বৃহস্পতিবার, ২ মার্চ, ২০২৩ ০০:০০ টা
নাউরুতে দুঃসহ জীবন

মুখ সেলাই করে দুই বাংলাদেশির প্রতিবাদ

প্রতিদিন ডেস্ক

দক্ষিণ-পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরে অবস্থিত ছোট্ট দ্বীপরাষ্ট্র নাউরুতে প্রায় এক দশক ধরে মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম ও মোহাম্মদ কাইয়ুম নামে বাংলাদেশি দুই শরণার্থীকে আটকে রাখা হয়েছে। তাদের এভাবে দীর্ঘদিন আটকে রাখার প্রতিবাদে তারা নিজেদের মুখ সেলাই করে নিয়েছেন। আলজাজিরা। অস্ট্রেলিয়ায় অবৈধভাবে নৌকায় গিয়ে যারা শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় চান, তাদের আটক করে এ নাউরু দ্বীপে পাঠিয়ে দেয় অস্ট্রেলিয়া। ২০১৩ সাল থেকে এ দ্বীপটিকে শরণার্থীদের আটক রাখার স্থান হিসেবে ব্যবহার করছে অস্ট্রেলিয়া। নাউরু ছাড়াও পাপুয়া নিউগিনির (পিএনজি) দ্বীপে কোনো কোনো শরণার্থীকে পাঠিয়ে দেয় কর্তৃপক্ষ। এ সময় তাদের শুধু জানিয়ে দেওয়া হয়, তাদের কখনই অস্ট্রেলিয়ায় বসবাসের অনুমতি দেওয়া হবে না।

অস্ট্রেলিয়ার কঠোর এ অভিবাসন নীতি দেশটির শরণার্থী ও আশ্রয়প্রার্থীদের ওপর চরম প্রভাব ফেলেছে। নাউরু ও পাপুয়া নিউগিনিতে এ রকম ১৫০ জনের বেশি শরণার্থী রয়েছেন। তারা জানেন না, কখন তাদের পুনর্বাসন করা হবে, নাকি আদৌ করা হবে না। শফিকুল ও কাইয়ুমকে এভাবেই প্রায় ১০ বছর আটক রাখা হয়েছে। তারা নাউরুর শরণার্থী পরিষেবা ও নিরাপত্তার জন্য তৈরি প্রশাসনিক কেন্দ্রের (আরপিসি-১) বাইরে বিক্ষোভ করছেন। সেখান থেকে হোয়াটসঅ্যাপে শফিকুল তাদের বিক্ষোভের বিষয়ে আলজাজিরাকে বার্তা দেন।

শফিকুল বলেন, ‘আমরা অনশন শুরু করেছি। আমরা মুখ সেলাই করে নিয়েছি। খাওয়াদাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে। আমরা কথা বলতে পারি না। আমরা আমাদের চিকিৎসা এবং স্বাধীনতা না পাওয়া পর্যন্ত খাবার ও পানি স্পর্শ করব না।’ ২০১৩ সালে আলাদাভাবে শফিকুল ও কাইয়ুম বাংলাদেশ থেকে অস্ট্রেলিয়ায় যান। নিপীড়ন থেকে রক্ষা পেতে তারা অস্ট্রেলিয়ায় আশ্রয় চান। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার নৌবাহিনী তাদের নৌকা থেকে আটক করে নাউরুতে পাঠিয়ে দেয়। ২০১৫ সাল থেকে নাউরুতে উদ্বাস্তু ও আশ্রয়প্রার্থীদের আটকে রাখা হয়েছে। শফিকুল বলেন, ‘পরিস্থিতি নিরাপদ নয়। নাউরুতে শরণার্থী এসব মানুষের সঙ্গে পশুর মতো আচরণ করা হয়। এখানকার চিকিৎসাব্যবস্থা খুব খারাপ। আমরা এখানে নিরাপদ নই। তারা শরণার্থী পছন্দ করে না। তারা আমাদের ঘৃণা করে।’

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল নাউরুকে ‘উন্মুক্ত কারাগার’ হিসেবে বর্ণনা করেছে। সেখানে বন্দিদের নিপীড়ন ও অবহেলা করা হয়। উদ্বাস্তুদের ওপর হামলা হয় বা তাদের দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতার চিকিৎসার জন্য কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। এখানকার বন্দিদের মানসিক চিকিৎসার কোনো ব্যবস্থা নেই।

নাউরুতে আটক শরণার্থী শিশুদের মধ্যে নিজের ক্ষতি, আত্মহত্যাসহ নানান আচরণের প্রবণতা দেখা যায়। এ দেশে বন্দি ২০০ শিশুর মধ্যে মাত্র চারজনকে ২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রে পুনর্বাসিত করা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর