বুধবার, ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

ফুলেল শ্রদ্ধায় ভাষাশহীদদের স্মরণ

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক

ফুলেল শ্রদ্ধায় ভাষাশহীদদের স্মরণ

কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গতকাল মানুষের ঢল -বাংলাদেশ প্রতিদিন

ঘড়ির কাঁটায় তখন সবে ১২টা পেরিয়েছে। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের মাইকে আকুতিভরা কণ্ঠে বেজে উঠল ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি...।’ শ্রদ্ধাবনতচিত্তে ভাষাশহীদদের স্মরণে শহীদ মিনারে সমবেত হাজারো মানুষ। হাতে হাতে শ্রদ্ধাঞ্জলি আর কণ্ঠে ভাষার প্রতি ভালোবাসার প্রত্যয়। অমর একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। একুশের প্রথম প্রহরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের বেদিতে মহান ভাষাশহীদদের প্রতি রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এ সময় তাঁরা কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে ভাষা আন্দোলনের শহীদদের স্মরণ করেন। পরে দলের পক্ষে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা শহীদবেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এ সময় তাঁর সঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ জ্যেষ্ঠ নেতা ও মন্ত্রিসভার সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। পরে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। এরপর ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। শ্রদ্ধা জানান চিফ হুইপ ও হুইপদের পক্ষে হুইপ ইকবালুর রহিম। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস শ্রদ্ধা জানান।

১২টা ১৪ মিনিটে সাধারণের শ্রদ্ধা জানানোর জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয় শহীদ মিনার। বিরোধী দলের পক্ষে জাতীয় পার্টির নেতা জি এম কাদেরের নেতৃত্বে দলীয় নেতারা শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এ ছাড়া হাসানুল হক ইনুসহ জোটের অন্য নেতাদের নেতৃত্বে ১৪-দলীয় জোটের পক্ষে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। এর আগে তিন বাহিনীর প্রধানরা বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এ ছাড়া বিজিবি, আনসার-ভিডিপি ও ফায়ার সার্ভিসের পক্ষেও শ্রদ্ধা জানান বাহিনীগুলোর প্রধানরা। পুলিশের পক্ষে শ্রদ্ধা জানান মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. আখতারুজ্জামানের নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার শ্রদ্ধা নিবেদন করে। এ ছাড়া শ্রদ্ধা জানায় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি, অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন, সাংবাদিক সমিতি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন আবাসিক হলের পক্ষ থেকেও শ্রদ্ধা জানানো হয়।

এর আগে ঢাকায় নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, হাইকমিশনার ও কূটনীতিকরা শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এ ছাড়া শ্রদ্ধা জানান যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও মহান মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডাররা। ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী, ন্যাপ, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ, ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী সমিতি, বাংলাদেশ টেলিভিশন, কারা অধিদফতর, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়, জাসদ, সরকারি কর্ম-কমিশন, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, গণসংহতি আন্দোলন, জাতীয় যুব জোট, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, বাংলা একাডেমি, দৈনিক প্রভাত, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির পক্ষে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। এ ছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি ও সিনেট সদস্য, গণফোরাম, জাসদ, বাংলাদেশের জাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টি, সাম্যবাদী দল, গণতন্ত্রী পার্টি, ন্যাপ, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তর ও দক্ষিণ, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, আওয়ামী যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগ, বাংলা একাডেমি, জাতীয় প্রেস ক্লাব, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি, শিল্পকলা একাডেমি, উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী, কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসর, ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্র ফ্রন্ট, ছাত্র ফেডারেশন, বঙ্গবন্ধু পরিষদ, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতিসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন ভাষাশহীদদের ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায়।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে সকালে দলের পক্ষ থেকে প্রভাতফেরিসহকারে আজিমপুর কবরস্থানে শহীদদের কবরে ও কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করা হয়। এ সময় দলের কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

এ ছাড়া আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে অনেক বিদেশি নাগরিক কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের বেদিতে ফুল দিয়ে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।

ছাত্রলীগের পক্ষে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসেন, সাধারণ সম্পাদক শেখ ইনানসহ কেন্দ্রীয় নেতারা। এ ছাড়া জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, গণঅধিকার পরিষদ, ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্র মৈত্রী, ছাত্র ফেডারেশন ও ছাত্র অধিকার পরিষদসহ অন্য ছাত্র সংগঠনগুলোও শ্রদ্ধা জানায়।

মঙ্গলবার ভোরের আলো ফোটার আগে থেকে মানুষের স্রোত নামে শহীদ মিনারের দিকে। সাধারণ মানুষের পাশাপাশি বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন, প্রতিষ্ঠান একে একে শহীদবেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে। শ্রদ্ধা জানাতে এসেছিলেন বিদেশি নাগরিকরাও।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মসূচির অংশ হিসেবে ভোর সাড়ে ৬টায় উপাচার্যের নেতৃত্বে একটি প্রভাতফেরি অপরাজেয় বাংলার পাদদেশ থেকে শুরু হয়। প্রভাতফেরিসহকারে তারা আজিমপুর কবরস্থানে পু®পস্তবক অর্পণ ও ফাতিহা পাঠ শেষে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গমন করেন এবং পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। ফুলে ফুলে ছেয়ে যায় শহীদ মিনারের বেদি।

বিএনপির পক্ষে সংগঠনের স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেনের নেতৃত্বে শ্রদ্ধা জানান দলটির নেতারা। এ ছাড়া কারিগরি শিক্ষা অধিদফতর, বাংলাদেশ কংগ্রেস, জাতীয় প্রেস ক্লাব কর্মচারী ইউনিয়ন, বাংলাদেশ পিডব্লিউডি ডিপ্লোমা প্রকৌশলী সমিতি, বাংলাদেশ ইনফ্রাস্ট্রাকচার ফাইন্যান্স ফান্ড লিমিটেড, প্রগতিশীল জাতীয়তাবাদী দল, চট্টগ্রাম সমিতি ঢাকা, বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন, বাংলাদেশ বার কাউন্সিল, বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনসহ বেশ কয়েকটি সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায়।

দিবসটি উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংগীত বিভাগের উদ্যোগে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র মিলনায়তনে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়।

এ ছাড়া আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে রাজধানীর স্কুল-কলেজ ও পাড়া-মহল্লায়ও ছিল নানান আয়োজন। অস্থায়ী শহীদ মিনার তৈরি করে ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন সবাই। এ শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় বেঁচে থাকবে আমাদের প্রিয় মাতৃভাষা এমনটাই প্রত্যাশা সবার। এসব আয়োজনে শিশুদের উপস্থিতিও ছিল চোখে পড়ার মতো।

 

সর্বশেষ খবর