শনিবার, ৪ মার্চ, ২০২৩ ০০:০০ টা

হজ নিবন্ধনে সাড়া নেই

♦ অস্বাভাবিক বেড়েছে খরচ ♦ দ্বিতীয় দফা বাড়ল নিবন্ধনের সময়

শফিকুল ইসলাম সোহাগ

এ বছর পবিত্র হজ পালনের জন্য নিবন্ধনে খুব একটা সাড়া নেই। বাংলাদেশ থেকে হজে যাওয়ার খরচ অস্বাভাবিক বৃদ্ধির কারণেই নিবন্ধনে সাড়া মিলছে না বলে বলছেন সংশ্লিষ্টরা। খরচ বাড়ায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছেন হজে গমনেচ্ছুরা। এ বছর বাংলাদেশ থেকে ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজে যেতে পারবেন। গত ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে নিবন্ধন শুরু হয়। নিবন্ধনের শেষ সময় নির্ধারণ করা হয়েছিল ২৩ ফেব্রুয়ারি। কিন্তু ২২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মাত্র ৯ হাজার ৩৫২ জন হজের জন্য নিজেদের নাম নিবন্ধন করেন। নিবন্ধনের সাড়া না পাওয়ায় ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রথম দফা সময় বাড়ানো হয়েছিল। ২৮ ফেব্রয়ারি পর্যন্ত ২২ হাজার ৪৬৪ জন নিবন্ধিত হয়েছেন। দ্বিতীয় দফায় ৭ মার্চ পর্যন্ত নিবন্ধনের সময় বাড়ানো হয়েছে। 

এদিকে প্যাকেজের খরচ না কমালে এ বছর পূর্ণ কোটায় হজযাত্রী পাঠানো নিয়ে শঙ্কায় হজ এজেন্সিগুলো। তারা বলছে, এক লাফে বিপুল অঙ্কের খরচ বাড়াটা স্বাভাবিক ঘটনা নয়। ধর্ম মন্ত্রণালয়

হজযাত্রীদের স্বার্থ সঠিকভাবে রক্ষা করছে কি না সেই প্রশ্ন তুলে এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ দাবি করছে এজেন্সিগুলো।

ধর্ম মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজে যাওয়ার জন্য ৭ হাজার ৭৩ জন এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ১৫ হাজার ৩৯১ জন নিবন্ধিত হয়েছেন। এর বিপরীতে প্রাক-নিবন্ধিত রয়েছেন সরকারি  ব্যবস্থাপনায় ৮ হাজার ৬৩৩ জন এবং বেসরকারিভাবে ২ লাখ ৪৫ হাজার ৬৬৭ জন। জিলহজ মাসের চাঁদ দেখা সাপেক্ষে চলতি বছরের ২৭ জুন (৯ জিলহজ) পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হবে। সৌদি আরবের সঙ্গে হজচুক্তি অনুযায়ী, এবার বাংলাদেশ থেকে ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজ করতে পারবেন। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ১৫ হাজার ও অবশিষ্ট ১ লাখ ১২ হাজার ১৯৮ জন বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ করার সুযোগ পাবেন। গত ১ ফেব্রুয়ারি হজ প্যাকেজ ঘোষণা করে ধর্ম মন্ত্রণালয়। সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ প্যাকেজের মূল্য নির্ধারণ করা হয় ৬ লাখ ৮৩ হাজার ১৮ টাকা। ২ ফেব্রুয়ারি সরকারি প্যাকেজ থেকে ১০ হাজার টাকা কমিয়ে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় প্যাকেজ ঘোষণা করে হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব)। হাব নির্ধারিত হজ প্যাকেজের সর্বনিম্ন প্যাকেজ ৬ লাখ ৭২ হাজার ৬১৮ টাকা। এর মধ্যে বিমান ভাড়াই ১ লাখ ৯৭ হাজার ৭৯৭ টাকা, যা গত বছর ছিল ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা।

হজ এজেন্সি মালিক ও ট্রাভেল এজেন্টরা জানিয়েছেন, প্রতি বছর যাত্রীদের খরচের বড় একটি অংশ যায় বিমানের টিকিটে। বিমান ভাড়া বাড়লেই হজ প্যাকেজের খরচ বাড়ে। হজ যাত্রীদের ভাড়া নির্ধারণ করা হয় রাষ্ট্রায়ত্ত বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের প্রস্তাবিত ভাড়ার ভিত্তিতে। তারা মনে করছেন, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস অতিরিক্ত মুনাফা ধরে প্রতি বছর হজযাত্রীদের ভাড়া প্রস্তাব করে। তাই বিমান ভাড়া যৌক্তিক পর্যায়ে রাখতে স্বতন্ত্র টেকনিক্যাল কমিটি গঠনের প্রস্তাব করে হজ এজেন্সি মালিকরা। সূত্রমতে, হজের প্যাকেজ মূল্য প্রতি বছর যেসব কারণে বাড়ছে তার অন্যতম কারণ বিমান ভাড়া। বিমান ভাড়া বৃদ্ধির কারণে হজ প্যাকেজের মূল্য বাড়ছে। ২০১৭ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ছয় বছরে হজযাত্রীদের নির্ধারিত বিমান ভাড়া ক্রমাগতভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২৩ সালে নির্ধারিত বিমান ভাড়া পূর্বের তুলনায় প্রায় ৩০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। ২০১৭ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত বিমান ভাড়াই বেড়েছে ৭৯ হাজার ২৬৩ টাকা। আর গত বছরের তুলনায় চলতি বছর বেড়েছে ৫৮ হাজার টাকা। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের হিসাব মতে ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে হজের প্যাকেজের মূল্য বেড়েছে ৩ লাখ ৩৮ হাজার ১৫ টাকা। ২০১৯ সালে যেখানে প্যাকেজ মূল্য ছিল ৩ লাখ ৪৫ হাজার আর ৪ বছরের মাথায় ২০২৩ সালে সেটি হয়েছে ৬ লাখ ৮৩ হাজার ১৫ টাকা। এর আগে ২০১৫ সালে হজের সর্বনিম্ন খরচ ছিল ২ লাখ ৯৬ হাজার ২০৬ টাকা। ২০১৬ সালে সেটি বেড়ে হয় ৩ লাখ ৪ হাজার টাকা। ২০১৭ সালে সর্বনিম্ন প্যাকেজ ছিল ৩ লাখ ১৯ হাজার টাকা। ২০১৮ সালে ৩ লাখ ৩১ হাজার টাকা। জানা যায়, সরকারি-বেসরকারি উভয় প্যাকেজেই বিগত বছরের চেয়ে খরচ বেড়েছে প্রায় দেড় লাখ টাকা। ২০২২ সালে হজের সর্বনিম্ন প্যাকেজ ছিল ৫ লাখ ২২ হাজার ৭৪৪ টাকা। গ্লোবাল ভিশন ট্রাভেলসের ম্যানেজিং পার্টনার হাফেজ মাহমুদুল আনোয়ার জানান, যেভাবে খরচ বেড়েছে তাতে অনেকের পক্ষেই পবিত্র হজ পালন সম্ভব হবে না। খরচ কমানো উচিত। হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম বলেন, খরচ কমানোর বিষয়টি নিয়ে আমরাও সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করছি। এদিকে হজের বিমান ভাড়া কমিয়ে পুনর্নির্ধারণ করতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানায় অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ (আটাব)। গত ১৪ ফেব্রুয়ারি আটাব বিমান ভাড়াসহ প্যাকেজ মূল্য পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে লিখিত আবেদন করে। এক প্রশ্নের জবাবে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মতিউল ইসলাম বলেন, জাহাজে করে বাংলাদেশ থেকে হজযাত্রার বিষয়ে যে আলোচনা নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে হচ্ছে, তা খুবই প্রাথমিক স্তরে রয়েছে। চলতি বছর এটা সম্ভব নয়।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর