শুক্রবার, ১৭ মার্চ, ২০২৩ ০০:০০ টা

লাগামহীন ছাত্র রাজনীতি

♦ নাজুক অবস্থা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে, লাগাম টানা হচ্ছে বেসরকারিতে ♦ অরাজকতা বন্ধে নির্দেশনা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ♦ সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে চিঠি ইউজিসির

আকতারুজ্জামান

লাগামহীন ছাত্র রাজনীতি

দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় ছাত্র রাজনীতির নামে ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের লাগামহীন কর্মকাণ্ড যেন থামছেই না। আসন বাণিজ্য, চাঁদাবাজি, র‌্যাগিং, যৌন নিপীড়ন, অভ্যন্তরীণ কোন্দল, বিরোধী পক্ষের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ানো ছাড়াও প্রায় প্রতিনিয়তই কোনো না কোনো বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়াচ্ছেন এই ছাত্র সংগঠনের নেতা-কর্মীরা।

অনেক ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের কাছে ‘ত্রাস’ হয়ে দাঁড়িয়েছেন ছাত্রলীগের ব্যানারে থাকা কিছু নেতা-কর্মী। প্রশাসনের নাকের ডগায় এসব কর্মকাণ্ড চললেও প্রায় বেশির ভাগ ক্ষেত্রে না দেখার ভান করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বেশ কয়েকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে নাজুক পরিস্থিতি বিরাজ করছে এই ছাত্র সংগঠনের বিতর্কিত কিছু কর্মকাণ্ডে। অভিযোগ রয়েছে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে তেমন কোনো ব্যবস্থাই নিতে দেখা যায় না প্রশাসনকে। তবে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রাজনীতি নিয়ে সরব হয়ে উঠেছে সরকার। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতির লাগাম টানা হচ্ছে। ছাত্র রাজনীতির নামে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে যেন অরাজকতা না হয় সে ব্যাপারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কোর কমিটি সভার ‘রেকর্ড অব ডিসকাশন্স’ অনুযায়ী নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে এ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয়। স্বরাষ্ট্র ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সূত্র ধরে সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে এ নির্দেশনা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। অথচ প্রায় অর্ধশত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে দুটি প্রধান ছাত্র সংগঠনের (বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ও জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল) কমিটি থাকলেও সেগুলোয় এখনো বড় কোনো অরাজক পরিস্থিতির অভিযোগ পাওয়া যায়নি। বিপরীতে ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের নানান বিব্রতকর কর্মকাণ্ডের কারণে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সম্প্রতি অস্থির হয়ে উঠছে। কিন্তু পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতির নামে অরাজকতা চললেও এ ব্যাপারে সরকারের নির্দেশনা না থাকায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন শিক্ষাসংশ্লিষ্টরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, পাবলিক আর প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়কে আলাদা করে দেখার সুযোগ নেই। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থায়ন করে সরকার আর প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত হয় ট্রাস্টের মাধ্যমে। এ ছাড়া কোনো পার্থক্য থাকা উচিত নয়। একই অপরাধে সব বিশ্ববিদ্যালয়ে একই ব্যবস্থা থাকতে হবে।

জানা গেছে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কোর কমিটির বৈঠকের সূত্র ধরে শিক্ষা মন্ত্রণালয় চিঠি পাঠিয়েছে ইউজিসিতে। চিঠিতে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় যেন ছাত্র রাজনীতির নামে কোনো অরাজকতা না হয় সে বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন ও নিয়মিত মনিটরিং করতে বলা হয় ইউজিসিকে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এমন নির্দেশনা দেশের সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠিয়েছে ইউজিসি।

নির্দেশনায় বলা হয় : স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কোর কমিটির ‘রেকর্ড অব ডিসকাশন্স’ অনুযায়ী বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় যেন ছাত্র রাজনীতির নামে অরাজকতা না হয় সে বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন ও নিয়মিত মনিটরিং করার অনুরোধ করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি হলে বা হওয়ার আশঙ্কা থাকলে তাৎক্ষণিকভাবে তা স্থানীয় প্রশাসন, গোয়েন্দা সংস্থা, সরকার ও কমিশনকে অবহিত করতে বলা হয় ইউজিসির চিঠিতে। সম্প্রতি দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে দেখা গেছে, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে র‌্যাগিংয়ের নামে এক নবীন ছাত্রীকে যৌন নিপীড়ন ও নগ্ন করে ভিডিও ধারণ করেছেন ছাত্রলীগের এক নেত্রী। এ ছাড়া একটি হলের প্রভোস্টকে লাঞ্ছিত ও প্রভোস্ট কার্যালয় ভাঙচুরও করেছে বিশ্ববিদ্যালয়টির ছাত্রলীগ। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের সভাপতির বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি মামলা হয়েছে সম্প্রতি। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশাসনিক পদগুলো থেকে জামায়াত-বিএনপিপন্থিদের অপসারণ দাবিতে প্রশাসনিক ভবন ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অফিসে তালা দিয়েছে ছাত্রলীগ। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্প্রতি ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন। সব মিলে চলতি মাসেই অন্তত ১০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিব্রতকর কর্মকাণ্ডে বিভিন্ন খবরের শিরোনাম হয়েছে সরকারদলীয় এই ছাত্র সংগঠন। অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা কার্যক্রম চলমান রাখার স্বার্থে কোনো অরাজকতা কাম্য নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনীতি থাকবে, কিন্তু রাজনীতির নামে কাউকে অপরাজনীতি, অরাজকতা, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করতে দেওয়া যাবে না। বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা রাজনীতি করেন তাদের বড় পরিচয় তারা শিক্ষার্থী। তাই শিক্ষার্থীসুলভ আচরণ না করলে নিরপেক্ষভাবে ও দৃঢ়ভাবে তাদের বিরুদ্ধে আইন প্রয়োগ করতে হবে, তা হলেই সব অরাজকতা বন্ধ করা যাবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর