ঈদের পর গণভবনে ডাক পাচ্ছেন জেলা আওয়ামী লীগের নেতারা। এ সময় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে তৃণমূল নেতাদের নির্বাচনী নির্দেশনা দেবেন দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গণভবনে বিভাগভিত্তিক এই বৈঠক হতে পারে। সে ধরনের প্রস্তুতিই চলছে। দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা নিয়ে তৃণমূল নেতারা নতুন উদ্যমে কাজ করবেন বলে আশা করছেন নীতিনির্ধারকরা।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়–য়া বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘ঈদের পর জেলা নেতাদের গণভবনে ডাকা হতে পারে। ধারণা করছি, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের করণীয় কী সেসব বিষয় দিকনির্দেশনা দেবেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা।’
জানা গেছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের এখনো নয় মাস বাকি। এই নির্বাচনকে সামনে রেখে তৃণমূলে দলীয় কোন্দল নিরসন, ঐক্যের জোর দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সে কারণে তিনি তৃণমূল পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করছেন। গত বৃহস্পতিবার গণভবনে ঢাকায় আট সাংগঠনিক জেলা নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী। সেখানে জেলা নেতাদের কথা শোনার পাশাপাশি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নির্বাচনী গাইড লাইন দেন। সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার নির্দেশ দেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগ ও গণভবন সূত্র জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার গণভবনে ডাক পাওয়া জেলা নেতারা দীর্ঘদিন ধরে দলীয় সভানেত্রীর সাক্ষাৎ চেয়ে আসছিলেন। সে কারণেই তাদের সময় দিয়েছিলেন দলীয় সভানেত্রী। ঈদের পর ধারাবাহিকভাবে জেলা নেতাদের ডাকবেন তিনি। বিভাগভিত্তিক ডাকার পরিকল্পনা রয়েছে। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এই নির্বাচনকে ঘিরে নানামুখী ষড়যন্ত্র চলছে। এই ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে তৃণমূল নেতা-কর্মীদের করণীয় কী সেসব বিষয়ে দলীয় সভানেত্রী নিজেই নির্দেশনা দেবেন।’ তিনি বলেন, ‘সরকার পরিচালনা এবং উন্নয়ন কর্মকান্ডের প্রচারে দলের নেতা-কর্মীদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। জনগণের সমস্যা সমাধানেও ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীদের কাজ করতে হয়। জেলা নেতাদের ডেকে এসব বিষয়ে নির্দেশনা দেবেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী।’ সারা দেশে আওয়ামী লীগের ৭৮টি সাংগঠনিক জেলা রয়েছে। দেশের আট বিভাগ আট দিন অথবা দুটি করে বিভাগ ডাকা হতে পারে। এখনো সে বিষয়ে পুরোপুরি চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। তবে দলটির নেতারা বলছেন, এবার প্রতিটি বিভাগের জন্য একদিন সময় রাখা হবে। কারণ এতে করে প্রতিটি জেলার নেতারা বক্তৃতা করার সুযোগ পাবেন। ওই সব সভায় আওয়ামী লীগ সভানেত্রী তৃণমূলের নেতাদের ক্ষোভ, বেদনার কথা শুনবেন। কভিড মহামারির কারণে দুই বছরের বেশি সময় ধরে দলের তৃণমূলের নেতারা সরাসরি আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর তেমন সাক্ষাৎ পাননি। কভিড কমে আসায় এখন নেতা-কর্মীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করছেন। আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন বলেন, আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাংগঠনিক খোঁজখবর নিচ্ছেন। তার অংশ হিসেবে জেলা নেতাদের গণভবনে ডাকবেন।’ তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশে উন্নয়ন-অগ্রযাত্রা বিশ্ব গণমাধ্যমে প্রশংসিত হচ্ছে। বঙ্গবন্ধুকন্যার নেতৃত্বে যখন দেশের মানুষ ঐক্যবদ্ধ, তখন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নানামুখী ষড়যন্ত্রও চলছে। সেই চক্রান্ত ষড়যন্ত্র কীভাবে মোকাবিলা করা হবে সে দিকনির্দেশনা দেবেন দলীয় সভানেত্রী।’ আওয়ামী লীগের সূত্রগুলো জানায়, দলকে নির্বাচনমুখী করতেই জেলা নেতাদের গণভবনে ডাকা হচ্ছে। টানা তিন মেয়াদে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকায় তৃণমূলের নেতাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব-বিরোধ বেড়েছে। আগামী জাতীয় নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হলে সেখানে জয় পেতে দলীয় ঐক্য জরুরি। সে জন্য আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা চাইছেন তৃণমূলের নেতাদের ডেকে গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দিতে। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল বলেন, ‘সাংগঠনিক কাজের অংশ হিসেবেই দলীয় সভানেত্রী গণভবনে জেলা নেতাদের ডাকছেন। তিনি জেলা নেতাদের কথা শুনছেন, দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন। অনেক জেলায় পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি, সেগুলোতে পূর্ণাঙ্গ করা এবং কোন্দল মিটিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে নৌকার বিজয় নিশ্চিত করাই থাকবে দলীয় সভানেত্রীর দিকনির্দেশনা।’ আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র জানায়, সর্বশেষ ২০১৮ সালের ২৩ জুন গণভবনে আওয়ামী লীগের একটি বিশেষ বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেই সভায় দেশের সব জেলা, মহানগর কমিটির ১০ থেকে ১৫ জন করে নেতাকে অংশ নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়। ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে এ সভা আয়োজন করা হয়েছিল। সেই সভায় তৃণমূলের নেতারা জনবিচ্ছিন্ন সংসদ সদস্যদের মনোনয়ন না দিতে শেখ হাসিনার কাছে অনুরোধ জানিয়েছিলেন। গত চার বছরের বেশি সময় ধরে জেলা ও মহানগরের নেতাদের সঙ্গে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের কোনো সভা অনুষ্ঠিত হয়নি। ফলে এবারের সভাটি তৃণমূল আওয়ামী লীগের নেতাদের মধ্যে বিশেষ সাড়া ফেলবে বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম বলেন, ‘জেলা নেতাদের কেন্দ্রে ডেকে আনা মানেই তৃণমূলে সংগঠনকে গুছিয়ে আনা। আগামী নির্বাচনকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়ে দলের তৃণমূলে নিজেদের মধ্যে যে বিভেদ, মতানৈক্য আছে, তা দূর করে কাজ করার নির্দেশনা থাকবে দলীয় সভানেত্রীর কাছ থেকে। এর মধ্য দিয়ে তৃণমূলের নেতাদের মধ্যে বিশেষ উদ্দীপনা আসবে বলে মনে করি।’