বুধবার, ২২ মার্চ, ২০২৩ ০০:০০ টা

নিরস্ত্র জাতি সশস্ত্র হয়ে উঠল

হাসানুল হক ইনু

নিরস্ত্র জাতি সশস্ত্র হয়ে উঠল

মার্চ, ১৯৭১। বাংলাদেশের ইতিহাসে ঐতিহাসিক ঘটনাবলি ও রাজনৈতিক পদক্ষেপের মাস। এ মার্চেই বাংলাদেশ পতাকা পায়, জাতীয় সংগীত পায় এবং বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ও কর্তৃত্বে স্বশাসিত বাংলাদেশ পায়। পাকিস্তানের মাটিতে দাঁড়িয়ে লুটেরা পাকিস্তানকে অস্বীকার করে বাংলার দামাল ছেলেরা। পাকিস্তানের প্রজাতন্ত্র দিবসে সব অফিস-আদালতে ওড়ানো হয় লাল সবুজ আর হলদে মানচিত্র খচিত স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা।

নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ নামের স্বাধীন ভূখণ্ডের জন্মের পেছনে মার্চ অত্যন্ত গুরুত্ববহ ও ঘটনাবহুল মাস। ১৯৭১ সালের ২ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বটতলায় স্বাধীন বাংলার পতাকা প্রদর্শন, ৩ মার্চ পল্টন ময়দানে স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠ, ৭ মার্চ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণ, রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ও দিকনির্দেশনা প্রদান, ২৩ মার্চ পাকিস্তানের প্রজাতন্ত্র দিবসে সারা বাংলাদেশে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন- সব মিলিয়ে মার্চ মাসটা স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠাকে অনিবার্য করে তোলে। এ মাসের ২৬ তারিখ বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার মধ্য দিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা লাভ করে। বাংলাদেশের কর্তৃত্বভার গ্রহণ করেন বঙ্গবন্ধু নিজে। মাসটি নিরস্ত্র বাঙালি জাতিকে সশস্ত্র হতে উদ্দীপ্ত করে। এদিকে মার্চ মাস নাগাদ যারা দোদুল্যমান, নীরব, নিষ্ক্রিয় ছিলেন এ মাসে এসে তারাও বঙ্গবন্ধুর স্বশাসিত বাংলাদেশের পক্ষে সমর্থন জ্ঞাপন করেন। ৯ মার্চ জনসভার মধ্য দিয়ে মওলানা ভাসানী, অধ্যাপক মোজাফফর আহমেদের নেতৃত্বে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি, মণি সিংয়ের নেতৃত্বে কমিউনিস্ট পার্টি- সবাই বঙ্গবন্ধুকে সমর্থন দিয়ে বাংলাদেশের পক্ষে অবস্থান নেয়। তৎকালীন রাজনৈতিক অঙ্গনে কেবল মুসলিম লীগ ও পাকিস্তানের হাতে গোনা দালাল ছাড়া সব রাজনৈতিক দল ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের পর বঙ্গবন্ধুর কর্তৃত্বে ও নেতৃত্বে স্বশাসিত বাংলাদেশের পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করে। আমি তখন বুয়েটে পড়াশোনা শেষ করেছি। ’৬২ সাল থেকে স্বাধীন বাংলা প্রতিষ্ঠার জন্য যে নিউক্লিয়াস কাজ করছিল, সেই নিউক্লিয়াসের একজন সদস্য হিসেবে কাজ করছিলাম আমিও। আমি সহযোদ্ধাদের সঙ্গে নিয়ে ঢাকায় অস্ত্র, গোলাবারুদ সংগ্রহের কাজে লিপ্ত ছিলাম। সশস্ত্র সংগ্রামের প্রস্তুতির কাজ করছিলাম। ১৯৭১ সালের জানুয়ারিতেই সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে ঢাকার সায়েন্স ল্যাবরেটরি লুটের নেতৃত্ব দিই। মার্চজুড়ে আমরা আমাদের উদ্ভাবিত গ্রেনেডের পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাই। পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে গ্রেনেড উৎপাদনের একটা প্রকল্প হাতে নিই। আমাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতেন প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা বিশিষ্ট সাংবাদিক মাসুদ আহমেদ রুমী, বাসদ নেতা মাহবুবুল হকসহ আরও অনেকে। ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানিরা আক্রমণ চালাল স্বাধীন বাংলাদেশ দখল করার জন্য। তখনই বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা এলো। একটা নিরস্ত্র জাতি ঢুকে পড়ল সশস্ত্র প্রতিরোধ যুদ্ধে। আমি প্রশিক্ষণ নিতে ভারত যাই। ভারতের তান্দুয়ায় বাংলাদেশ লিবারেশন ফ্রন্ট বা বিএলএফ বা মুজিব বাহিনীর সামরিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ক্যাম্প ইনচার্জের দায়িত্ব আসে আমার ওপর। ১০ হাজার গেরিলা মুক্তিযোদ্ধাকে প্রশিক্ষণে নেতৃত্ব দিই।

লেখক : জাসদ সভাপতি

সর্বশেষ খবর