও এসডিজি অর্জনে কাজ করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অগ্রগতির ভূয়সী প্রশংসা করেন। গুয়েন লুইস আরও বলেন, বাংলাদেশকে জলবায়ু পরিবর্তন ও কভিড-১৯ পরবর্তী পরিস্থিতিতে নারীদের শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতসহ কিছু চ্যালেঞ্জ কাটিয়ে উঠতে হবে। তিনি বলেন, ‘জাতিসংঘ অতীতেও বাংলাদেশের পাশে ছিল এবং ভবিষ্যতেও বাংলাদেশের পাশে থাকবে।’ জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় পদক্ষেপ সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা বাংলাদেশকে জলবায়ু সহিষ্ণু করতে এর আগে অভিযোজন ও প্রশমন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলার ব্যবস্থা হিসেবে বাংলাদেশ উপকূলীয় অঞ্চল ও সবুজ বেষ্টনি জলবায়ু সহিষ্ণু আবাসন নির্মাণ করছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ নিজস্ব অর্থায়নে ‘ক্লাইমেট ট্রাস্ট ফান্ড’ গঠন করেছে। তবে তিনি জলবায়ু প্রতিশ্রুতি নিয়ে ধনী দেশগুলোর কর্মকাণ্ডে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, ‘ধনী দেশগুলো শুধু প্রতিশ্রুতিই দিচ্ছে, কিন্তু তারা সেগুলো পালন করছে না।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার কভিড-১৯ মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে উদ্ভূত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় এসডিজি বাস্তবায়নের প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান ও কাউন্সিলর পদ সৃষ্টি করে নারীদের রাজনৈতিকভাবে ক্ষমতায়ন করেছে। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু পাকিস্তান আমলের আইন সংশোধন করে বিচার বিভাগ ও অন্যান্য বিভাগে নারীদের নিয়োগের পথ তৈরি করেছিলেন। বাংলাদেশে শিশুশ্রমের বিষয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশে আনুষ্ঠানিক খাতে কোনো শিশুশ্রম নেই। প্রধানমন্ত্রী একটি মানুষকেও জমি ও গৃহহীন না রাখার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, সরকার প্রত্যেক ভূমিহীন ও গৃহহীনকে বিনামূল্যে বাড়ি দিচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

 

সর্বশেষ খবর