সোমবার, ১০ এপ্রিল, ২০২৩ ০০:০০ টা

গ্রহণযোগ্য প্রার্থীর খোঁজে সরকারি দল

প্রথম দিন মনোনয়নপত্র নিলেন ১৭ জন

রফিকুল ইসলাম রনি

গ্রহণযোগ্য প্রার্থীর খোঁজে সরকারি দল

দলীয়ভাবে বিএনপি অংশ না নিলেও জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছে আওয়ামী লীগ। সে কারণে দলের ভিতরে এবং সিটির ভোটারদের মধ্যে ইতিবাচক ভাবমূর্তিসম্পন্ন প্রার্থী খুঁজছে দলটি। আগামী ২৫ মে গাজীপুর, ১২ জুন খুলনা ও বরিশাল এবং ২১ জুন রাজশাহী ও সিলেট সিটি করপোরেশনের ভোট গ্রহণ হবে। এসব সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জনপ্রিয়, স্বচ্ছ ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন প্রার্থীর হাতে নৌকা প্রতীক তুলে দিতে চায় আওয়ামী লীগ। দলীয় উচ্চপর্যায়ের একাধিক নেতার  সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা যায়। গতকাল থেকে পাঁচ সিটিতে দলীয় মনোনয়নপত্র বিক্রি শুরু করেছে আওয়ামী লীগ। প্রথম দিনে ১৭ মনোনয়নপ্রত্যাশী আওয়ামী লীগের দলীয় ফরম কিনেছেন। এর মধ্যে গাজীপুরে সাতজন, সিলেটে পাঁচজন, বরিশালে চারজন এবং খুলনায় একজন দলীয় ফরম সংগ্রহ করেন। তবে রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রথম দিনে কেউ মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেননি। আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর ধানমন্ডি কার্যালয় থেকে গতকাল শুরু হওয়া মনোনয়নপত্র বিতরণ ১২ এপ্রিল শেষ হবে।

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা বলছেন, পাঁচ সিটিতে মেয়র পদে জনপ্রিয় ও স্বচ্ছ ভাবমূর্তি সম্পন্ন প্রার্থী খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে। তারা বলেন, সিটি করপোরেশন নির্বাচনে যেন ভোটারদের মধ্যে উৎসাহ ও আস্থা তৈরি হয় এমন প্রার্থী বেছে নেওয়া হবে। তবে দলের একটি সূত্র জানিয়েছে, রাজশাহী, বরিশাল ও খুলনা সিটিতে প্রার্থী পরিবর্তন না হওয়ার জোর সম্ভাবনা রয়েছে। গাজীপুর ও সিলেট সিটি নির্বাচনে প্রার্থী নিয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। সিলেটে গতবার দলীয় মনোনয়ন পেয়েছিলেন বদরউদ্দিন আহমেদ কামরান। স্বাভাবিকভাবেই এবার নতুন মুখ আসবে। সে হিসেবে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। গাজীপুর সিটিতে যে কয়েকটি নাম নিয়ে আলোচনা হচ্ছে তাদের মধ্যে শীর্ষে রয়েছেন, গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট আজমত উল্লাহ খান, সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বরখাস্ত হওয়া মেয়র মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম, গাজীপুর মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক কামরুল আহসান সরকার রাসেল ও ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান কিরণ। গতকাল দুপুরে গণভবনে গিয়ে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন রাজশাহী সিটি মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন। দুপুর ২টার দিকে তিনি গণভবন থেকে বের হয়ে আসেন। এরপর তিনি মেয়র পদে নির্বাচন করবেন বলে রাজশাহীর নেতাদের জানান। নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের ওই নেতা জানান, রাসিকের মেয়র পদে কে নির্বাচন করবেন তা নিয়ে আলোচনার জন্য দলীয় প্রধানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন খায়রুজ্জামান লিটন। সেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খায়রুজ্জামান লিটনকে আবারও মেয়র পদে নির্বাচন করতে বলেছেন। আর তাই তিনি এবারও রাসিকে মেয়র পদে নির্বাচন করছেন। আজ সোমবার তিনি দলীয় মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করবেন এবং আগামীকাল মঙ্গলবার জমা দেবেন। এরপর রাজশাহী ফিরে নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করবেন।

খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বর্তমান মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। তার পক্ষে ফরম কিনেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘খুলনা সিটির বর্তমান মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রবীণ নেতা আবদুল খালেকের পক্ষে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছি। উনি মনোনয়ন পেলে দলের সব পর্যায়ের নেতারা ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবেন। আবার যদি মনোনয়ন না-ও পান তাহলে যাকেই নৌকা দেওয়া হবে প্রবীণ রাজনীতিবিদ আবদুল খালেক তার পক্ষেই মাঠে থাকবেন।’

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য লে. কর্নেল (অব.) মুহম্মদ ফারুক খান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘মেয়র কিংবা এমপি পদে আওয়ামী লীগে একাধিক যোগ্য প্রার্থী আছেন। এবার যেসব সিটিতে ভোট হচ্ছে প্রায় প্রতিটিতেই ৭ থেকে ১০ জন যোগ্য প্রার্থী আছেন। কিন্তু আমাদের একজনকে বেছে নিতে হবে। এ জন্য মেয়র পদে দায়িত্ব পালনে সক্ষম, এলাকায় জনপ্রিয়তা আছে, সংশ্লিষ্ট এলাকায় দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো, কোনো অনিয়মের সঙ্গে জড়িত নন- এমন ব্যক্তির হাতেই নৌকা তুলে দেওয়া হবে। দলীয় সভানেত্রী এবং মনোনয়ন বোর্ড এগুলো চূড়ান্ত বিশ্লেষণ করেই মনোনয়ন দিয়ে থাকে।’

জানা গেছে, গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের জন্য আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন ফরম সাতজন সংগ্রহ করেছেন। তারা হলেন- গাজীপুরের ভারপ্রাপ্ত মেয়র ও গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি আসাদুর রহমান কিরণ, গাজীপুর মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক কামরুল আহসান সরকার রাসেল, গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান, ২৬ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সদস্য মেজবাহ উদ্দিন সরকার রুবেল, গাজীপুর মহানগর যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম, গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী ইলিয়াস আহম্মেদ, আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক উপকমিটির সাবেক সদস্য আবদুল্লাহ আল মামুন। আগামীকাল মঙ্গলবার মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করবেন বরখাস্ত হওয়া মেয়র মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মঙ্গলবার দলীয় মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করব। আমার একমাত্র অভিভাবক বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। মাঠের তথ্য অনুযায়ী নেত্রী আমাকেই নৌকা দেবেন বলে আশা করি।

আরেক প্রার্থী গাজীপুর মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক কামরুল আহসান সরকার রাসেল বলেন, ‘স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে হলে স্মার্ট নাগরিক ও স্মার্ট সিটি প্রয়োজন। সেই সিটি হবে পরিচ্ছন্ন-দুর্নীতিমুক্ত। দল আমাকে নৌকা দিলে এবং আমি নির্বাচিত হলে জনগণের সেবক হিসেবে কাজ করব।’

বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বরিশাল মহানগর যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মাহমুদুল হক খান মামুন, আওয়ামী যুবলীগের সদস্য আবুল খায়ের আবদুল্লাহ, মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি জসিম উদ্দিন এবং বরিশাল মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মিজানুর রহমান দলীয় মনোনয়নের আবেদন ফরম কিনেছেন। সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন ফরম কিনেছেন সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন, সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আরমান আহমদ শিপলু, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আসাদ উদ্দিন আহমদ এবং সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আজাদুর রহমান আজাদ। সিলেট সিটি নির্বাচনে নৌকার মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করে আলোচনার শীর্ষে থাকা প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, বঙ্গবন্ধুকন্যার ঘোষিত স্মার্ট বাংলাদেশের প্রথম স্মার্ট নগরী গড়ে তুলতে, আমার নেত্রী বাংলাদেশের সফল প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা যদি আমাকে নৌকা প্রতীকের মনোনয়ন দেন তাহলে সবার সহযোগিতায় নৌকার বিজয় উপহার দিতে পারব। আমি যদি মনোনয়ন না-ও পাই আমার দল যাকে মনোনয়ন দিবে তাঁর পক্ষে আমি কাজ করে যাব।

 

সর্বশেষ খবর